রিয়াজ উদ্দিন, পেকুয়া:
পেকুয়ায় খালের বাঁধ অপসারন করতে এবার মাঠে নামল ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের প্রতিনিধি টিম। প্রবাহমান খালে কৃত্রিম বাঁধ তৈরী করে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রান্তে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। এতে করে উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম ও দক্ষিন অংশের বিপুল জনগোষ্টী পানিবন্ধী হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে ওই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়েছে। পানির দুর্ভোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে এবার পেকুয়ায় ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি টিম সদর ইউনিয়নের পানিবন্ধী এলাকা পরিদর্শনে যায়। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের ওই টিম নৌকা নিয়ে সদর ইউনিয়নের দক্ষিন ও পশ্চিম অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন।
১৫ জুলাই সকাল ১০ টার দিকে ওই প্রতিনিধি টিম সদর ইউনিয়নের পশ্চিম জোন বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন টিমটির নেতৃত্ব দিয়েছেন সদর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি এম, আজম খান। প্রায় ১০/১৫ জনের প্রতিনিধি ওই টিমটি সদর ইউনিয়নের মইয়াদিয়া, জালিয়াখালী, মগকাটা, সিরাদিয়া, টেকপাড়া, বিলহাচুরাসহ আরও বিভিন্ন গ্রাম ও নিন্মাঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা পানি চলাচল খাল থেকে অন্তত ৩ টি বাঁধ অপসারন করেছেন। এ সব খালের মুখ আটকিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি মাছ আহরন করছিলেন। পানির ¯্রােতধারায় তারা মাছ ধরার জাল পাঁতে। খালের পথ বন্ধ করে এ সব স্থানে মাটির বাঁধ ও বাঁশের ধারিয়া পুঁতে ফেলে। আ’লীগের প্রতিনিধিরা সদর ইউনিয়নের অন্যতম পানি চলাচল খাল চিপখালী থেকে বিপুল জাল ও ধারিয়া অপসারন করেছে। এ দিকে পানি চলাচল খালে কৃত্রিম বাঁধ তৈরী হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে পেকুয়ায়। মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ওই দিন আ’লীগের ওই টিমটি জানমালের ক্ষতি লাঘব করতে নিন্মাঞ্চলে গিয়েছেন। সদরের সভাপতি এম, আজম খানের নেতৃত্বে এ প্রতিনিধি টিমে ছিলেন যুবলীগ পেকুয়া উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন, সদর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মাহাবুব উল করিম মেম্বার, ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য যুবলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম, ২ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সাজ্জাদুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা নুরুল আজিম, ৩ নং ওয়ার্ড আ’লীগ সম্পাদক মো: সোহেল, সাবেক সভাপতি আবদুল মান্নান প্রমুখ। এ সময় সদর ইউপির গ্রাম পুলিশও প্রতিনিধি টিমকে সহায়তা করেছেন। সুত্র জানায়, জালিয়াখালী পয়েন্টে প্রবাহমান চিপখালী খালে একাধিক বাঁধ তৈরী হয়েছে। এতে করে ওই খালের বিভিন্ন অববাহিকায় পানি চলাচল থেমে গেছে। মইয়াদিয়া থেকে জালিয়াখালী পর্যন্ত ওই খালটিতে প্রচুর কৃত্রিম বাঁধ সৃষ্টি করে। এ দিকে পানি চলাচল খালে নদী পয়েন্টে পাউবোর স্লুইচ গেইট রয়েছে। সিরাদিয়া পয়েন্টে পাউবোর ৩৭ নং ¯ুøইচ গেইটটি প্রায় বিকল হয়ে গেছে। গ্রামবাসী জানায়, ভোলাখালে পাউবো প্রায় ৫০ বছর আগে ওই স্লুইচ গেইট স্থাপন করেছে। বর্তমানে স্লুইচ গেইটের দুটি দরজার মধ্যে একটি বিকল রয়েছে। স্লুইচ গেইটটি সংস্কার থেকে বঞ্চিত রয়েছে। পানি চলাচল পথ সরু থাকায় পানির প্রবাহ থেমে গেছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য কৃত্রিমভাবে বেড়িবাঁধের সিরাদিয়া পয়েন্টে আরও ৪ টি পলবোট স্থাপন হয়েছে। স্থানীয় উদ্যোগে এ সব পলবোট বসানো হয়। পলবোটের ওই অংশ দিয়ে ভিতরের পানি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে সদর ইউনিয়নের পশ্চিম অংশে বন্যা পরিস্থিতি গত দুইদিনের ব্যবধানে উন্নতি হয়েছে। মনির, আবদু রশিদ, কবির আহমদ, আজমগীর, আলী হোসেন, সোহেল, জসিম উদ্দিন, ছৈয়দ নুর, হারুনুর রশিদ, মোহাম্মদ নবী, আহমদ হোসেনসহ সদর ইউনিয়নের পশ্চিম অংশের আরও একাধিক লোকজন জানায়, পানি নিয়ে রাজনীতি চলছে। আগামী ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের মধ্যে প্রচার প্রচারনা ও অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। এক পক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করতে বিভিন্ন অপকৌশল লক্ষ্য করছি আমরা। অতীতে ভোট করেছে এমন প্রার্থী এলাকায় ঘুরাঘুরি করছে। তার টার্গেট হচ্ছে বিপক্ষে কে প্রার্থী হচ্ছেন। তাকে নিয়ে অপপ্রচার। আমরা বাস্তব চিত্র প্রত্যক্ষদর্শী। এখানে রাজনীতি করার কোন প্রয়োজন নেই। আ’লীগের উপজেলা পর্যায়ের এক নেতা তার সংগঠনের ইউনিয়নের শীর্ষ নেতার মধ্যে প্রকাশ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এটি ঘোলা পানিতে মাছ ধরার মত পরিস্থিতি। পেকুয়া সদর ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি ও প্রতিনিধি টিমের প্রধান এম, আজম খান জানায়, আ’লীগ সব সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকে। আমরা নিপীড়িত মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করি। মানুষের দুর্ভোগ দেখতে পেয়ে আমরা পানিবন্ধী এলাকায় গিয়েছি। খালের বাঁধ অপসারন করেছি। বেশ কিছু জাল ও ধারিয়া অপসারন করেছি। সিরাদিয়ায় ৪ টি পলবোট দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। সরকারী স্লুইচ গেইটটি প্রায় অকেজো। দ্রুত সময়ে স্লুইচ গেইটটি পুন: সংষ্কার কাজ বাস্তবায়নের জন্য পাউবোকে অনুরোধ করছি। এমপি মহোদয়কেও এ সব বিষয়ে অবগত করেছি। পেকুয়া সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মাহাবুল করিম জানায়, আমরা সরেজমিনে গিয়েছিলাম। খাল থেকে কয়েকটি বাঁধ ও বেশ কয়েকটি জাল অপসারন করেছি। আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে এ সম্পর্কিত বিষয় অবহিত করি। তবে পশ্চিম অংশে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সদর ইউনিয়নের পূর্ব অংশে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সোনাজান পাড়া পানি আটকিয়ে জলাবদ্ধতার অভিযোগ ছিল। তারা ৪ দিন আগে বিকল্প পথ দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করেছেন। আসলে কিছুটা অপপ্রচার হচ্ছে। এ সব এদের ভোটের রাজনীতিক কৌশল। স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীদের ঘায়েল করার কৌশল।