মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

‘ছেলেধরা’ সন্দেহ হলে কখনো, কোন অবস্থাতেই আইন নিজের হাতে তুলে নেবেননা। নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে খবর দিন। তারপরও কেউ গুজব ছড়িয়ে বা গুজবে জড়িয়ে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে কাউকে গণপিটুনি দিলে কিংবা গণপিটুনি দিতে উৎসাহিত করলে তাদেরকে কঠোর আইনের আওতায় আনা হবে। কেউ ফেসবুক, ইমু, ওয়ার্টসআ্যাপ, টুইটার ই-মেইল বা অন্য কোন সামাজিক মাধ্যমে কথিত ‘ছেলেধরা’ বিষয়ে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে গুজব ছড়ালে বা গণপিটুনিকে উৎসাহিত করে ম্যাসেজ, নিউজ, কমেন্ট, শেয়ার করলে তাদের বিরুদ্ধে আইসিটি এ্যাক্ট সহ ফৌজদারি আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। গুজব রটনাকারীদের অবশ্যই ভয়াবহ করুণ পরিনতি ভোগ করতে হবে। তাই এবিষয়ে দেশপ্রেমিক সকল নাগরিকদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন তথাকথিত ‘ছেলেধরা’ বিষয়ে সিবিএন-কে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপারের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনরত মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন-দেশের সবচেয়ে বড় গণমাধ্যম হচ্ছে জামে মসজিদের মিম্বর এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একযোগে মসজিদের খতিব, ইমাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা যদি ‘ছেলেধরা’ বিষয়টা সঠিক নয়, এটা ডাহা মিথ্যা ও সম্পূর্ণ গুজব বলে প্রচার করেন, তাহলে দেশের সকল নাগরিক সেটা অবশ্যই আস্থায় আনবে। তাছাড়া, মুষ্টিমেয় গুজব রটনাকারীরা উদ্দ্যেশ্যমূলকভাবে গুজব ছড়াতে আর কখনো সাহস করবেনা। খতিব, ইমাম, বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক নেতা, এনজিও কর্মী, কমিউনিটি পুলিশের সদস্য সহ সর্বস্থরের দায়িত্বশীলেরা বিষয়টি নিয়ে একটু সচেতন হলে কথিত ‘ছেলেধরা’ গুজবের নেতিবাচক দিক থেকে সকলে রেহায় পাবেন। এজন্য এ বিষয়ে সকলকে একযোগে এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহবান জানান। ভারপ্রাপ্ত এসপি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন-সারাদেশে তথাকথিত ‘ছেলেধরা’ সংক্রান্ত এ পর্যন্ত ৪৬ টি ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা বহুমুখী তদন্ত করে দেখা গেছে কোনটিই তথাকথিত ‘ছেলেধরা’ বিষয়ক নয়। ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এসব ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। অর্থাৎ তথাকথিত ‘ছেলেধরা’ ব্যক্তির সাথে কারো সম্পত্তির দ্বন্ধ, কারো নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, কারো টাকা পয়সার লেনদেন, কারো সাথে প্রেমের সম্পর্ক, স্থানীয়ভাবে শত্রুতা ইত্যাদি বিভিন্ন স্বার্থ হাসিল করতে তথাকথিত ‘ছেলেধরা’ সাজিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে। ‘ছেলেধরা’ অপবাদ দিয়ে শত্রুতা হাসিল করছে। আবার কেউ কেউ দেশের শান্ত পরিবেশকে পরিকল্পিতভাবে অশান্ত ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যাহত করতে এ ধরনের একের পর এক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তাই এ ধরনের গুজবে কাউকে কান না দিতে তিনি সকলকে অনুরোধ জানান।কক্সবাজারে ইতিমধ্যে গুজব সৃষ্টিকারী ৩ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, উল্লেখ করে এডিশনাল এসপি (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন সিবিএন-কে বলেন, গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গত ২৬ জুলাই অজ্ঞাত শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে টেকনাফ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি এখন তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং গুজবে জড়িত অনেকের নাম সেখানে বেরিয়ে আসছে। কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত এসপি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন এ বিষয়ে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।