ডেস্ক নিউজ:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ছিলেন অন্যতম ফ্যাক্টর। আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের কাছে স্বৈরাচার হিসেবে পরিচিত হলেও বড় দুটি দল এরশাদকে নিয়ে বেশি টানা-হেঁচড়া করেছে। এরশাদও যখন যেখানে সুবিধা পেয়েছেন সেখানেই ডিগবাজী দিয়েছেন।

ক্ষমতার বাতাস বুঝে কোনো সময় বিএনপি আবার কোনো সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গেই সখ্যতা বেশি গড়ে ওঠে। ২০০৬ সালের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ছিলেন এরশাদ।

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হবার পর এরশাদের রাজনৈতিক অভিলাষ প্রকাশ পায়। ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সাল নাগাদ তিনি প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেন। ওইদিন তিনি দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আ ফ ম আহসানুদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে নিজের অধিকারে নেন।

১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৮৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কিন্তু বিএনপি এই নির্বাচন বয়কট করে। বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রপতি এরশাদ ৭ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে এই সংসদ বাতিল করেন।

১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচন সব দল বয়কট করে। সব বিরোধী দল সম্মিলিতভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে এরশাদকে।

এরশাদের পতনের পর নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করে। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এরশাদ কারাগার থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। বিএনপি সরকার তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা করে। তার মধ্যে কয়েকটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং সাজাপ্রাপ্ত হন।

খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে এরশাদের দল জাতীয় পার্টি বিএনপির দিকেই ঝুঁকে থাকে। জেল খানা থেকে এরশাদের নির্দেশেই জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বিএনপির সঙ্গে লিয়াজোঁ রক্ষা করে।

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় নির্বাচনেও এইচ এম এরশাদ পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ছয় বছর অবরুদ্ধ থাকার পর ৯ জানুয়ারি ১৯৯৭ সালে জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপর তিনি বিদেশে চলে যান। পরিবেশ অনুকূল হলে বিদেশ থেকে ফিরে আসেন। কারামুক্ত হয়ে এরশাদ জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী ও সুসংহত করতে কার্যকর, দূরদর্শী ভূমিকা রাখতে পারেননি। এতে জাতীয় পার্টিতে এসেছে বড় ভাঙন। দলের অনেক নেতা তাকে ছেড়ে চলে যান। তিনি জেল খেটে অর্থদণ্ড দিয়ে বের হন এবং ওই সময় তিনি চারদলীয় জোটও ছাড়েন।

২০০৬ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনের আগে নানা নাটকীয়তা ও শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনার মধ্যে প্রধান দুই দল এরশাদকে কাছে টেনেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে তিনি যখন পল্টনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোটের মঞ্চে উঠলেন, তখন ১৪ দল মহাজোটে পরিণত হয়।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটে প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি আবারও দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। মহাজোট সরকারের অংশীদারও হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ঘিরে দ্বিধাদ্বন্দ্ব, নানামুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ জাতীয় পার্টিকে আরেক দফা বিপর্যয়ে ফেলে। মৃদু ভাঙনও দেখা দেয় দলে। তবুও সংসদে বিরোধী দল ও সরকারের অংশীদারত্ব পায় জাতীয় পার্টি।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে আবার আসন নিয়ে দেন দরবার শুরু করেন এরশাদ। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেন। সরকারের খুঁটি বেশ শক্তিশালী হওয়ায় এবং ব্যাপক উন্নয়নের কারণে আবার ক্ষমতায় আসার আশ্বাসে এরশাদ তেমন জেদ ধরতে পারেননি। ফলে আওয়ামী লীগ যে কয়টি আসন জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেয় তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। এবার সরকারে মন্ত্রিত্বের ভাগ না পেয়ে বিরোধী দলে অবস্থান নেয় জাতীয় পার্টি। এরশাদের রাজনৈতিক জীবনে বিএনপি আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময় টানা-হেঁচড়া করলেও ২০০৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মহাজোটের সঙ্গেই ছিলেন।