|| মুহাম্মদ আতিকুল ইসলাম ||

বিশ্ব মানবতার একমাত্র ধর্ম ইসলামে:- কোরআন ও সুন্নাহর বিধান মোতাবেক আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক ও খোঁজখবর রাখা কে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।ইসলাম একটি কালজয়ী, সাম্যের ধর্ম, যা বনী আদমের একে অপরের মাঝে প্রেম -প্রীতি আর ভালবাসার সু-নিপুন সৌধ নির্মাণ করে।বিশেষ করে নিজ আত্মীয় স্বজনের সাথে সু -সম্পর্কের মজবুত ভীত স্থাপন করা শুধু ইসলামী শরীয়তের বর্ণ বিন্যাসের নয় মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির ও চাহিদা। যেহেতু বাংলায় আত্মা থেকে আত্মীয়তা শব্দের উৎপত্তি।

অপর দিকে কালামে পাকে “আরহাম”শব্দ টি ব্যবহার করা হয়েছে যা মূলত:একটি বহুবচনবোধক শব্দ। এর একবচন হচ্ছে “রেহম”আর “রেহম” অর্থ জরায়ু বা গর্ভাশয়ু। অর্থাৎ জন্মের প্রক্কালে মায়ের উদরে যে স্থানে সন্তান অবস্থান করে।জন্ম-সূত্রেই মূলত: মানুষ পারস্পারিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।এই সম্পর্ক কে ইসলামী পরিভাষায় “সেলায়ে রেহমী”বলা হয় এর ব্যত্যয়, সৃষ্টি হলে”কেত্বয়ে -রেহমী” বলে। বর্তমান সমাজে বিশেষ করে অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়া আত্মীয়দের সাথে বৈষাম্য করা হয়। যাহা ইসলামে কঠোরভাবে নিষেদাজ্ঞা রয়েছে। ইসলাম উঁচু -নিচু আশরাফ -আতরাফ তথা ইতর -ভদ্রের ব্যবধান ভূলে গিয়ে যেন সবাই একই মানদন্ডে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে বৈষাম্যবিহীন সোনালী সমাজ গড়ে তুলেন সে বিষয়ে জোর তাগিদ দিয়েছেন।

অথচ মানুষের দুর্যোগ সময়ে সর্বপ্রথম আত্মীয়রা
যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়ায় তা কিন্তু অন্যদের তুলনায় অদ্বিতীয়। আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ নেওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি হতে পারে,যেমন অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া,মুছিবতে পতিত হলে সাহায্য
করা,বিশেষ সময়ে খাদ্যসামগ্রী -পোশাক এবং অন্যান্য উপঢৌকন হাদিয়া দেওয়া।এক মিনিট ফোন করে খোঁজ নেওয়া। ফোনে আত্মীয়দের খোঁজ নেওয়ার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস কে মানবতার ধর্ম ইসলামে ছদকার ছাওয়াব হিসেবে গণ্য করেছে। এটা এমন ছাওয়াব যাহা কিয়ামতের বিচার দিবসে ছাওয়াবের পাল্লায় রাখা হবে।

সূরা নিসার ১নং আয়াতে আত্মীয়তার সম্পর্কের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইরশাদ করা হয়েছে।আত্মীয় -জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো।নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছে।

রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:-
যে ব্যক্তি তার রিযিকের প্রাচুর্য এবং দীর্ঘ জীবনের প্রত্যাশা করে তার উচিত আত্মীয় -স্বজনের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা (মেশকাত -৪১৯ পৃ:)
এই হাদীসে আত্মীয় স্বজনের সাথে সু-সম্পর্ক রাখার দুইটি উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে।১.আত্মীয় -স্বজনের সাথে সু-সম্পর্ক রাখলে পরকালে তো কল্যাণ লাভ হবেই ২.ইহকালেও সম্পদের প্রাচুর্য এবং আল্লাহর রাসুলের সা.পক্ষে থেকে দীর্ঘ জীবন লাভের আশ্বাস সম্পর্কিত সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।কালামে পাকে ইরশাদ করেছেন :- আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা সদাচরণ এবং আত্মীয় -স্বজন কে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন।তিনি তোমাদের উপদেশদেন -যাতে তোমরা স্বরণ রাখ (সূরা নাহল ৯০)

পবিত্র হাদিসে কুদসীতে ও মহান আল্লাহ আত্মীয়তার বন্ধনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে ইরশাদ করেছেন:- আমিই আল্লাহ আমিই রহমান। আমি রেহেম (আত্মীয়তার সম্পর্ক) সৃষ্টি করেছি এবং তাকে আমার (রহমান) নাম থেকে নাম দিয়েছি (নামকরণ করেছি) সুতরাং যে উহাকে মিলিয়ে নিবে (রক্ষা করবে) আমিও তাকে ( নিজের রহমতের সাথে) মিলিয়ে নিবো( রক্ষা করবো) আর যে উহাকে ছিন্ন করবে আমি তাকে (আমার রহমত থেকে)ছিন্ন করে দিবো।( জামে তিরমিজী :-২১১)

অপর হাদিসে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করাকে মুমিনের নিদর্শন হিসেবে আক্ষা দেয়া হয়েছে।
রাসুল সা.ইরশাদ করেছেন:-
যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার এবং পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে ( ছহীহ বোখারী -৬১৩৮)
রাসুল সা.ইরশাদ করেছেন:-
যে ব্যক্তি এই কথা পছন্দ করে যে,তার রিযিক প্রশস্ত করে,দেয়া হোক এবং তার হায়াত বাড়িয়ে দেয়া হোক, তাহলে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। ( ছহীহ বোখারী :-৫৯৮৬)

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা অনেক বড় গুনাহ তাইতো রাসুল সা.এ ব্যাপারে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন:-আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।( ছহীহ বোখারী :-৮)

পরিশিষ্ট:-কোরআন ও হাদীস দ্বারা স্পষ্ট হলো আত্মীয়দের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা, তাদের হক আদায় করা ইসলাম ধর্মে ইবাদত!হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।তাই উঁচু নিচু ধনী -গরীব বৈষাম্য বাদ দিয়ে সবাই কে একই মানদন্ডে গ্রহণ করি।তাতেই রয়েছে উভয় জাহানের কামিয়াবী ও মাওলার সন্তুষ্টি।

লেখক :-তরুণ আলেম ও গবেষক, সেক্রেটারি:-পেকুয়া উপজেলা আল-কোরআন ফাউন্ডেশন
পেকুয়া,কক্সবাজার।E-mail:-m.atikulislam2019 gmail.com