আজাদ মনসুর

দশম পর্বে বলছিলাম আমার অত্যন্ত কাছের একজন বড় ভাই আমার পিতৃতুল্য সিনিয়র সাংবাদিক আমাকে বরাবরের ন্যায় অন্যান্য সহকর্মীদের মত ফোন করে সাহস যুগিয়েছেন, প্রেরণা দিয়েছেন তোমার সাহসী লেখনি চালিয়ে যাও। শুধু তাই নয়, তিনি এত বিনয় দেখিয়েছেন তাতে আমি লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম। কি বললো বুঝে উঠতে পারিনি। বলছিলাম সিনিয়র সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ’র কথা। ওনার প্রতি অনেক অনেক মমতাময় শুভেচ্ছা ভালবাসা। আপনার আশাজাগানিয়া সাহস আমাকে আরও শক্তি বাড়িয়ে দিলো ধারাবাহিক পর্বগুলোর স্বার্থে।
পাঠক, তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে অনলাইন ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার প্রসার দিনদিন বেড়েই চলছে। টেলিভিশন বা অনলাইন পত্রিকা নির্ভরযোগ্যতার দিক থেকে তুলনামূলকভাবে ছাপানো সংবাদপত্রের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। তবে যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে তাৎক্ষনিক ছড়িয়ে যাচ্ছে অনলাইন ও টিভি সাংবাদিকতা। সাংবাদিকদের রিপোর্ট তৈরির যে ফাইভ ডব্লিউ ওয়ান এইচ ফর্মুলা, সেই ফর্মুলা এখন চলছে না। কারণ, এই ডিজিটাল যুগে কী, কখন, কোথায়, কিভাবে, ঘটনা ঘটছে তা খুব তাড়াতাড়ি ইন্টারনেট ও টিভির মাধ্যমে দ্রুত সবাই জেনে যাচ্ছেন। সকালবেলায় পত্রিকা পাঠকের কাছে সেটা পুরনো বা বাসি খবর। তাই এই বিষয়টি সাংবাদিকতার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। পাঠকদের দেয়া কথা অনুযায়ী কোন একটি পর্ব টিভি সাংবাদিকদের নিয়ে লিখবো বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম। কক্সবাজারের সাংবাদিকতার যতকথা’র আজকের এগার পর্ব।
সাংবাদিকদের আশা করা ঠিক নয় যে, সব পাঠক সব বিষয়ে আগ্রহী হবে। এটা বলার যুক্তিকতাও রয়েছে। পাঠক, অধিকাংশ পাঠকের সিরিয়াস বিষয়ে আগ্রহ কম থাকে। তাই প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে দরকার আধুনিক শিক্ষা ও চিন্তা-চেতনা সমৃদ্ধ জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগামী সাংবাদিক। যারা সব সময় তথ্য ও তত্ত্বে এগিয়ে থাকবেন, ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করবেন, তথ্যের প্রমাণ ও অনুসন্ধানে সদা ব্যস্ত থাকবেন। শিক্ষিত মার্জিত ও নিষ্ঠাবান ভালো সাংবাদিক ছাড়া ভালো টিভি সাংবাদিক হবেন না। কিন্তু এখনো আমাদের সমাজে সৎ, শিক্ষিত ও ভালো সাংবাদিকের বড়ই অভাব। ভালো সাংবাদিক বেশি দরকার, যারা সবকিছু ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করবেন, সঠিক তথ্য ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ তুলে আনবেন।
তাই টিভি সাংবাদিকতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সৎ, যোগ্যতা সম্পন্ন, সত্যনিষ্ঠ, পক্ষপাতমুক্ত সাংবাদিকতা। দেশের এতগুলো টিভি মিডিয়াতে উক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন সাংবাদিকদের নিয়োগ দেয়া হয় কিনা? কিছু টিভিতে মোটামুটি একাডেমিক স্ট্যাটাস সম্পন্ন সাংবাদিক নিয়োগ দিলেও অনেকগুলো টিভিতে খুব কম সংখ্যক যোগ্যতা সম্পন্ন, সৎ মানসিকতা সম্পন্ন সাংবাদিক নিয়োগ দেয়া হয়না। অধিকাংশ গণমাধ্যমের পক্ষে এই কাজটা খুব কঠিন মনে করেন। কিন্তু কেন?
