আজাদ মনসুর

অনেকে মনে করেন বেতার, টেলিভিশন ও অনলাইন মিডিয়ার কারণে এখন প্রিন্ট মিডিয়ার গুরুত্ব ও প্রাধান্য কমে যাচ্ছে। তবে এটা অন্তত আমি মানতে রাজি না। কারণ, সংবাদের গ্রহণযোগ্যতা ও নেপথ্য এবং সংবাদের পেছনের সংবাদ খুঁজতে সংবাদপত্রের বিকল্প নেই। তারা মনে করেন, সাংবাদিকের জন্য সংবাদপত্রই উৎকৃষ্ট স্থান। কক্সবাজারের সাংবাদিকতার যতকথার আজকের বার পর্ব।
(এগার পর্বের পর থেকে) আবার দেখা যায়, অনেক ইলেকট্রনিক্স গণমাধ্যমের অফিসে সিভি ও একাডেমীক কাগজপত্র পাঠানো বিষয়ে সেখানকার কর্তাবাবুরা ওইসব কাগজপত্র মূল্যায়ন বা অনলাইন ভেরিফিকেশন করেন না। বিশেষ করে ঢাকায় টিভি মিডিয়ার অফিসে একাডেমীক কোয়ালিটি সম্পন্ন সাংবাদিক থাকলেও মাঠ পর্যায়ে সাংবাদিক নিয়োগ দিতে তারা মোটেও একাডেমীক কোয়ালিটি দেখেন না। আনুষ্ঠানিকতার দিক দিয়ে কাগজপত্র পাঠালেও তাদের কাছে টাকাই সব। যারা টাকা দিবে তাদের নিয়োগ দেয়া হবে। মাসে মাসে শুটকিসহ হরেক আবদার। কক্সবাজারে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু টিভির কেউ আসলে তো আর কথায় নেই। সারা দিন যাবে তাদের সাথে। মদ, নারীসহ অনেক আবদার মেটাতে হয় কক্সবাজারের প্রতিনিধি হিসেবে। প্রতিনিধিত্ব টিকিয়ে রাখতে যা যা করা দরকার।
কক্সবাজারের টিভি সাংবাদিকরা সিন্ডিকেট সাংবাদিকতায় মেতে উঠেছে দীর্ঘদিন। কোন প্রোগ্রামে যদি দাওয়াত পাওয়া হয়। তখন দেখা যাচ্ছে একজনেই সব টিভির দায়িত্ব নিয়ে নেন। কোন টিভি প্রতিনিধির জন্য ১০০০ টাকা, আবার কোন প্রতিনিধির জন্য ১৫০০-২০০০ টাকা আবার কোন প্রতিনিধির জন্য ৫০০০ টাকা বা তারও উপরে। সব বুমগুলো একজন ভিডিওম্যানকে দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে অনেক সাংবাদিক। এখন তো কথায় নেই সব টিভি সাংবাদিকগুলো এখন সোনাই সোহাগা। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্টি কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া কুতুপালং এলাকায় অবস্থান নেয়ার পর দেশি-বিদেশী এনজিওদের দৌরাত্মে কক্সবাজারসহ সারা বাংলাদেশের টিভি সাংবাদিকরা লালে লাল। বিভিন্ন কর্মশালায় টিভি সাংবাদিকদের দাওয়াত করলে এরা অংশগ্রহণ করে। কিন্তু একশ কর্মশালার মধ্যে ৫টি কর্মশালার ফুটেজ টিভিতে অন ইয়ার করেছেন কিনা সন্দেহ। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এনজিওর কর্তারাই ভাল বলতে পারবেন। এ নিয়ে চলে আয়োজক ও সাধারণদের মাঝে টিভি সাংবাদিকদের নিয়ে যত আলোচনা।
এব্যাপারে শুনেছি এবং আমি নিজেও অনেক প্রোগ্রামের দায়িত্ব টিভি সাংবাদিকদের দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা টাকা খেয়েছে কিন্তু টিভিতে প্রোগ্রাম দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। যখন প্রোগ্রাম টিভিতে দেখাবেন বলে টাকা নেন ওই কথিত টিভি সাংবাদিকরা তখন বলে ৫টার সংবাদ, ৮ টার সংবাদ, ১০ সংবাদ, ১২টার সংবাদগুলো দেখবেন। যখন এতগুলো সংবাদের একটাতেও দেখা যায় না তখন প্রোগ্রাম আয়োজকরা যোগাযোগ করলে তখন বলেন ২টার সংবাদ দেখুন কারণ তারা তো জানে ওই সময় সবাই ঘুম থাকেন। এভাবেই চলছে টিভি সাংবাদিকতা। যখন এ ধরনের আচরণ টিভি সাংবাদিকরা করে, তখন কক্সবাজার নয় পুরো সাংবাদিক সমাজের ভাবমূর্তিতে আঘাত করেন।

