ইমাম খাইর, সিবিএন:
কক্সবাজারের দুইশ বছরের (১৮০১-২০০০ সাল) কৃতি ব্যক্তিদের নিয়ে লিখিত গ্রন্থ ‘শীর্ষ স্থানীয় ওলামা মাশায়েখ কক্সবাজার জেলা’-এর মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। প্রতীক্ষিত গ্রন্থটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান বৃহ¯পতিবার (১১ জুলাই) বিকাল ৪ টায় কক্সবাজার প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কক্সবাজার জেলার ২২৮ জন পীর-মশায়েখ, ফকির, দরবেশ, বুদ্ধিজীবি, ইসলামী চিন্তাবিদ ও সমাজ সংস্কারকের জীবনী গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। জেলায় ইসলামের প্রচারের কাহিনীসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এতে সন্নিবেশিত হয়েছে।
যুগান্তকারী এই গ্রন্থটি রচনা করেন কক্সবাজার হাশেমিয়া কামিল (মাস্টার্স) মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গবেষক ও অধ্যাপক মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ হাবিব উল্লাহ। এটি তাঁর ৬ষ্ট প্রকাশনা।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তিনি বলেন, মুফতি মুহাম্মদ হাবিব উল্লাহ গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে যে গবেষণা শুরু করেছেন ভবিষ্যতে অন্যরা এর হাল ধরবে। গ্রন্থটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য উৎসাহ যোগাবে।
উপস্থিত শিক্ষাবিদদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য কিছু না কিছু লিখে যেতে হবে। মুফতি হাবিব উল্লাহ বৃদ্ধ বয়সে লিখার মাধ্যমে সবাইকে দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গেলেন।
বিশেষ অতিথি কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ.কে.এম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেছেন, লিখতে-পড়তে বয়স লাগেনা। মানসিকভাবে তৈরী হলে অসাধ্যও সাধন করা সম্ভব। অবসর গ্রহণ করেও বসে থাকেননি মওলানা মুফতি হাবিব উল্লাহ। তার গবেষণা কাজ তাকে আজীবন স্মরণীয় করে রাখেবে।
চট্টগ্রাম ওমর গনি এম.ই.এস কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডক্টর আ.ফ.ম খালিদ হোসাইন বলেছেন, কক্সবাজার জেলা রত্নগর্ভা ও স্বর্ণপ্রসবীনী। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও রাজনীতি সব দিক থেকে এগিয়ে। এখানকার কাদায় লবণে ও বনজঙ্গলে রত্ন তৈরী হয়েছে। ‘শীর্ষ স্থানীয় ওলামা মাশায়েখ কক্সবাজার জেলা’ গ্রন্থ প্রণেতা একজন আলীয়া মাদরাসায় শিক্ষিত হলেও অন্যান্য তরিকার আলেম, পীর মশায়েখ, গবেষকদের সর্বোচ্চ সম্মান ও উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে অনেক কৃতিমুখ কক্সবাজারের। মুফতি মাওলানা হাবিব উল্লাহ রচিত গ্রন্থটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের গবেষণা কাজে রেফারেন্স হিসাবে কাজ করবে। কষ্টসাধ্য এই কাজের জন্য গ্রন্থ প্রণেতাকে সাধুবাদ জানান ড. খালিদ। প্রকাশনা অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক সৈকত এর সম্পাদক মাহবুবর রহমান।
বক্তব্য রাখেন- কক্সবাজার হাশেমিয়া কামিল (মাস্টার্স) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা আজিজুল হক, হাফেজ আবদুল হাই স্মৃতি সংসদের সভাপতি মাওলানা শফিক আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী, সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার এর সভাপতি গবেষক মুহম্মদ নূরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন সহকারী মহাসচিব জিএএম আশেক উল্লাহ, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইসচেয়ারম্যান মাওলানা ফেরদৌস আহমেদ জমিরী, চকরিয়া সাহারবিল আনোয়ারুল উলুম কামিল (মাস্টার্স) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা শফিউল হক জিহাদী, হেফাজতে ইসলামের কক্সবাজার জেলা সাধারণ স¤পাদক মাওলানা ইয়াছিন হাবীব, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কমিশনার আবু জাফর ছিদ্দিকী, দৈনিক ইনকিলাবের কক্সবাজার ব্যুরো প্রধান শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার মুহাম্মদিয়া লাইব্রেরীর স্বত্বাধিকারী মাওলানা ওমর ফারুক।
গ্রন্থ রচনার চিত্র তুলে ধরেন লিখক মুফতি মুহাম্মদ হাবিব উল্লাহ। তিনি জানান, জেলার বিভিন্ন এলাকার ৫০০ পীর-মশায়েখ, ফকির, দরবেশ, বুদ্ধিজীবি, ইসলামী চিন্তাবিদ ও সমাজ সংস্কারকের তালিকা করেন। সেখান থেকে চূড়ান্তভাবে ২২৮ জন স্থান পেয়েছে। গ্রন্থ প্রণয়নে সহায়তাকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মুফতি মুহাম্মদ হাবিব উল্লাহ। শেষে অনুষ্ঠানের অতিথিরা গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।
বিশিষ্ট গীতিকার ও সুরকার অধ্যাপক ফরিদুল আলমের সঞ্চালনায় প্রকাশনা উৎসবে আলেম, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ কক্সবাজারের মান্যগণ্য ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থায় ছিল আল্লামা হাফেজ আবদুল হাই (রহ.) স্মৃতি সংসদ।