জসিম মাহমুদ,টেকনাফ :

শাহপরীরদ্বীপ ৪০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মিত হবে নাকি অর্থবছর শেষ হওয়ার কারণে এডিপি বাতিল হবে এটি নির্ভর করছে সুপারিশ কমিটির উপর। নানা জটিলতার কারণে সওজের ফান্ডে এক অর্থবছরের টাকা মজুদ থাকার পরও গেল ৮ মাসেও টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় এমন দু:শ্চিন্তা ভর করেছে সংশিষ্ঠদের কপালে।

টেকনাফের হাড়িয়াখালি থেকে শাহপরীরদ্বীপের দুরত্ব ৫.১৫ কিলোমিটার। প্রাকৃতিক দূর্যোগে এই সড়কটি পুনরায় নির্মাণের জন্য গেল বছরের ৭ অক্টোবর একনেকের বৈঠকে সড়কটি ‘পুন:নির্মাণ এবং শক্তিশালীকরণ শীর্ষক একটি প্রকল্প বস্থবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় রাস্তা নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৬৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে তিন বছরের মধ্যে এর কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যে কেটে গেছে একটি অর্থ বছর। কিন্তু এখনো টেন্ডারই করতে পারেনি সংশ্লিষ্ঠরা। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে নাকি এডিবি বাতিল হবে এনিয়েই সংশয়ে রয়েছে প্রকল্পের বাস্তবায়ন সংস্থাটি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দূর্যোগে শাহপরীরদ্বীপের বেড়িবাধ ভেঙ্গে সাতবছর আগে হাড়িয়াখালি টু শাহপরীরদ্বীপ সড়কটি ভেঙ্গে হয়। নিয়মিত জোয়ারের পানি প্রবেশের ফলে সড়কটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গত বছর সড়কটি পূর্ণনির্মাণের জন্য প্রায় ৬৮ কোটি টাকার এডিপি নির্ধারিত হয় একনেকের সভায়। এরপর সওজের পথ থেকে টেন্ডার আহবান করা হয়। প্রথম দফার টেন্ডারটি নানা জটিলতার কারণে বাতিল হয়। এরইমধ্যে কেটে গেছে একটি অর্থবছর। আবারো টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। এবার টেন্ডার জমা দিয়েছে একটি মাত্র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে প্রতিষ্ঠানটি যাতায়াত খরচ বাবদ ৯ শতাংশ টাকা বাড়তি দেখিয়েছ। সূত্রটি এই সড়কে পিসি গার্ডার সেতু ও ১২টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে ১.৩২ হেক্টর। আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে আড়াই হাজার বর্গফুট আয়তনের। পরিদর্শন বাংলো নির্মিত হবে ৩ হাজার বর্গফুট আয়তনের।

এ প্রসঙ্গে সওজ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, দেশে প্রচুর মানসম্মত উন্নয়ন কাজ চলছে কিন্তু সেই হারে ও সেই মানের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নেই। এই কারনে শাহপরীরদ্বীপের সড়কটির টেন্ডার একদফা বাতিল হয় । দ্বিতীয় দফায় আহবান করা দরপত্রে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার জমা দিয়েছে। তারাও যাতায়াত খরচের জন্য ৯ শতাংশ টাকা দেখিয়েছে। এটিও দরপত্র পাসের জটিলতা তৈরি করবে।

তিনি আরো বলেন, দরপত্রটি সুপারিশ কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। সুপারিশ কমিটি চাইলে সেটি পাস করতে পারেন। কিন্তু সুপারিশ কমিটিরও কিছু নিয়ম নীতি মেনে চলতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডারটি ফের বাতিল হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এই পূণরায় টেন্ডার আহবান করতে হবে।

তিনি আরো বলেন , প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় রয়েছে। বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের একবছরের টাকা ফান্ডে জমা রয়েছে। কিন্তু টেন্ডার জটিলতায় একটি অর্থবছর পার হয়ে গেছে। দ্বিতীয় দফার টেন্ডারটি বাতিল হলে হয়তবা কাজ শুরু করার আগেই আরো একটি বছর কেটে যাবে। এমনভাবে চলতে থাকলে এডিপি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে দ্বীপবাসী জানায়, ২০১২ সালের জুন মাসে সাগরের জোয়ারের পানির তোড়ে সাবরাং হারিয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ সড়ক ভেঙ্গে যায়। এরপর থেকে দ্বীপটির সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। গত সাত বছরেও সড়কটি পুনর্র্নিমাণ হয়নি। ফলে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বিচ্ছিন্ন জনপদে পরিণত হয়েছে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ। তাই দ্বীপের ৪০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

অন্য দিকে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমের তিন কিলোমিটার ভাঙ্গা বেড়িবাঁধের সংস্কারের ১২১ কোটি টাকা কাজ এখনোও শেষ হয়নি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভাঙা বাঁধ জোড়া লাগলেও সড়কটি সংস্কারে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

শাহপরীর দ্বীপ বাঁচাও কমিটির সভাপতি জাহেদ হোসেন বলেন, কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য টেকনাফ সদরে যে নিয়ে যাবে ওই অবস্থা নেই। নেওয়ার পথেই মারা যাবে। বেড়িবাধটি নির্মাণ করতে সাতটি বছর অতিবাহিত হলেও রাস্তা না থাকার কারনে এর সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী।

শাহপরীরদ্বীপের বাসিন্দা কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সোনা আলী বলেন, নিয়ম নীতি মানুষের উপকারের জন্য। নিয়ম ভেঙ্গে যদি মানুষের উপকার হয় তবে সে পথেই যেন চলে সুপারিশ কমিটি এই অনুরোধ রইল। তিনি আরো বলেন, রাস্তাটি দ্রুত নির্মাণ হওয়ার দরকার। এটি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনে শাহপরীরদ্বীপ বাসীকে নিয়ে রাস্তায় নামব।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, দ্বীপবাসীর সরকারের কাছে একটিই দাবী যেকোন উপায়ে দ্রুত সময়ে শাহপরীরদ্বীপ সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হোক।