শাহীন মাহমুদ রাসেল:
সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও জেলার বিভিন্ন কাঁচাবাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন সবজি। বেশির ভাগ সবজির কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ টাকা।

জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে এভাবেই। কালুর দেকান বাজার, উপজেলা বাজার, বড় বাজার, খরুলিয়া বাজার, রামু কাঁচাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, বেগুন, বরবটি, কাঁকরোল, করল্লার দাম ৬০ টাকা বা তারও বেশি। আবার বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে আলাদা আলাদা দামেও।

বৃহস্পতিবার রামু কাঁচাবাজারের বিক্রেতা বাদল মিয়া জানান, প্রতি কেজি কাঁকরোল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, বরবটি ও বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। এসব সবজি সপ্তাহ দুয়েক আগেও বিক্রি হতো ৩০ থেকে ৪৫ টাকায়। তিনি জানান, বৃষ্টির কারণে দাম বেড়েছে। বেশি বৃষ্টি হলে বাজারে সবজি আসে কম। এ বাজারে পেঁপে, শসা ও পটোল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। কক্সবাজার শহরে সবজি বিক্রি হচ্ছে আরো বেশি দামে।

শহরের বাহার ছড়া বাজারের আলমগীর হোসেন নামের এক বিক্রেতা মাঝারি
সাইজের লাউ বিক্রি করছেন ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। ৫০ টাকা কেজিতে বেগুন, ৪৫ টাকায় কাঁকরোল ও বরবটি, কচুর মুখি ও শসা ৪০ এবং পটোল ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সেখানে। দাম হঠাৎ এত বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন বর্ষার মৌসুম। এ সময় সবজির উত্পাদন কম হয়। এ কারণে দাম বেশি।

একটি লেপ-তোষকের কারখানায় ১০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন ফজলু রহমান। বাজার করছিলেন খরুলিয়া বাজারে। তিনি জানান, চারজনের সংসারে এই টাকায় এমনিতেই টানাটানি। আগে যে টাকায় পুরো মাসের বাজার করতাম, এখন তা দিয়ে ২০ দিনের বাজারও হয় না। জিনিসপত্রের যে দাম!

বাহারছড়ায় বাজার করতে আসা আনিসুর রহমানের ক্ষোভ, অজুহাত পেলেই তারা দাম বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু সহজে কমায় না। পত্রিকায় দেখি বিভিন্ন অঞ্চলের চাষি দাম পায় না। আর শহরে তো ৫০ টাকার নিচে সবজিই পাওয়া যায় না।

আরো কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবজি, মাছ, মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যের দামই এখন বেশি। সাধারণ মানুষকে নিত্যদিনের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। বাজারে কোন পণ্য সর্বোচ্চ কত দামে বিক্রি করা যাবে সে ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় ইচ্ছামতো মুনাফা করছে ব্যবসায়ীরা। এর জন্য বাজারগুলোতে মনিটরিং বাড়ানো দরকার বলে মনে করছে ক্রেতারা।

জানা গেছে, কোল্ড স্টোরেজে প্রচুর আলু রাখা হয়। মৌসুম শেষ হলে সে আলু দিয়েই চলে। এর পরও সাদা আলুর দাম কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা করে বেড়েছে। পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের দামও বেড়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৫ টাকা। আর কাঁচা মরিচের কেজি এখন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, যদিও গত সপ্তাহের তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচের দাম উঠেছিল ৬০ টাকায়।

উপজেলা বাজারের পাইকারি বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবজি এনে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, চকরিয়া ও চট্টগ্রাম থেকে সবজি নিয়মিতই আসছে। বৃষ্টি হলে সরবরাহে বড় রকমের সমস্যা হয়। ট্রাকের মধ্যেই অনেক সবজি পচে যায়। আমরা নামাতেই পারি না। তা ছাড়া এখন বন্যার সময় হওয়ায় নিচু জমিগুলোতে উত্পাদন বন্ধ। এ জন্য সবজির দাম বাড়তি। তিনি মিষ্টি কুমড়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, যে কুমড়া আমরা পাইকারি আট থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করতাম, সেটা এখন ৪০ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে সবজি নিয়ে আসা ট্রাক ড্রাইভার কালাম জানান, রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভালো না। ঢাকায় আসতে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। ট্রাকভাড়াও তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেড়েছে।