সিবিএন ডেস্ক:
যেকোনো সময় নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা দিতে পারেন দলটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, এরশাদের অনুপস্থিতিতে পার্টির চেয়ারম্যান কে হবেন- এ নিয়ে সংকট দেখা দিতে পারে। দলের একটি অংশ এরশাদের অনুপস্থিতিতে জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান মানতে নারাজ। তাই যেকোনো সময় জিএম কাদের নিজেকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা দিতে পারেন। অথবা দলের বর্তমান মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার মুখ দিয়ে জিএম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা আসতে পারে।

ইতিমধ্যে এরই ধারবাহিকতায় বুধবার বিকেলে গুলশানের আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত এরশাদের কুলখানিতে জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্থলে ‘চেয়ারম্যান’ হিসেবে সম্মোধন করা হয়েছে। দলের প্রেস উইং থেকে পাঠানা কুলখানির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও জিএম কাদেরকে ‘চেয়ারম্যান’ উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে রংপুরে জানাজার পূর্বে দলের মহাসচিব মসিউর রহমান জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন। এসব ঘটনায় দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এরশাদের বনানী কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এই সংবাদ সম্মেলন থেকে জিএম কাদেরের চেয়ারম্যান ঘোষণা আসতে পারে। এরশাদের সর্বশেষ সাংগঠনিক আদেশ দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হতে পারে।

জাপা নেতারা বলছেন, এভাবে হুট করে সংবাদ সম্মেলন করে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলে দলের একটি অংশ বেঁকে যেতে পারেন। ওই অংশটি মনে করেন, পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সম্মতি নিয়ে করা হলে জিএম কাদের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন।

৬ এপ্রিল রাতে এক সাংগঠনিক আদেশে নিজের অবর্তমানে দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

সাংগঠনিক আদেশে সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, নিজের অবর্তমানে বা চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিদেশে থাকাকালীন দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করছি।

এ ঘোষণার পর জাতীয় পার্টির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। দলের একটি অংশ অভিযোগ করেন, জিএম কাদের তার অনুসারী রংপুরের কিছু নেতা-কর্মীর দ্বারা চাপের মুখে অসুস্থ এরশাদকে এ কাজে বাধ্য করেছেন। তারা এ পদ্ধতিতে জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান মানতেও নারাজ। এরপর থেকে এরশাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে এ নিয়ে তারা চুপসে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার এক সংসদ সদস্য জানান, এরশাদ অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই পার্টির স্থায়ী চেয়ারম্যান হওয়ার ব্যাপারে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে জিএম কাদেরর। ১৬ এপ্রিল গুলশানে ছাত্রসমাজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ বলেছিলেন, ‘জাতীয় পার্টির আগামী নেতৃত্ব কাউন্সিলের মাধ্যমেই নির্ধারণ করা হবে। এ কথা বলার পর থেকেই জিএম কাদের হতাশ হয়ে পড়েন। তখন থেকে দলের চেয়ারম্যান হতে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এরশাদের বাসভবনে জিএম কাদেরের অনুসারী রংপুরের নেতা-কর্মীরা পাহারা বসায়। পরবর্তীতে অনেকটা জোর করে একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে এরশাদকে। পার্টির চেয়ারম্যান কে হবেন এ বিষয়টিও এরশাদের মুখ দিয়ে ঘোষণা করানো হয়।

জাতীয় পার্টির একটি অংশের নেতাদের অভিযোগ, ৪ মে মধ্যরাতে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় সাংবাদিক ডেকে অসুস্থ অবস্থায় ছোট ভাই জিএম কাদেরকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন এরশাদ। যখন তিনি ঘোষণা দিচ্ছিলেন এ সময় ঘুমের ঘোরে ঢোলে পড়ে যাচ্ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি। ভাল করে পড়তে পারছিলেনও না। এ সময় জিএম কাদের ছাড়া দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ ‍উপস্থিত ছিলেন না। অনেকটা জোর করে তাকে দিয়ে মধ্য রাতে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

তাদের মতে, এভাবে পার্টির চেয়ারম্যান হলে জিএম কাদের দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের কাছে এরশাদের মতো গ্রহণযোগ্য হতে পারবেন না। বরং দলের মধ্যে তাকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হবে এবং একটা বিভক্তি তৈরি হবে। পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা কিংবা দলের জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে জিএম কাদেরর চেয়ারম্যান হওয়া উচিত। তাহলে কোনো বিতর্ক ছাড়াই তিনি দলের নেতৃত্ব দিতে পারবেন।

এর আগে ২২ মার্চ জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেন এরশাদ। পরে সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকেও সরিয়ে দেয়া হয় তাকে। এ ঘটনার পর রংপুরের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনের হুমকি দেন। একপর্যায়ে গণপদত্যাগসহ ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তারা এরশাদকে সময় বেঁধে দেন। নেতা-কর্মীরা এরশাদের বাসায় পাহারা বসান। সিনিয়র নেতাদের কাউকেই এরশাদের বাসায় ঢুকতে দেননি। অবশেষে ১৩ দিনের মাথায় জিএম কাদেরকে ৪ এপ্রিল জাতীয় পার্টি কো-চেয়ারম্যান পদে বহাল করার সাংগঠনিক আদেশ দেন এরশাদ। একদিন পর ৬ এপ্রিল জিএম কাদেরকে নিজের অবর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি।

জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান করা নিয়ে জাতীয় পার্টির আরেকটি অংশের নেতারা বলেন, জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ তার জীবদ্দশায় নিজের অবর্তমানে ‘পার্টির চেয়ারম্যান’ ঘোষণা করেছেন। যেহেতু পার্টির চেয়ারম্যান এখন নেই, অটোমেটিকলি এরশাদের আদেশ বলে জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান। তিনিই দলের নেতৃত্ব দেবেন এটাই স্বাভাবিক। এ নির্দেশনা মেনে সবার উচিত জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নেয়া। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করা উচিত নয় বলেও মনে করেন দলের ওই অংশের নেতারা। এর ব্যত্যয় ঘটলে তারা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন।

-রাইজিংবিডি