মুহাম্মদ ফেরদাউসঃ
প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ কক্সবাজার পরিকল্পিত যুগোপযোগী পদক্ষেপ ও দীর্ঘ মেয়াদি টেকসই পর্যটনবান্ধব পরিকল্পনার অভাবে আজ বিশ্বের অন্যতম পর্যটকদের আকর্ষণীয় নীল জলরাশীর নিরাপদ সমুদ্র সৈকত ককসবাজারের বেহাল দশা। হয়ত এই ছবিটাও ছিলো কোন একটা পরিকল্পনার অংশ। বাস্তবতা কি বলে? দেশে সুন্দর এবং ভালো কিছু করতে একজন মরিয়া তাঁকে সহযোগিতা করার কেউ আছে বলে মনে হয় না। এখন বর্ষা মৌসুমে ককসবাজারের প্রতিটি অলিগলি ভাংগা আর হাঁটু পানি আর কাঁদায় পরিপূর্ণ। সৈকতে ঝুপড়ি দোকান, অবৈধ গাড়ি পার্কিং। সব পরিকল্পনা রয়েছে কিন্তু বাস্তয়ন সুদূর পরাহত। পাশের পার্বত্য জেলা গুলো পাহাড়, বনায়ন প্রকৃতি আর আদিবসিদের চালচিত্র নির্ভর পর্যটন এর উপর পরিকল্পিত ভাবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সফলভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। সেখানে ককসবাজারবাসীর দূর্ভাগ্য এত বড় সম্পদশালী জেলা ককসবাজার, এখানে সাগর ভরা মাছ, লবনের মাঠ, গাছগাছালি , পানের বরজ, সুপারি বাগান, ঝর্না, পাহাড়, শুঁটকি পল্লী, সাফারি পার্ক, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, রামুর বৌদ্ধ মন্দির, রামুর সেনাবাহিনী ক্যাম্প, রামু রামকোট, ককসবাজার বার্মিজ মার্কেট, হিমছড়ির ঝর্ণা, ইনানী পাথুরে বীচ, সেন্ট মার্টিন আর ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে সমুদ্র তো আছেই, শুধু পরিকল্পনা আর প্রচারণার অভাবে এতবড় পর্যটন সম্পদে সমৃদ্ধ ককসবাজার আজ পর্যটকদের কাছে তিন বেলা সমুদ্র দর্শন, চড়া দামে হোটেল/ মেটেলে অবস্থান, গলা কাটা রেস্টুরেন্টে খাবার গ্রহণ আর রিকশা অটোরিকশার দালালের যন্ত্রণা, বিষযুক্ত শুটকি মাছ, নকল বার্মিজ পণ্য কেনা ছাড়া আর বেশি কিছু আছে বলে মনে হয় না। তার সাথে যোগ হয়েছে রোহিঙ্গা আর মাদক। এই রোহিঙ্গাদের কারণে দ্রব্য মূল্যের তিনগুণ বৃদ্ধি স্থানীয় জন জীবন আর পর্যটন শিল্পে প্রভাব পড়েছ। শহরের শত বছরের প্রধান সড়কটি সহ পরো শহর নালা নর্দমায় পরিনত হয়ে গেছে, ইতিমধ্যে একনেকে পাস হওয়া প্রধান সড়কে যে মাস্টার প্লাণ শুনছি। এখানে কউক, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন কোথাও নগর পরিকল্পনাবিদ নাই। প্রধান সড়কটির দুইপাশে নতুন করে অধিগ্রহণ না করে কোন ভাবেই যানযট মুক্ত করা যাবে না। এই প্লান গুলি ডিজাইন করার আগে স্থানীয় সমাজ সচেতন নাগরিক বর্গের মতামত নেয়া জরুরি মনে করছি। মাদকের কারণে স্থানীয় আর পর্যটকদের গাড়ি যাতায়াতের নাজেহাল হতে হচ্ছে আর এতে পরিবার পরিজন নিয়ে সারাদেশের সাধারণ পর্যটক ককসবাজার বিমুখ হচ্ছে। বিমানেও আজ পায়ের জুতা মোজা খুলে চেক পরা হচ্ছে। কেউ টেকনাফ থেকে ককসবাজার আসলে ল্যাপটপ খোলে আজব কায়দায় চেকিং হচ্ছে। চট্টগ্রামে পৌঁছাতে বিভিন্ন জায়গাতে চেকিং হচ্ছে। ভালো মানুষ কষ্ট পাচ্ছে এই বর্বর রোহিঙ্গা রিফিউজির কারণে। আজ প্রায় ধংসের দোরগোড়ায় কক্সবাজারের সাহিত্য সংস্কৃতির পরিবেশ শ্রমবাজার, চাকরি বাজার, বাসা ভাড়ার উর্ধগতি, মাছ গোস্ত, তরিতরকারির চড়া মুল্য এই সবের পিছনে শুধু মাত্র রোহিঙ্গা রিফিউজি। স্থানীয় সমাজ সচেতন নাগরিক, স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা, পৌর মেয়র, জনপ্রতিনিধি, মাননীয় সাংসদ, সরকার আর এনজিও সময় থাকতে এই দিকে নজর দিয়ে রোহিঙ্গা রিফিউজিদের পুনর্বাসন শুধু মাত্র কলুর বলদ ককসবাজার জেলায় নয়, চাই সারাদেশের সব জেলায় ভাগ করে ২০-৩০ হাজার রোহিঙ্গাদের একটা করে পল্লী / ক্যাম্প করে তাদের অবরুদ্ধ করে থাকা খাওয়া সহ যাবতীয় মানবিক সেবা সরকার আর এনজিও নিলে ককসবাজার তার আসল রুপ আর সত্তা ঐতিহ্য ফিরে পাবে। এই ককসবাজার আরার পরিকল্পিত ভাবে দেশি-বিদেশি পর্যটন আকর্ষণ করবে এই আশাবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। শুধু মাত্র মাদক আর রোহিঙ্গাদের কারণে আজ ককসবাজারের সামাজিক ঐতিহ্য বিপন্ন হয়ে গেছে। আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবগত আছেন এবং উত্তরণে দ্রুত দিক নির্দেশনা দিবেন।