এরফান রানা :

কক্সবাজার সদর উপজেলার একটি অন্যতম ইউনিয়ন পি এম খালীর ১ ও ২ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ছনখোলা গ্রাম,যেটিকে বাঁকখালী নদী কক্সবাজার পৌরসভা থেকে আলাদা করে রেখেছে। প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাসের এই জনপদটিতে এলাকার জনসাধারনের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা পিএমখালীর সাড়াজাগানো অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান “ছনখোলা মডেল হাইস্কুল”সহ একটি দাখিলমাদ্রাসা,দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,পাঁচটি নুরানি মাদ্রাসা নিয়ে শিক্ষার মান কিছুটা উন্নত হলেও, যে বিষয়টি আমাদের জীবনযাত্রাকে রীতিমতো সংগ্রামে পরিণত করেছে, সেটি হলো এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা।

চিকিৎসা গ্রহণ ও জীবিকার সন্ধানসহ প্রায় সব প্রয়োজনে এ অঞ্চলের মানুষকে কক্সবাজার শহরে যেতে পাড়ি দিতে হয় পূর্বদিকে বাংলাবাজার হয়ে অন্তত ২০ কিলোমিটার,পশ্চিম দিকে খুরুস্কুল হয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার অথবা জীবিনের ঝুকি নিয়ে বাঁকখালী নদি পার হয়ে এসএমপাড়া-আলির জাহাল । চারদিক দিয়ে এযেন এক মরন ফাঁদ।

অথচ বর্তমানে ছনখোলা তথা পিএমখালীর মানুষের কক্সবাজার শহরে যাতায়াতের সবচেয়ে কাছের এবং সহজ মাধ্যম হচ্ছে ছনখোলা-কুলিয়া পাড়া সড়ক। খুরুশকুল কুলিয়াপাড়া থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার গেলেই ছনখোলা বাজার। কিন্তু সড়কটি পিএমখালী এবং খুরুশকুল দুই ইউনিয়নের মাঝখানে হওয়াতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কোন ভ্রুক্ষেপনেই এই রাস্তাটির প্রতি । যার কারনে পুরো সড়কই এখন খানাখন্দে ভরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যানবাহন বলতে একমাত্র সিএঞ্জিই ভরসা হলেও বর্ষার সময় তাও চলে না। এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় গাড়ি বেশকয়েকবার খাদে পড়ে অনেক মানুষ গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গর্ভবতী মা ও রোগীদের চিৎকার যেন এই রাস্তাটির একটি পরিচিত দৃশ্য ।

বর্তমান উন্নয়নমুখী সরকারের উন্নয়নের জোয়ার যেখানে গ্রামে-গঞ্জে ছেয়ে গেছে,সেখানে গত পাঁচ বছরে এই রাস্তায় উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি বললে তেমন একটা ভুল হবেনা।

বেশকিছুদিন আগে স্থানীয় জনসাধারণ কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ,পি এম খালী ইউনিয়ন পরিষদ ও খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ, বেশকিছু সদস্য নিয়ে রাস্তাটির উন্নয়নের জন্য এক সমন্বয় সভার আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু এতে অতিথিরা গ্রামের মানুষের সামনে কিছু সস্থা বুলি আওড়িয়ে চলে যান। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

জনপ্রতিনিধিরা এলাকার মানুষদের গুরুত্ব দেয়নি তাতে কি হয়েছে? ঐতিহ্যবাহি ছনখোলার মানুষতো আছে। ছোটবেলা থেকে ছনখোলার মানুষের একতার ঐতিহ্যের যে কথা শুনে আসছি,এসময়ে এসে তার আরো একবার পরিচয় পেলাম।

এলাকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা কিছুটা হলেও লাঘব করার জন্য এগিয়ে আসে কিছু উদিয়মান যুবক। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সুদক্ষ নেতৃত্বে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের সহযোগিতায় চলছে রাস্তা মেরামতের কাজ। অন্তত সিএনজি বা টমটমে করে হলেও যাতে এলাকার মানুষ নির্বিঘ্নে শহরে যাতায়াত করতে পারে সে লক্ষ্যে কেউ শ্রম দিয়ে,কেউ অর্থ দিয়ে, গ্রামের ছোট থেকে বড় সকলেই স্বেচ্ছায় অংশ নিচ্ছে এই কাজে।

কিন্তু গ্রামের মানুষের এই কাজগুলো কোন ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা প্রিন্ট মিডিয়ায় দেখবেননা। কারন এই কাজগুলো বড় কোন নেতার অর্থায়নে হচ্ছেনা। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমের এই কাজের কথা মিডিয়া বা পত্রিকায় আসলে তাদের দাম কমে যেতে পারে।

তবে এখন জনমনে প্রশ্ন জাগে এভাবে আর কতদিন? হালকা বৃষ্টি হলেই রাস্তার বালি সরে গিয়ে আগের মতই হয়ে যাবে। বন্ধ হবে স্বাভাবিক চলাচল। শুরু হবে ছনখোলার মানুষের চিরদূর্ভোগ।

অবহেলিত এলাকার এই অবস্থার স্থায়ী পরিত্রানের জন্য, বঙ্গবন্ধুকন্যা,দেশরত্ন শেখ হাসিনার উন্নয়নমুখি সরকারের কাছে, স্থানীয় জনসাধারন দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য জোর দাবি জানান এবং সেই সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ছনখোলার মানুষ জনপ্রতিনিধিদের কাছথেকে আশার বাণী শুনতে শুনতে ক্লান্ত প্রায়। তাই তারা এখন আর আশার বাণী নয়,চায় কাজের বাস্তবতায়ন। এই রাস্তাটি সম্পূর্ণ হলে কেবল শুধুমাত্র ছনখোলার মানুষ নই,বরং গোটা পিএমখালীর প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ যাতায়াতের সুবিধা পাবে।