শাহেদ মিজান, সিবিএন:
কক্সবাজার জেলার ২৬ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার প্রধান ঠিকানা কক্সবাজার সদর হাসপাতাল। জেলা হিসেবে এই হাসপাতালটিই একমাত্র সরকারি উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্র। এক সময় স্বল্প পরিসর থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে ২৫০ শয্যা উন্নীত হয়েছে এই হাসপাতালটি। তবে চিকিৎসা সেবার মান ছিলো বরাবরই নি¤œমান ও বিতর্কিত। এখন আশার কথা হলো- সব অপবাদ ও আর অভিযোগ প্রায় কাটিয়ে উঠছে এই হাসপাতালটি। কেননা অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের জরুরী বিভাগ যাত্রা করেছে সেখানে। এতে এখন থেকে চিকিৎসা সেবাও হবে আন্তর্জাতিক মানের। গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে আন্তজার্তিক রেডক্রসের অর্থায়নের নবনির্মিত জরুরী বিভাগ যাত্রা করেছে। এর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবার ‘নতুন যুগে’ প্রবেশ করেছে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মায়ানমান থেকে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে বড় ধরণের চাপ বাড়ে। এতে চিকিৎসা সেবা দিতে সৃষ্টি হয় প্রকট সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা। এই সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। জাতিসংঘভুক্ত ও আন্তর্জাতিক নামকরা কয়েকটি সংস্থা সদর হাসপাতালের পরিবেশ ও পরিষেবা উন্নত করণে অর্থায়ন করেছে। এই সব অর্থে ইতিমধ্যে হাসপাতালের ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে জরুরী বিভাগকে আধুনিকায়ন করার জন্য অর্থায়ন করে আন্তর্জাতিক রেডক্রস। আন্তর্জাতিক রেডক্রসের অর্থায়নে দীর্ঘ ১০ মাস পর জরুরী বিভাগ আধুনিকায়নের কাজ সম্পন্ন হয়। সবকিছু সম্পন্ন করেই তা চালু করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস কক্সবাজার অফিসের কমিউনিকেশন অফিসার জামসেদুল করিম জানান, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে জরুরী বিভাগের সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে প্রায় ১০ মাস লেগেছে। আন্তর্জাতিক মান নিয়ে তৈরি করা হয়েছে সদর হাসপাতালের এই অত্যাধুনিক জরুরী বিভাগ। বিশ্বমানের এই জরুরী বিভাগে যুক্ত করা হয়েছে রোগ নির্ণয়ের অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। এখানে আরো থাকছে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা কক্ষে ৪টি করে সিট। সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবার দায়িত্বে থাকবেন ৭ জন চিকিৎসক ও ১২ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স। এছাড়াও সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিয়োজিত থাকবেন ১০ জন নিরাপত্তাকর্মী। আর্ন্তজাতিক রেডক্রস কমিটির তত্বাবধানে এবং আর্থিক সহযোগিতায় আধুনিক এ জরুরী বিভাগ স্থাপন, সংস্কার কাজ, যন্ত্রপাতি ক্রয়, কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে ১৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
শনিবার (২০ জুলাই) দুপুরে সংস্কারকৃত এই জরুরী বিভাগ উদ্বোধন করেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। সঙ্গে ছিলেন দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক রেডক্রস (আইসিআরসি’র) বাংলাদেশের গেড অফ ডেলিগেশন জেরার্ড পেট্রিকনেট।
উপস্থিত ছিলেন- হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুস সালেহীন, সহযোগি অধ্যাপক (সার্জারী) ডা. শাহা আলম, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী, নবনিযুক্ত আরএমও (প্রশাসন) ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া, আবাসিক ফিজিসিয়ান মোহাম্মদ শাহজাহান, আবাসিক সার্জন (আরএস) ডা. টুটুল তালুকদার প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সভার প্রধান অতিথি ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি চিকিৎসাসেবার মান বাড়াতে সব ধরণের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান। তিনি নতুনভাবে যাত্রা করা জরুরী বিভাগের যাবতীয় নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বমহলের সহযোগিতা কামনা করেন। সেই সঙ্গে কর্তব্যরত চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্ব পালনে আরো বেশী আন্তরিক হওয়ার আহবান জানান। বক্তব্য রাখেন দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক রেডক্রস (আইসিআরসি’র) বাংলাদেশের গেড অফ ডেলিগেশন জেরার্ড পেট্রিকনেট।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতার যুদ্ধচলাকালিন সময় থেকে ‘আইআরসি’ এখনও কাজ করে যাচ্ছে। আমরা দেখেছি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে সহিংসতা করে। আমরা চাই না বাংলাদেশে এমনটি হউক। আমরা চাই এখানকার মানুষ বিশ^মানের স্বাস্থ্যসেবা পেতে। এজন্য ‘আইসিআরসি’ কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠি ও রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার মান উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ‘আইসিআরসি’ কক্সবাজার অফিসের প্রধান সাবরিনা ডিনংক বলেন, এটা শুধু আন্তর্জাতিক মানের বিষয় নয়, এটি জীবন বাঁচানোর জন্য। যদি রোগীদেরকে সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেয়া যায় তাহলে তাদের বাঁচানোর হার অনেক বেশি বাড়ানো সম্ভব। এর জন্য জরুরি বিভাগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম সবার জানা উচিত। যেমন গুরুতর অসুস্থ রোগীদের সবার আগে চিকিৎসা দেয়া এবং রোগীদের সাথে পরিবারের একজনের বেশি সদস্য না থাকা, তখনই জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত স্বাস্থ্যসেবাকর্মীরা রোগীদের ভালোভাবে সেবা দিতে পারবেন।
জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক ডা মাহবুবুর রহমান, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের চৌধুরী, রেডক্রিসেন্ট কর্মকর্তা ছৈয়দ আলী নাসির খালেকুজ্জামান, পৌরসভার প্যানেল মেয়র হেলাল উদ্দিন কবির প্রমুখ। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুস সালেহীন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।