ইমাম খাইর, সিবিএন:
কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীর এক তথ্য সরবরাহকারী ও ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে চিহ্নিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের ভোটার হতে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে।
ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পরিষদের প্যাড ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী নাগরিক উল্লেখ করে প্রত্যয়নপত্র, জাতীয়তা সসদপত্রসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সরবরাহ করেছেন- এমন অভিযোগে পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সদস্যদের মাঝে তোলপাড় চলছে।
সম্প্রতি ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে এমন ৫ জন রোহিঙ্গাকে তথ্য সরবরাহের প্রমাণপত্র ও লিখিত অভিযোগ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদার একটি মামলায় কারান্তরীণ থাকার সুযোগে এমন জালিয়াতি করা হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
সুত্র জানায়, গত ২৩ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত ভারুয়াখালীতে ভোটার হালনাগাদ হয়। ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন উল্টাখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছেনুয়ারা বেগম।
অভিযোগ উঠেছে, মোটা অংকের বিনিময়ে ৫ জন রোহিঙ্গাকে ভোটার ফরম পূরণ করেন তথ্য সংগ্রহকারী ছেনুয়ারা বেগম। পরিষদের প্যাড ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী নাগরিক উল্লেখপূর্বক প্রত্যয়নপত্র, জাতীয়তা সনদপত্রসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সরবরাহ করেছেন প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল কাশেম। যথাসময়ে ফরমগুলো সুপারভাইজারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা করেন।
গত ২৩ মে বিশেষ কমিটির যাচাই বাছাইকালে জমাকৃত ফরম নং-৪৭৯৬৫১৮৩ ফাতেমা বেগম, ৪৭৯৬৫১৮৪ তছলিমা আক্তার, ৪৭৯৩০৪৬৩ হামিদা বেগম, ৪৭৯৬৫১৯৩ আবুল কালাম, ৪৭৯৬৫১৭৬ রবিউল আলম রোহিঙ্গা হিসেবে সনাক্ত করা হয়। যা বাতিল করে সংশ্লিষ্ট কমিটি।
রোহিঙ্গাদের ভোটার ফরম পূরণ কেন করালেন? জানতে চাইলে তথ্য সংগ্রহকারী ছেনুয়ারা বেগম কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন)কে বলেন, ওরা যে রোহিঙ্গা, তা আমি জানার সুযোগ নেই। চেয়ারম্যানের সীল-সাক্ষরযুক্ত সমস্ত ডকুমেন্ট এনে দিয়েছিলেন বলেই আমি ফরম পূরণ করেছিলাম। তাতে আমার দোষ কি? তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী যারা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দিয়েছে তাদের ফরম পূরণ করেছি। এরপর বাছাই কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
অভিযোগের বিষয়ে ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের কাছে জানতে চাইলে তিনি রোহিঙ্গাদের ভোটার হতে সহায়তা বা কোন ধরণের ডকুমেন্টস দেননি বলে উত্তর দেন।
এ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদার কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন)কে বলেন, জেনে শুনে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী নাগরিক উল্লেখ করে প্রত্যয়নপত্র, জাতীয়তা সনদপত্রসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সরবরাহ করা চরম অপরাধ। যা দেশের প্রচলিত আইন পরিপন্থি। অভিযুক্ত তথ্য সংগ্রহকারী ও সহায়তাকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন)কে বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার ফরম পূরণ করা হয়েছিল, ঠিক। বিশেষ কমিটির যাচাই-বাছাইয়ে তা বাতিল করা হয়েছে। জব্ধকৃত ফরমগুলো আমার হাতেই জমা আছে। রোহিঙ্গাদের ভোটার হতে একজন জনপ্রতিনিধি কেনইবা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দিয়ে সহায়তা করেছেন? সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহকারী কেন রোহিঙ্গাদের ফরণ পূরণ করালেন? তা শোকজ করা হবে।
তিনি বলেন, তথ্য সংগ্রহকারী থেকে শুরু করে ফরমগুলো পূরণে যে বা যারা জড়িত ছিল, সবার কাছে জবাব চাইব। লিখিত জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জালিয়াতিতে জড়িতদের সমোচিত শাস্তি দেয়া হবে।