মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তেই আছে। ঠেকানো যাচ্ছেনা ডেঙ্গুর ক্রমাগত বিস্তার। এভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকলে কক্সবাজারেও ঢাকার মতো ডেঙ্গু রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশংকা রয়েছে। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে শুক্রবার ২ আগষ্ট বিকেল ৪টা পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে মোট ২৩ জন। ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করা হয়েছে মোট ৩৩ জন। চকরিয়া উপজেলা ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করা হয়েছে ৩ জন, তারমধ্যে একজন ভর্তি করা হয়েছে। এ তথ্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মহি উদ্দিন ও চকরিয়া জমজম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কবির সিবিএন-কে নিশ্চিত করেছেন।

এতদিন শুধুমাত্র কক্সবাজারের বাইরের জেলা থেকে ডেঙ্গু জীবানু বহন করে আসা রোগীরা কক্সবাজারের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হলেও কক্সবাজারেই ডেঙ্গু জীবানুতে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা খুব একটা পাওয়া যায়নি। চকরিয়া জমজম হাসপাতালে ডেঙ্গু জীবানু পাওয়া তিন জনের মধ্যে সাহারবিল ইউনিয়নের বাসিন্দা আম্বিয়া খাতুন নামক ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে ডেঙ্গু জীবানু সনাক্ত হওয়া অপর দু’জনের একজন চকরিয়া পৌরসভার বাসিন্দা, অপরজন মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তা। জমজম হাসপাতালে ডেঙ্গু জীবানু সনাক্ত হওয়া তিনজনই সমসাময়িক সময়ে কক্সবাজারের বাইরে কোথাও যাননি এবং কক্সবাজারে থেকেই তারা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন, চকরিয়া জমজম হাসপাতালের এমডি গোলাম কবির। তাঁর হাসপাতালে অন্যান্য কাজের তুলনায় ডেঙ্গু রোগী পরীক্ষা ও চিকিৎসা অগ্রাধিকার দিয়ে করা হচ্ছে। হাসপাতালের দর্শনীয় স্থানগুলোতে সরকার নির্ধারিত ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের তালিকা টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে। গরীব রোগীদের বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র মূল্যে ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে গোলাম কবির সিবিএন-কে জানিয়েছেন। এদিকে, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে শুক্রবার ২ আগষ্ট বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করা হয়েছে মোট ৩৩ জন, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৩ জন। এদের মধ্যে কক্সবাজারে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৮ জন। অর্থাৎ চকরিয়ার জমজম হাসপাতালের তিন জন সহ কক্সবাজারের নাগরিক বাইরের অন্য কোন জেলায় নাগিয়ে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু জীবানুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১১ জন।তারমধ্যে সদরে ৩ জন, রামুতে ২ জন, উখিয়ায় ১ জন, টেকনাফে ১ জন, মহেশখালীতে ১ জন ও চকরিয়ায় ৩ জন। কক্সবাজার জেলায় শুক্রবার বিকেল ৪ টা পর্যন্ত সনাক্ত বাকী ২৫ জনের মধ্যে অনেকে কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা হলেও তারা বাইরের জেলা থেকে ডেঙ্গু জীবানু শরীরে বহন করে কক্সবাজার এসেছেন এবং কক্সবাজারে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার তারমধ্যে একজন রোহিঙ্গা শরনার্থী। রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু ব্লক ও ডেঙ্গু চিকিৎসা টিমের কলেবর আরো বাড়ানো হয়েছে বলে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সিবিএন-কে জানিয়েছেন।

কক্সবাজারে শুধুমাত্র কুতুবদিয়া উপজেলায় এখনো ডেঙ্গু আক্রান্ত কোন রোগী পাওয়া যায়নি। কক্সবাজারে শীর্ষ পর্যায়ের একজন বিএমএ নেতা বৃহস্পতিবার একটি রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে কক্সবাজারে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া কোন ডেঙ্গু রোগী এখনো পাওয়া যায়নি বলে যে মন্তব্য করেছেন, এখানে প্রদত্ত সরকারি পরিসংখ্যান মতে, তা সঠিক নয়। এদিকে, কক্সবাজারে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর স্থানীয়ভাবে কেন বেশী লোক ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, এবিষয়ে অনেকে বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য করেছেন। তারমধ্যে একটি হলো-ঢাকা থেকে বিমান, এসি বাস, নন এসি বাস ইত্যাদি করে এডিশ মশা কক্সবাজারে আসছে। বিমানবন্দরে ফ্লাইট নামার পর ও বাস স্টেশনে বা টার্মিনালে বাস থামার পর দরজা খুলে বাস পরিস্কার করার সময় ঢাকা থেকে এডিশ মশা বিভিন্ন বাহনে এসে স্টেশনে বের হয়ে যায় এবং এসব এডিশ মশা স্টেশন থেকে বংশ বিস্তার করে কক্সবাজারে ডেঙ্গু রোগ ছড়াচ্ছে। নাহয়, কক্সবাজার পাহাড়, সমুদ্র ও লবাণাক্ত পানির এলাকা এবং ভৌগোলিকভাবে এডিশ মশার প্রজননক্ষেত্রের অনুকূলে না হওয়া সত্বেও এবছর কক্সবাজারে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু রোগী বাড়ার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না চিকিৎসকেরা। তবে এ বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক কোন তথ্য জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোহাম্মদ মহি উদ্দিনের কাছে জানা না থাকলেও তিনি বাস স্টেশন, বাস টার্মিনাল, বিমানবন্দর ও দূরপাল্লার বাস এসে যেখানে থামে, গ্যারেজে অপেক্ষা করে সেখানে ভালভাবে মশার ওষুধ নিয়মিত ছিঠানো দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, সেটা পরিবহন মালিকদেরও বেশী খেয়াল রাখতে হবে। প্রসঙ্গত, কক্সবাজারের নাগরিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম্মেসী বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী উখিংনু নুশাং রাখাইন (১৯) কক্সবাজারের বাইরে থেকে ডেঙ্গু জীবানু বহন করে এসে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত ২৭ জুলাই চট্টগ্রাম নেয়ার পথে মারা যায়। এছাড়া কক্সবাজারের টেকনাফের কাপড় ব্যবসায়ী সাতকানিয়া উপজেলার লতা ফকির পাড়ার আবদুল মালেক (৩৫) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে বৃহস্পতিবার ১ আগষ্ট মারা যান।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার ১ আগষ্ট হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী’র আদালত স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের কাছ থেকে মশা নিধনের ওষুধ বিদেশ থেকে কেন দ্রুত আনা হচ্ছেনা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ গুলো কেন মশা নিধনে কাজ করছেনা, জানতে চাইলে তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে বলেন, মশার ওষুধে এখন কাজ করছেনা, আর বিদেশ থেকে মশা নিধনের ওষুধ আনতে হলে, খাদ্য মন্ত্রনালয়কেই আনতে হবে, সিটি করপোরেশনকে আমদানী করতে হলে সরকার থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। তখন হাইকোর্ট উষ্মা প্রকাশ করলে, স্থানীয় সরকার সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন-আমরা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বসে কাজ করছি, এবিষয়ে দ্রুত একটা সমাধান হবে বলে তিনি আদালতকে জানান।