বাংলা ট্রিবিউন

দেখতে দেখতে শেষের পথে দ্বাদশ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এবারের আসর ইতিহাস লিখতে যাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বে। কারণ এবারই নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে পেতে যাচ্ছে ক্রিকেট। নিউজিল্যান্ড আর ইংল্যান্ড দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেললেও শিরোপার মধুর স্বাদ পায়নি কখনও। এবার দুটি দলের সামনেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দারুণ সুযোগ।

তার আগে দেখে নেওয়া যাক আগের ১১টি আসরের ফাইনালে কারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

১. ১৯৭৫ বিশ্বকাপ ফাইনাল   

প্রথম আসরটির মর্যাদা একটু বেশি। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এই আসরে দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে অংশ নিয়েছিল ৮টি দল। আবার তখন ওয়ানডের পরিধি ছিল ৬০ ওভারের!

সেই টুর্নামেন্টে ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭ রানে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নাম লেখায় ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে সংগ্রহ করে ২৯১ রান। জবাবে অস্ট্রেলিয়া ৫৮.৪ ওভারে ২৭৪ রানেই যায় গুটিয়ে। ম্যাচ সেরা ছিলেন ক্লাইভ লয়েড।

২. ১৯৭৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল

দ্বিতীয় আসরেরও আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। আটটি দল নিয়ে আয়োজিত টুর্নামেন্টের ফাইনালে এবারও প্রতাপ বজায় রেখে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লর্ডসে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক ইংল্যান্ড। তবে স্বাগতিক হয়ে লাভ হয়নি ইংলিশদের। ফাইনালে ক্যারিবীয়রা জয় তুলে নেয় ৯২ রানে।

শুরুতে ৬০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৮৬ রান তুলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে ইংলিশরা ৫১ ওভারে গুটিয়ে গেছে ১৯৪ রানে।

৩. ১৯৮৩ বিশ্বকাপ ফাইনাল

টানা তৃতীয় বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ডে। তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে খেলে তখনকার অপ্রতিরোধ্য দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে সেই ক্যারিবীয় দলটিকে হারিয়ে প্রথবারের মতো চ্যাম্পিয়নের খাতায় না লেখায় ভারত।

লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪৩ রানে হারায় কপিল দেবের দল। শুরুতে ভারত ৫৪.৪ ওভারে ১৮৩ রানে গুটিয়ে যায়। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫২ ওভারে করতে পারে ১৪০ রান।

৪. ১৯৮৭ বিশ্বকাপ ফাইনাল

ইংল্যান্ডের বাইরে সেবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ। যার যৌথ আয়োজক ছিল ভারত ও পাকিস্তান। সেই আসর থেকে প্রথমবার টুর্নামেন্ট গড়ায় ৫০ ওভারে।

কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত ফাইনালে প্রথমবার বিজয়ীর খাতায় নাম লেখায় অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ড ফাইনালে পৌঁছালেও খুব কাছে গিয়েও হার মানতে হয় ইংলিশদের। হেরে যায় ৭ রানে।

শুরুতে টস জিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে করে ২৫৩ রান। জবাবে ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে সংগ্রহ করে ২৪৬ রান!

৫. ১৯৯২ বিশ্বকাপ ফাইনাল

বিশ্বকাপের পঞ্চম আসরের আয়োজক ছিল নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে অংশ নেয় ৯টি দল। দীর্ঘ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর সেবারই প্রথম অংশ নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত ফাইনালে আবারও পরাস্ত ইংল্যান্ড। তাদেরকে হারিয়ে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে পাকিস্তান।

রোমাঞ্চকর ফাইনালে শুরুতে পাকিস্তান ইমরান খানের ৭২ রানের ইনিংসে ভর করে ৬ উইকেটে করে ২৪৯ রান। জবাবে ইংল্যান্ড ৪৯.২ ওভারে গুটিয়ে যায় ২২৭ রানে। সুবাদে পাকিস্তান জয় পায় ২২ রানে।

