আলমগীর মাহমুদ :

জয়ন্তী রানী মজুমদার। উখিয়া কলেজে পড়ায়।আমার কলিগ। বিবাহ সূত্রে কুমিল্লা থেকে কক্সবাজারে আগমন। গর্জনিয়া জমিদার রামসিং এর ছেলের বউ। কক্সবাজার পানবাজার ঔষধ মার্কেটটি ওনাদের শরীকীয় ।বসত ও ঐ বিল্ডিং এর উপরের তলায়।

উখিয়া কলেজে জয়েণ্টের পর থেকে সখ্যতা কানায় কানায়।ভাই বলেই ডাকে।সবাইরে অট্টহাসিতে ডাক দিয়ে শুনায় আমার ভাই।আমার ভাই..

আমিও রসিকতায় হালকা করে কই “তুমি কি ভাই বানিয়েছো?নাকি বাবার বাড়ির লোকজন লোকজন ভাব দেখিয়ে জামাইরে মানসিকভাবে দূর্বল করার কৌশল নিয়েছো!

উখিয়া কলেজে সবাই একবাক্যেই বিশ্বাস ও আস্তায় ভাবে জয়ন্তী মেডাম আলমগীর ভাইয়ের লোক।জয়ন্তী মেডামের লোক বলে পরিচিত হয়েছি অন্য কাউকে যোগ্যতার হিসেব কিতাবে ভোটটি দিলেও কেউর বিশ্বাস আস্তায় সাড়া জাগাবে না আমি এই কাজটি করেছি।

তাই সোজা সাপটা ভাবনায় রাখলাম ” দিলে যে, না দিলেও একদশা। এরচেয়ে বরং জয়ন্তীরে ভোট খানি সোপার্দ করব।

উখিয়া কলেজ শিক্ষক পরিষদ নির্বাচন হয়ে গেল শনিবার ২০/৭/২০১৯ইং। দুই প্যানেলে নির্বাচন। বেশ হাড্ডাহাড্ডি। উভয় পক্ষের সাথে উদ্দেশ্য গোপন করে ভাল থাকার কৌশল নিলাম।একই প্রতিষ্টানে এমন ভোটযোদ্ধে জানাযার নিশ্চিত একজন সদস্যকেও হারানো হবে নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো তাই গা সারিয়ে রাখার পাক্কা কৌশলীর ভুমিকায় ছিলাম।

সৈয়দ আকবর সেক্রেটারি প্রার্থী। ফোনে কয় কক্সবাজার আমরা বসবো তুমি এসো।আমি সোজাই জানিয়ে দিলাম “কথা গোপন রয় না” তোমাদের অনেক গোপন কথা বাজারে আসবে।বিরুদ্ধ পক্ষের অনেকের সাথে কানায় কানায় সখ্যতা দেখে তোমাদের ভাবনায় আসতে পারে “ওর থেকে কথাটা ফাঁস হল বুঝি” তাই অনুরোধ.. কোন গোপন কথা আমার সামনে নয়।

সেও বুঝল। আমি তারে অভয় দিয়ে জানালাম যদি প্রয়োজন মনে কর “তোমাদের যতদূর সিদ্ধান্ত জানানো যায় জানাইও। আমার সাথে যেটুকু কমন পড়ে অতটুকুতে একমত হবো।জয়ন্তী ছিল এই প্যানেলে সদস্য প্রার্থী।

রাতে প্লাবন ফোন দেয়।সে জালাল প্যানেলের সদস্য প্রার্থী।জালাল সেক্রেটারি প্রার্থী। প্রত্যেকে ভোটার প্রত্যেকে প্রার্থী বেসিসে হবে ভোট। এই প্যানেলগুলো ছিল অপ্রকাশিত গোপন প্যানেল।
প্লাবনকেও আমি সৈয়দ আকবরের মতো ঘুরিয়ে দিতেই জালাল বেশ আব্দারেই মোবাইল হাতে নিয়ে কয় আপনার বাসায় এককাপ চা না খেয়ে আমি যাবো না।

শাহাবুদ্দিন, প্লাবন,জালাল বাসায় আসে আমি সহ প্রফেসর অজিতদাসের বাসায় যাই।তখন রাত ১০.৩০ একটা আপোষ রফা করে বিভেদের বীজবুনার কর্ম থেকে বিরতির কথাও ভাবনায় কালবৈশাখী তোলে।

সবাই ঐক্যমত্য চেয়েছিল। তখন বড্ড দেরী হয়ে গেছে। সূর্য উদয়ের সাথে সাথেই ভোটের দিনক্ষন ঠিক করা।প্রিন্সিপালরোমে ভোট শুরু ” জালাল আমারে বেশ ক’বার দোয়া চেয়েই শুরু করে”

ভোট শেষ। আকবর প্যানেল জয়ী হয়।নির্বাচনে নামের লিখা দেখে যারা সংশ্লিষ্ট ছিল তারা নাকি লেখায় বুঝেছে কে কারে ভোট দিয়েছে।বিজিতদের মুখে বুলি হয়ে আসে “কয়জন ক্রিমিনাল এই ভোটে তাইই চিনে গেলাম!

এরপর যতই দিন যায় শুধুই বায়বীয় আবহ ” আমি আর তহিদই নির্বাচনটা এলোমেলো করেছি।কেমন যেন মন ভার ভার পরিবেশ।চেনা মানুষ যেন অচিনের ভঙ্গিমায়।বেশির ভাগের ধারনা জয়ন্তীরে ভোট দিয়েছে আমারে দেয়নি।অথচ চা বিস্কিটে ভালবাসায় আমিও লালন করতাম!

ভাবলাম চীনামাটির বাসন ভাঙ্গলে জোড়া নেবার নয়।তারপরও প্লাবনকে দু’চারটে পয়েন্ট দিলাম।ভাল আবহ ফিরিয়ে আনতে নয় চিন্তায় নুতন জগৎ দেখতে।এরপর এক এক করে বাতাসে বিষাদের গন্ধ।

বিষাক্ত পরিবেশে ঘুড়ি উড়ানোর পরিবেশটাও যখন বেদনার কালো ধোঁয়াশার দখলে। ঠিক তখনই, যে জন ভাই বলে ডেকেছিল। বিশ্বাস আস্তায় করেছিল নির্ভর সেও বেশ কৌতুহলে বিষ্ময়ের ভাবে দাঁড়িয়ে আমারে জানতে চায় “ভাই! তুমি কি ভোটটি আমারে দিয়েছিলে!

তাল মিলাতে মিলাতে বেতালে পড়ে আমি নিজেই নিজেরে কইলাম ” আমার মতো কেউ কোনদিন ভালবাইসো না।
ভালবেসে বুঝলাম আমি কি যে যন্ত্রণা!!

লেখকঃ বিভাগীয় প্রধান। সমাজবিজ্ঞান বিভাগ। উখিয়া কলেজ কক্সবাজার।
alamgir83cox@gmail.com