মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

নিজের প্রতিষ্ঠা করা ইউনিয়ন। নিজের নাভীকাটা গ্রাম। সেখানকার মানুষই তাঁকে নির্বাচিত প্রতিনিধি বানিয়েছে। সে গ্রামের মাটির সুগন্ধ যেন আতরের মতো সবসময় সারা গায়ে লেগে থাকে, সেজন্য কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হলো সেখানকার মাটি ও মানুষের প্রিয় ব্যাক্তি ‘মাস্টার’ কে। সেই মাস্টার হলো-কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া নিবাসী, বর্তমানে কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া জামে মসজিদ রোড নিবাসী, সাবেক অনারারী ম্যাজিষ্ট্রেট, অবিভক্ত চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল করিম (৮৬)। যেখানে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছে তাঁর জম্মদাতা মাতা-পিতা। যাকে তাঁর প্রিয় এলাকাবাসী আদর ও সোহাগ করে ‘মাস্টার’ বলে ডাকতো। দাফনের আগে ফজলুল করিমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা ভারুয়াখালী দারুল উলুম মাদ্রাসা মাঠে একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল বশরের ইমামতিতে রোববার ২৮ জুলাই বেলা ২’২০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়।জানাজায় কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান আবু শামা সওদাগর ও মাওলানা আবুল বশর, ভারুয়াখালী দারুল উলুম মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল হুদা, মরহুমের জ্যেষ্ঠ সন্তান সরওয়ার করিম বক্তৃতা করেন। জানাজার মাঠ ছিল কানাই কানাই ভর্তি। কোথাও তিল পরিমান ঠাই ছিলোনা। সবার একটি কথা মাস্টারকে ভারুয়াখালীবাসীর বড় বেশী প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু আল্লাহতায়লা তাঁকে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়াটাকেই আর বেশী শ্রেয় মনে করেছেন। সবাই এ সান্তনা কাতর হয়ে পড়েছেন। একইদিন ফজলুল করিমের প্রথম নামাজে জানাজা সকাল ১০ টায় কক্সবাজার শহরের বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এ জানাজায় ইমামতি করেন শহরের টেকপাড়া জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোজাম্মেল হক। জানাজার আগে মরহুমের কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করে বক্তৃতা করেন, কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ নেজামুল হক, পৌর প্রিপ্যারেরটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ও মরহুমের জ্যেষ্ঠ সন্তান সরওয়ার করিম। উভয় জানাজায় বক্তারা মরহুম ফজলুল করিমকে একজন জ্ঞানের ভান্ডার উল্লেখ করে বলেন-তাঁর মৃত্যুতে জেলাবাসীর অপূরনীয় ক্ষতি হলো। মরহুম একজন নীতিবান, আর্দশবান ব্যক্তিত্ব হয়ে অত্যন্ত নির্লোভ ও নিরহংকার মানুষ ছিলেন। উভয় জানাজায় রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক, সাধারণ মানুষ, কৃষক, লবণ চাষী, চিংড়ি চাষী সহ বিভিন্ন পেশার মানুষের ঢল নামে।
প্রসঙ্গত, ঢাকায় হলি ফ্যামেলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার ২৭ জুলাই সকাল ৮ টা ২৫ মিনিটের দিকে ফজলুল করিম ইন্তেকাল করেন ( ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে ফজলুল করিম ৩ পুত্র, ৫ কন্যা ও স্ত্রী রেখে যান। পুত্র সন্তানদের মধ্যে প্রথম পুত্র সরওয়ার করিম ব্যবসায়ী, দ্বিতীয় পুত্র এডভোকেট সাজ্জাদুল করিম কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন সিনিয়র আইনজীবী ও কনিষ্ঠ পুত্র জিয়াউল করিম পেট্রো বাংলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। মরহুম ছৈয়দ আকবর ও মরহুমা সামারুপ বেগমের পুত্র, অত্যন্ত মেধাবী ও চৌকষ গুণাবলী সম্পন্ন মরহুম ফজলুল করিম কক্সবাজার জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, বর্তামানে জেলা বিএনপির এক নম্বর উপদেষ্টা, ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাচিত চেয়ারম্যান, কক্সবাজার শহরের বিমানবন্দর সড়কস্থ সৈকত উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অবৈতনিক প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক, টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল, কক্সবাজার শহরের পৌর প্রিপ্যারেরটরী হাইস্কুল, ভারুয়াখালী হাইস্কুল, রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, টেকপাড়া আমেন খাতুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ আটো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও উদ্যোক্তা হিসাবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তাঁর গ্রামে ‘মাস্টার’ নামে বহুল পরিচিত। অসাধারণ পান্ডিত্যের অধিকারী মরহুম ফজলুল করিম ১৯৩৯ সালের ৩০ সেপ্টম্বর জম্মগ্রহন করেন। ইংলিশ মিডিয়ামে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করা মরহুম ফজলুল করিম ছিলেন তাঁর গ্রামের প্রথম গ্র্যাজুয়েট। মরহুম ফজলুল করিম ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত কক্সবাজার আদালতে অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে নিষ্ঠা ও সততার সাথে বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বৃহত্তর চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় ১৯৭৫ সালের প্রথমদিকে ফজলুল করিম সহ আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের আমন্ত্রণে শেখ মুজিবুর রহমান চৌফলদন্ডীতে লবণ মাঠ পরিদর্শনে আসেন এবং সেখানে বিশাল জনসভায় বক্তৃতা করেন।