৬. ১৯৯৬ বিশ্বকাপ ফাইনাল

এই আসরটির আয়োজক ছিল তিনটি দেশ- শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারত। অবশ্য অনেক বিতর্ক সঙ্গী ছিল তাতে। নিরাপত্তা জনিত কারণে শ্রীলঙ্কায় দল পাঠায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া। পয়েন্ট পেয়ে লাভটা হয় শ্রীলঙ্কারই। দুটি ম্যাচ না খেলে জায়গা করে নেয় কোয়ার্টার ফাইনালে।

লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলঙ্কা অজিদের ৭ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় প্রথমবার। শ্রীলঙ্কা টস জিতে ফিল্ডিংয়ে পাঠায় অস্ট্রেলিয়াকে। ৭ উইকেটে তারা সংগ্রহ করে ২৪১ রান। শ্রীলঙ্কা ৩ উইকেটে হারিয়ে পৌঁছে যায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। সেঞ্চুরি হাঁকান অরবিন্দ ডি সিলভা।

৭. ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল  

ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া। লর্ডসের ফাইনালে বড় ব্যবধানে জয় পায় স্টিভ ওয়াহর দল। পাকিস্তানকে ১৩২ রানে গুটিয়ে দিয়ে তারা ২০.১ ওভারে ম্যাচ জিতে নেয় ২ উইকেট হারিয়েই।

৮. ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনাল

আগের আসর থেকেই টানা তিনটি বিশ্বকাপে ছিল অজিদের আধিপত্য।

২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া ও জিম্বাবুয়ে আয়োজক ছিল। জোহানেসবার্গের ফাইনালে খেলে পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া ও সৌরভ গাঙ্গুলীর ভারত। হাই স্কোরিং ম্যাচে ১২৫ রানের বড় ব্যবধানে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয় অজিরা। টস হেরে ২ উইকেটে ৩৫৯ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে তারা। রিকি পন্টিং অপরাজিত ছিলেন ১৪০ রানে। জবাবে ভারত ৩৯.১ ওভারে ২৩৪ রানে গুটিয়ে যায়। ম্যাচসেরা হন পন্টিং।

৯. ২০০৭ বিশ্বকাপ ফাইনাল

২০০৭ বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখানেও আধিপত্য ছিল রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়ার। বারবাডোজে ফাইনালে মাহেলা জয়াবর্ধেনের শ্রীলঙ্কাকে ডি/এল মেথডে ৫৩ রানে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া।

বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে অজিরা টস জিতে ৪ উইকেটে সংগ্রহ করে ২৮১ রান। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট খেলেন ১৪৯ রানের অসাধারণ ইনিংস। জবাবে শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেটে করতে পারে ২১৫ রান!

১০. ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনাল

ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এই আসরে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত।

ফাইনালে আবারও নাম লেখায় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু রানার্স আপ হয়েই থাকতে হয় টানা দ্বিতীয়বার। মুম্বাইয়ে শ্রীলঙ্কা টস জিতে ৬ উইকেটে সংগ্রহ করেছিল ২৭৪ রান। জবাবে ৪৮.২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে স্বাগতিকরা। ৬ উইকেটে ম্যাচ জিততে ব্যাট হাতে ভূমিকা রেখে ম্যাচ সেরা হন ধোনি।

১১. ২০১৫ বিশ্বকাপ  ফাইনাল

স্বাগতিক হয়ে এই বিশ্বকাপ ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ছিল যৌথ আয়োজক।

সেমির দল হিসেবে পরিচিত নিউজিল্যান্ড প্রথমবার ফাইনালে ওঠার কৃতিত্ব অর্জন করে গতবার। যদিও খুব বেশি কিছু করতে পারেনি অজিদের সামনে।

মেলবোর্নে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেও বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি কিউইরা। অজিদের বোলিং তোপে ৪৫ ওভারে তারা গুটিয়ে যায় ১৮৩ রানে!

জবাবে অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় ৩৩.১ ওভারে। ম্যাচসেরা হন জেমস ফকনার।