এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া:
চকরিয়া উপজেলার প্রবহমান মাতামুহুরী নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে পড়ে প্রতিবছর সংকোচিত হয়ে পড়ছে নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ জনপদ। বর্ষাকালে অতিরিক্ত ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তান্ডবে মাতামুহুরী নদীতে ভাঙ্গনের তা-ব বর্তমানে নিয়মে পরিণত হয়েছে। বছরের পর বছর নদী ভাঙ্গনে পড়ে চকরিয়া পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নদীর তীর এলাকায় গৃহহীন হচ্ছে হাজারো পরিবার।

অপরদিকে মাতামুহুরী নদীতে ভাঙ্গন তা-বে চরম ঝুঁিকতে রয়েছে চকরিয়া পৌরসভার বিভিন্ন জনপদ। বিশেষ করে চকরিয়া পৌরসভার তিনটি পয়েন্ট বর্তমানে মাতামুহুরী নদীতে বিলীন হতে চলছে। চলতি বর্ষামৌসুমের শুরুতে নদীতে ভাঙ্গনের মহোৎসব শুরু হয়েছে। এতে উদ্বেগ-আতঙ্ক বেড়েছে নদীর তীরবর্তী জনপদের বাসিন্দা লাখো মানুষের মাঝে।

শুক্রবার বিকালে মাতামুহুরী নদীর কবলে পড়া চকরিয়া পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডের ১নং বাঁধ এলাকার ভাঙ্গন পরির্দশন করেছেন চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী।

তিনি বলেন, বর্তমানে চকরিয়া পৌরসভার তিন পয়েন্টে মাতামুহুরীর ভয়াবহ ভাঙ্গন তান্ডব দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চকরিয়া পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডের ১নং বাঁধ এলাকা, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মজিদিয়া মাদরাসা পয়েন্ট ও নামার চিরিঙ্গা মামা-ভাগিনার দরগা পয়েন্ট এবং পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল বারী পাড়া ও কাজিরপাড়া অংশ চরম ঝুঁিকতে রয়েছে।

মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, নদী ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে চকরিয়া পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ডের মৌলভীরচর, ১নম্বর ওয়ার্ডের আমানচর, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তরছঘাট, বাটাখালী সেতু পয়েন্ট ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাটাখালী খোন্দকারপাড়া অংশের জনবসতি। এসব পয়েন্টে দ্রৃত সময়ে টেকসই তীর সংরক্ষন বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। বসাতে হবে পাথরের সিসি ব্লক। পানি উন্নয়ন বোর্ডে সহসা বিষয়টির আলোকে ব্যবস্থা না নিলে পৌরসভার তিনটি পয়েন্টের শতশত পরিবারের বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এতে পরিবার গুলো গৃহহীন হয়ে পড়বে। এ অবস্থার উত্তোরণে মেয়র আলমগীর চৌধুরী কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর আর্কষণ করেছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, ১৯৯১ সালের পর থেকে শুরু হয়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৭বছরে নদী ভাঙ্গনের কবলে ভিটেবাড়ি হারিয়ে অন্তত দশ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছেন। এসব পরিবার বেঁেচ থাকার তাগিদে ঠাই নিয়েছে পাহাড়ি জনপদে। নদীতে বিলীন হওয়ার পথে রয়েছে পৌরসভার গুরুত্বপুর্ণ শহররক্ষা বাঁধ ও ছিকলঘাটা-কৈয়ারবিল সড়কে ৩৩হাজার কেভির বিদ্যুৎ লাইনের খুটি। হুমকিতে আছে তীরবর্তী জনপদের হাজার হাজার জনবসতি, বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিবছর ভাঙ্গন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকা বরাদ্দে বেসুমার উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখলেও জনগনের সুরক্ষা নিশ্চিতে স্থায়ীভাবে টেকসই কোন ধরণের প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছেনা।

তবে কক্সবাজার ও বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে একাধিক টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট উধর্বতন দপ্তরে ইতোপুর্বে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দের অভাবে চকরিয়া উপজেলার প্রায় এলাকায় নদী ভাঙ্গন রোধে প্রকল্প নেওয়া যাচ্ছেনা।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা শাখা কর্মকর্তা (এসও) এসএম তারেক বিন সগীর বলেন, মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে পাউবো ইতোমধ্যে অনেক গুলো প্রকল্পপ্রস্তাবনা তৈরী করে অর্থবরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট উধর্বতন দপ্তরে সারসংক্ষেপ প্রেরণ করেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থবরাদ্দ না হওয়ায় সবখানে একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব হচ্ছেনা।