ড. আবদুল্লাহ আল মামুন
মার্কিন মহাকাশযান অ্যাপোলো–১১-এ চড়ে নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং চাঁদের মাটিতে প্রথম মানুষ হিসেবে পা রাখেন। এই অবিস্মরণীয় ঘটনা ঘটেছিল ১৯৬৯ সালের ২০ শে জুলাই। কয়েকদিন পরই পূর্ণ হবে মানুষের চন্দ্র বিজয়ের ৫০ বছর।
ইতালিয়ান বিজ্ঞানী গ্যালিলিও ১৬০৯ সালে নিজের উদ্ভাবিত টেলিস্কোপ দিয়ে প্রথম চাঁদের পৃষ্ঠতল দেখতে পান। এর পর উনিশ শতকের প্রথম দিক থেকে চাঁদ নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা বেগবান হয়। তবে চাঁদে প্রথম অভিযান শুরু করে রাশিয়া। ১৯৫৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরী লুনা-২ কৃত্রিম উপগ্রহ চন্দ্র পৃষ্ঠে অবতরণ করে। এরপর থেকে চাঁদের মানুষ পাঠাতে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে রাশিয়া ও আমেরিকা। এই প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয় আমেরিকা।
১৯৬১ সালের ২৫ মে, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ষাট দশক শেষ হবার আগেই যুক্তরাষ্ট্র চাঁদে মানুষ পাঠাবে বলে ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার নয় বছরের মধ্যে মার্কিন মাহকাশ সংস্থা নাসা চাঁদে মানুষ পাঠাতে সফল হয়। ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই, নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে অ্যাপোলো-১১ রকেটে চেপে নীল আর্মস্ট্রংদের যাত্রা শুরু হয়। মিশন অধিনায়ক আর্মস্ট্রংয়ের সহযাত্রী ছিলেন মাইকেল কলিন্স ও এডউইন অলড্রিন। চন্দ্রযানের প্রথম অংশ কমান্ড মডিউল চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে থাকে আর অপর অংশ লুনার মডিউল ২০ জুলাই চাঁদে অবতরণ করে। ২৪ জুলাই চন্দ্র বিজয়ীরা ফিরে আসেন পৃথিবীতে।
নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে নামার প্রায় ১৯ মিনিট পর তাঁর সহযাত্রী বাজ অলড্রিনও নেমে আসেন। নভোচারীরা চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে ২২ কেজির মতো চাঁদের মাটি ও শিলা। নভোচারীরা চাঁদের বুকে রেখে আসেন কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, আমেরিকার পতাকা, পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের মানচিত্র এবং একটি ক্ষুদ্র সিলিকন মেসেজ ডিস্ক, যার মধ্যে রেকর্ড করা আছে পৃথিবীর ৭৩টি দেশের প্রধানসহ আমেরিকার কয়েক প্রেসিডেন্টের বাণী। বিজ্ঞানীদের বিশ^াস, চাঁদের বুকে রেখে আসা স্মারকচিহৃগুলো একদিন উন্নতর কোনো সভ্যতার এলিয়েনদের চোখে পড়বে। তখন পৃথিবীর মানচিত্র দেখে তারা মানব জাতির সাথে যোগাযোগ করতে সচেষ্ট হবে।
তবে মানুষের চাঁদে আবতরণের ঘটনা একটি নিছক সাজানো নাটক, এমন উদ্ভট তত্ত্বও অনেকে এখনো বিশ্বাস করেন। জার্মান-আমেরিকান লেখক বিল কেইসিং ১৯৭৬ “উই নেভার ওয়েন্ট টু মুন” নামের একটি বই লিখে বিশে^ আলোড়ন তোলেন।
মহাকাশ গবেষণায় প্রথমে কিছুটা অমনোযাগী থাকলেও, পৃথিবীর অন্য এক পরাশক্তি চীন আর পিছিয়ে থাকতে চায়না। এ বছরের শুরুতে ৩ জানুয়ারী চাঁদের যে অংশটি পৃথিবী থেকে দেখা যায়না, সেই দিকে মনুষ্যবিহীন রোবটযান চাঙ-আ ৪ নামিয়েছে চীন। এছাড়া ২০৩৬ সালের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে চীন। চীনের চাঁদে মানুষ পাঠানোর ঘোষণা দেয়ার পর আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা আবারো চাঁদে নভোচারী পাঠাবে বলে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে ষাট দশকের মত পরাশক্তিগুলোর মধ্যে মহাকাশ-কেন্দ্রিক প্রতিযাগীতা আবার জমে উঠেবে বলে মনে হচ্ছে।
চাঁদে পা রেখে নীল আর্মস্ট্রং প্রথম যে বাক্যটি উচ্চারণ করছিলেন, তা হল – “একজন মানুষের এই ছোট পদক্ষেপ মানব জাতির জন্য এক বিরাট অগ্রযাত্রা”। সত্যিই তাই। এই বিজয়কে আমেরিকার একক বিজয় হিসেবে দেখলে ভুল হবে। চন্দ্র বিজয়ের পেছনে যে আদি গুহামানব প্রথম পাথরে পাথর ঘষে আগুন জে¦লেছিল তারও আবদান রয়েছে। চন্দ্র বিজয় মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্তের সূচনা করে। মানুষ এখন মঙ্গল গ্রহে যাবারও স্বপ্ন দেখছে।
(লেখকঃ কাতার সরকারের নগর পকিল্পনাবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার কৃতি সন্তান)
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।