কারণ, শিক্ষিত মার্জিত ও নিষ্ঠাবান ভালো সাংবাদিক ছাড়া ভালো টিভি মাধ্যম আশা করা উচিত বলে মনে করিনা। কিন্তু কথা হচ্ছে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার মাধ্যমগুলোতে শিক্ষিত, মার্জিত, স্মার্ট ও নিষ্ঠাবান ভালো সাংবাদিক তারা নিয়োগ না দেয়ার কারণ খোঁজ অনেকে অনেক কথা বলবেন। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে এ জগত নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাই অনেক কিছু দেখেও দেখিনা। তবে আর নয়, কোন প্রোগ্রামে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাথে যারা কাজ করেন তারা এক সাথে ওই প্রোগ্রামগুলো কাভার করতে যান। তখন অনেক কিছুর সাথে অভিজ্ঞতা হয়। কোন টিভির সাংবাদিক কি রকম। এদের দেখলে ও তাদের সাথে মিশলে বুঝা যায় ওই টিভির ম্যানেজম্যান কি রকম। শুধু আমি কেন আপনিও বুঝতে পারবেন এটি।
যদি টিভিগুলোতে ভাল মানের শিক্ষিত সাংবাদিক নিয়োগ দেয়া হয় অবশ্যই তাদের বেতন/ভাতাদি ছাড়াও অন্যান্য সুবিধাদি পাবেন এটা যেমন সত্য আবার টিভিগুলোর কোয়ালিটি বজায় রাখার ফলে সংশ্লিষ্ট জেলার সমাজ ব্যবস্থা আলাদা ভাবে আলোকিত হবে এটাও সত্যি। কিন্তু এই এলাকার সাধারণ মানুষদের ভাস্য মতে কক্সবাজারের যে ক’য়জন টিভি সাংবাদিকতায় যুক্ত আছেন তাদের মধ্যেই কয়জনই বা যোগ্যতা সম্পন্ন। দু’একজন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিক ছাড়া বলুন তো কক্সবাজারের টিভি সাংবাদিকদের একাডেমীক যোগ্যতা কয়জনের আছে।
একজন সাংবাদিকের সামনে অন্য সাংবাদিকদের নিয়ে এহেন মন্তব্য শুনতে আপনি কি করবেন? বিষয়গুলো নিয়ে কেউ বলেনি বলেই দিনদিন অযোগ্য সাংবাদিকদের আধিক্য সর্বত্র। আমার তো ইচ্ছে হচ্ছে এখন টিভির নাম ও প্রতিনিধিদের নাম উল্লেখ করে কার যোগ্যতা কি উল্লেখ করতে। মানুষ এমনিতে ক্ষেপেনা। কিছু অপরিপক্ষ অযোগ্য কুলাঙ্গারের হাতে যখন টিভির বুম, তাদের প্রতি অতিষ্ট হয়ে মানুষের অভিযোগের ধরণই এরকম হয়! এটা বাস্তবতার নিরিখে চিন্তা করলে আপনি আমি রীতিমত ভাবতে পারবো তবে কাজের কাজ কিছুই হবেনা। এটা নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে, বসে সমাধানে আসতে হবে অন্যতায় এদের দৌরাত্ম ক্রমে বেড়েই চলবে। ফলে আপনার আমার মূল্যবোধে আঘাত আসবেই থাকবে এটায় বাস্তব। ভাইরে, আপনাদের কারণে অনেক কথা শুনেছি, এখনও শুনছি বরাবরের ন্যায়। কেন যে সাংবাদিকতায় নাম লেখিয়ে ছিলাম, আপসোস! তার মানে আপনাদের পরিবর্তন আসেনি। কোন প্রোগ্রাম বা কোন সংবাদ করতে বুমটি হাতে নিয়ে বাহাদুরের মত চললে ভালো সাংবাদিক হওয়া যায়না। কোন মানুষের পকেট থেকে আরেকটি পকেটে টাকা নিয়ে আসার মধ্যেও একটা কোয়ালিটি দরকার আছে।
যোগ্যতার কথা যখন আসলো তখন বলতে হয়, কক্সবাজারের একটি ইতিহাস সম্বলিত গ্রন্থে অনেকে শিক্ষাগত যোগ্যতায় ভুল তথ্য দিয়েছেন। যারা ভুল তথ্য দিয়ে মানুষ বিভ্রান্ত করেছেন তাদেরও মানুষ চেনেন। আমি ডিগ্রি পাশ বললে তো আর ডিগ্রি পাশ হয়ে গেলাম না। তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক-শিক্ষিকারা তো আছেই। আপনাদের মান যাবে তাতে, মান থাকলেই তো যাবে নাকি! এই হচ্ছে টিভি সাংবাদিকদের একাডেমীক যোগ্যতা চিত্র। ছিঃ অষ্টম, ৯ম ও ১০ম শ্রেণি পাশ করেননি অনেক টিভি সাংবাদিক আছেন। যারা অন্যের সহযোগিতা ছাড়া কিছু করতে পারেন না। আমি বুঝিনা, যে কাজের আমার নূন্যতম যোগ্যতা নেই সেই কাজে কেমনে দায়িত্ব নিয়ে বসি?
মনে রাখতে হবে আমি পুরো কক্সবাজারকে সারা বিশ্বময় তুলে ধরছি। কক্সবাজারের টিভি সাংবাদিকতায় এখন একটা বিষয় মহামারিতে রূপ নিয়েছে। কিছু অতি চেতনাধারী লোকদের নম দিতে না পারলে এটা একটি অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হয়। তাই তারা কি করেন? একাডেমীক শিক্ষাসহ সব যোগ্যতা উপেক্ষা করে শুধুমাত্র ওই কথিত কয়েক সাংবাদিকদের খাঁটি তেল, নম, কথায় কথায় উঠবস যারা করতে পারেন তাদেরকে টিভি সাংবাদিকতায় নিয়ে আসেন। এজন্য তারা ঢাকায় টিভি মিডিয়াগুলোতে টাকাসহ ওই যে নম দেয়া সাংবাদিকদেরকে সুপারিশ পূর্বক নিয়োগ দিতে তৎপরতা চালান। এজন্য কোন কোন টিভি সাংবাদিকের তালিকায় নাম উঠাতে তাদের গুণতে হয় ১,৫০,০০০-২,০০,০০০ টাকা। আমার কথায় আপনারা অনেকেই মত প্রকাশ করবেন এই ভাবে ওই চেতনাধারী কয়েক সাংবাদিকের কথা ছাড়া নম দেয়া সাংবাদিকরা হাগুও দিতে যাননা। চলবে

আজাদ মনসুর (এম.এ, এল.এলবি) শেষবর্ষ
আইটি স্পেশালিষ্ট, প্রণেতা-কক্সবাজার সাংবাদিক কোষ, সভাপতি-কক্সবাজার সাংবাদিক সংসদ (সিএসএস)
azadcox90@gmail.com ০১৮৪৫-৬৯ ৫৯ ১৬