এভাবে আমাকে কয়েকবার ছোট করেছেন কক্সবাজারের টিভি সাংবাদিকরা। প্রোগ্রাম দেখার যোগ্যতা নেই। টাকা নিয়ে শুধু শুধু পিতা-মাতাকে কেন গালিগালাজ করতে বাধ্য করেন, আমি বুঝি না। ভালকে ভাল বলতে হবে। আমি কক্সবাজারের একজন টিভি সাংবাদিক দেখেছি গোলাম আযম খান। তিনি দিগন্ত টিভির (সাময়িক নিষেধাজ্ঞায় বর্তমান বন্ধ) কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি। আমার জানা মতে, কোন প্রোগ্রাম তিনি টাকার জন্য করেন নি। টিভিতে অনুষ্ঠান দেখানোর নামে টাকা নিয়েছেন কিনা জানিনা। দাওয়াত না পেলেও তিনি প্রোগ্রামে উপস্থিত হয়ে নিজ দায়িত্বে সংবাদটি টিভিতে অনইয়ার করেছেন, এমন নজির হাজারো। তখন কর্তৃপক্ষ ডেকে নিয়ে তাকে ধন্যবাদের সহিত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করতে আমি দেখেছি। গোলাম আযম খান’র মত সৎ আরও দু’একজন আছেন।  তবে, এত অল্প সংখ্যক লোক এককভাবে চাইলেই কক্সবাজারের টিভি সাংবাদিকতার পরিবর্তন আনতে পারবেন না। অন্তত হাতে গোনা দুই একজন ব্যক্তিই সাংবাদিকতাকে রক্ষা করেছেন।

আবার দেখা যায়, ‘ক’ একজন আবুল টিভির সাংবাদিক কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। ‘খ’ যদি কোনভাবে ‘ক’ এর চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে কর্তাবাবুকে সন্তুষ্ট করতে পারেন তাহলে কাল থেকে ‘খ’ ই তো আবুল টিভির সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে গেলেন। এছাড়াও অনেক টিভির সাংবাদিক আছেন দীর্ঘদিন ধরে এক টিভিতে বহাল রয়েছেন। তার যোগ্যতা বিচার করলে মাধ্যমিকের গন্ডি পার হতে পারেননি। তার যোগ্যতা হচ্ছে, টিভির সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক সাংবাদিক বলেন, সংশ্লিষ্ট টিভির বার্তা প্রধানসহ কয়েকজনকে মাসিক মাসোহারা দিয়ে আসছেন এবং অন্যান্য সুবিধাদি তো আছেই। এভাবেই প্রতিনিধিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন খোদ কয়েকটি টিভির সাংবাদিক।

বেশ তো! আমি বলবো যারা তরুণ টিভি সাংবাদিক যাদের একাডেমীক যোগ্যতা আছে। আমি জানি বেশ কিছু টিভি সাংবাদিক কম সময়ের মধ্যে কিছু নতুন টিভিতে নিজেদের যোগ্যতা বলে টিভি মিডিয়ায় নাম লেখিয়েছেন তাদের বলি আপনারা চাইলে পরিবর্তন আনতে পারেন। অনেকে বলবেন টিভি সাংবাদিকতা করিনি কিন্তু এই মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত সাংবাদিকদের নিয়ে কেন আলোচনা করলাম? কোন বিষয়ের সাথে না জেনে কলম ধরা হচ্ছে বোকামি। আগামী পর্বে টিভি সাংবাদিকদের শিক্ষনীয় কিছু লিখতে পারি। যা আমি নিজেও চর্চা করি। আমি প্রতিনিয়ত শিখি। পাঠ করি অজানাকে জানার।

এভাবেই চলছে কক্সবাজারের ইলেকট্রনিক্স গণমাধ্যমের সাথে জড়িত সাংবাদিকদের অবস্থা। আসলে কিছু কিছু টিভি মাধ্যম কোয়ান্টিটি বুঝে, কোয়ালিটি বুঝে না। ভাল কিছু সংখ্যায় কম হোক তারপরও পরিপূর্ণতার দিক দিয়ে কয়েকটি শ্রেণির গণমাধ্যম যদি আমাদের পরিবর্তন আনে তাতে ক্ষতি কি?

শৈল্পিক ও মানবিক সৌন্দর্যের মধ্যদিয়েই সাংবাদিকতা চর্চা করা বাঞ্চনীয়। আমি জানি অনেকে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবেন। কোন লাভ নেই তাতে, আপনার-আমার আগামীর ক্ষতি হবে। কারণ সামনে আপনার ও আমার প্রজন্ম স্বগৌরবে দাঁড়াতে পারবে না। আমাদের সময় এখন তাদের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা।

আজাদ মনসুর (এম.এ, এল.এলবি) শেষবর্ষ
আইটি স্পেশালিষ্ট, প্রণেতা-কক্সবাজার সাংবাদিক কোষ, সভাপতি-কক্সবাজার সাংবাদিক সংসদ (সিএসএস)
azadcox90@gmail.com ০১৮৪৫-৬৯ ৫৯ ১৬