সিবিএন ডেস্ক:
শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল সাতটা থেকে শনিবার সকাল সাতটা পর্যন্ত—গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮৩ জন। আর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শনিবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৫২৮ জন। যা ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীর সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ৮ জন এবং বেসরকারি হিসাবে ৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

এদিকে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৫৮জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ২০০জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৮৭জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২০৭জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১৭২জন, বারডেম হাসপাতালে ৩৩জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১০১জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৯৪জন ও বিজিবি হাসপাতালে ১৯৯ জন ভর্তি আছে।

বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ২০৬ জন। বর্তমানে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৮৬৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে ডেঙ্গু রোগী ছিল ৫ হাজার ৫৫১জন, ২০০১ সালে দুই হাজার ৪৩০ জন, ২০০২ সালে ছয় হাজার ২৩২ জন, ২০০৩ সালে ৪৮৬, ২০০৪ সালে তিন হাজার ৪৩৪ জন, ২০০৫ সালে এক হাজার ৪৮ জন, ২০০৬ সালে দুই হাজার ২০০ জন, ২০০৭ সালে ৪৬৬ জন, ২০০৮ সালে এক হাজার ১৫৩ জন, ২০০৯ সালে ৪৭৪ জন, ২০১০ সালে ৪০৯ জন, ২০১১ সালে ১ হাজার ৩৫৯ জন, ২০১২ সালে ৬৭১ জন, ২০১৩ সালে এক হাজার ৭৪৯ জন, ২০১৪ সালে ৩৭৫ জন, ২০১৫ সালে তিন হাজার ১৬২ জন, ২০১৬ সালে ছয় হাজার ৬০ জন, ২০১৭ সালে দুই হাজার ৭৬৯ জন এবং গতবছর ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮ জন।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ‘২০১৮ সালে বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ১০ হাজার ১৩৮ জন রোগী। সেটি ছিল এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কিন্তু এ বছর সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।’

আবার কন্ট্রোল রুমের হিসাব থেকেই জানা গেছে, ২০০০ সালে মারা গিয়েছিল ৯৩ জন, ২০০১ সালে ৪৪ জন, ২০০২ সালে ৫৮ জন, ২০০৩ সালে ১০ জন, ২০০৪ সালে ১৩ জন, ২০০৫ সালে ৪ জন, ২০০৬ সালে ১১ জন, ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এবং ২০১৪ সালে কেউ মারা যায়নি। আবার ২০১১ সালে ৬ জন, ২০১২ সালে ১ জন, ২০১৩ সালে ২ জন, ২০১৫ সালে ৬ জন, ২০১৬ সালে ১৪ জন, ২০১৭ সালে ৮ জন এবং ২০১৮ সালে ২৬ জন মারা যান।

চলতি বছরে স্বাস্থ্য অধিদফতর ৮ জনের কথা বললেও বিভিন্ন হাসপাতাল এবং রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পর্যন্ত চলতি বছরে মারা গেছে ৩৫ জন।

এদিকে, ঢাকার জেলার বাইরেও এবারে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা গেছে। কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৩৭৩ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।

এই প্রসঙ্গে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রথম আউটব্রেক হয়েছে ২০০০ সালে।’

প্রতিবছরই ডেঙ্গু অ্যাটাক করছে মন্তব্য করে এই চিকিৎসক বলেন, ‘এ বছর যে এভাবে ডেঙ্গু আসবে, রোগ তত্ত্ব নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে কিন্তু আমাদের সেভাবে কিছু জানানো হয়নি, ডেঙ্গু বেশি হতে পারে এ ধরনের কোনও আগাম সংবাদ ছিল না। কিন্তু এটা পাওয়ার কথা ছিল।’ তিনি বলেন, ‘এডিস মশা নতুন করে ধরন বদলিয়েছে কিনা বা নতুন করে তাদের জেনেটিক কোনও পরিবর্তন হয়েছে কিনা সেটাও আমাদের জানানো হয়নি। রোগীর অবস্থা দেখে এখন আমরা ভেবে নিচ্ছি এ ধরনের কিছু হয়েছে।’

আবার ডেঙ্গু নিয়ে দেশে কোনও গবেষণা হয়নি উল্লেখ করেন ডা. গুলজার হোসেন ‍উজ্জ্বল বলেন, ‘আবার ডেঙ্গুতে যে রোগীরা মারা যাচ্ছেন, তারা কেন মারা যাচ্ছেন, এগুলো নিয়ে কোনও গবেষণা হয়নি। তাতে উৎসাহও দেওয়া হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবার শুনতে পাচ্ছি, ডেঙ্গু রোধে যে ওষুধ ছিটানো হয়েছে, তাতে ভেজাল ছিল। হয়তো বা সেখানে আদৌ কোনও ওষুধই ছিল না। এ রকম হলে তো রোগতত্ত্ববিদদেরও দোষ দেওয়া যায় না। মশাই যদি এ পরিমাণ হয় তাহলে তো অসুখ হবেই। আমরা যদি মশাই ঠিকমতো নিধন না করি, তাহলে তো এটা সমস্যা।’

ডেঙ্গু সচেতনতা নিয়ে প্রচারণা কমে গেছে মন্তব্য করে ডা. গুলজার হোসেন বলেন, ‘এগুলো আসলে কন্টিনিউয়াস বলার বিষয়।’ ডেঙ্গু নিয়ে ভালো কোনও গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করা হয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে। মশার বংশবৃদ্ধি বেশি হচ্ছে। এডিস মশার সংখ্যাটা বেশি বেড়ে যাচ্ছে। এর কারণ চারপাশে বিল্ডিং হচ্ছে। সে তুলনায় মশা নিধনের কার্যক্রম অতটা কার্যকর করা হয়নি। বর্ষায় মশা ডিম পাড়ে। মশার প্রকোপ বৃদ্ধির জন্যই ডেঙ্গু বাড়ছে। মশা যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে তো মশানিধন করতে পারিনি। মশা বেড়েই চলছে, আমরা কিছু করতে পারিনি।’

সিটি করপোরেশনের ভূমিকা জানতে চাইলে ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ‘ওরা হয়তো ঠিকমতো কাজ করে না। জনবল নেই। ওষুধ কাজ করে না। ওষুধে ভেজাল। ভেজাল ওষুধে তো আর মশা মরবে না। এ ওষুধ স্প্রে করে লাভ নেই।’এসব কারণেই এডিস মশা বাড়ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।