মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

এক ঘন্টার সফরে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন জাতি সংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, মার্শাল দ্বীপকুন্ঞ্জের প্রেসিডেন্ট হিল্ডা হেইন, বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা প্রমুখ। বুধবার ১০ জুলাই বিকেল ৪ টার দিকে বিশেষ হেলিকপ্টারযোগে তাঁরা কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্পের ২০ নম্বর ব্লকের হেলিপ্যাডে পৌঁছেন। এসময় অতিথিবৃন্দকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড.আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র সচিব, দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব শাহ কামাল, কক্সবাজরের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম, অতিরিক্ত আরআরআরসি, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাঃ শাজাহান আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ আল আমিন পারভেজ সহ জেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁদেরকে উঞ্চ অভ্যর্থনা জানান। সেখানে অতিথিবৃন্দ বৃক্ষরোপন করেন। সেখান থেকে তাঁরা কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্পের ১৭ নম্বর ব্লকে গিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শরনার্থী কো-অর্ডিনেশন সেন্টারে রোহিঙ্গা শরনার্থী আগমন, শরনার্থী ব্যবস্থাপনা, বর্তমান অবস্থান, শরনার্থীদের নিজ দেশ মায়নমারে প্রত্যাবাসনে বহুমূখী জটিলতা, স্থানীয় জনগোষ্ঠির ক্ষয়ক্ষতি, পরিবেশের বিপর্যয় সহ সামগ্রিক অবস্থা ব্রিফ করা হয়। বিদেশী অতিথিরা এখানে বাংলাদেশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। এরপর বান কি মুন, প্রেসিডেন্ট হিল্ডা হেইন, সিইও ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা শরনার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের সাথে দোভাষীর মাধ্যমে তাঁরা কথাবার্তা বলেন। বিষয়টি জেলার উর্ধ্বতন দু’জন কর্মকর্তা সিবিএন-কে নিশ্চিত করেছেন। মূলত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন সংক্রান্ত ঢাকায় ব্রিফ করা হবে বলে সুত্রটি জানিয়েছেন। পরির্দশন ও এক ঘন্টার সফর শেষে বুধবার সোয়া ৫ টার দিকে একই হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে তাঁরা উখিয়া কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্প ত্যাগ করেন।
এদিকে, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন ঢাকায় জলবায়ু বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ব্যাপারে পুরো বিশ্বের জন্য সেরা শিক্ষক হচ্ছে বাংলাদেশ। পুরো বিশ্বকে এ বিষয়ে বাংলাদেশের বেশি ভাল করে শেখানোর মতো দেশ খুব কমই আছে।
বুধবার ১০ জুলাই রাজধানীর একটি হোটেলে ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’ বিষয়ে ঢাকা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন তিনি ও নেদারল্যান্ডের রানী ম্যাক্সিমা।
বান কি-মুন বলেন, আমরা এখানে এসেছি (জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে) খাপ খাওয়ানোর ব্যাপারে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা সম্পর্কে জানতে। জলবায়ু পরিবর্তনের একেবারে সম্মুখভাগে থাকায় তারাই এ বিষয়ে আমাদের সেরা শিক্ষক।জলবায়ু অভিযোজনে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এ দেশ।
তিনি বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বাড়লেও এদেশের ১৭ শতাংশ ভুখণ্ড ২০৫০ সালের মধ্যে পানির নিচে তলিয়ে যাবে। আইপিসিসি অনুসারে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে ডুবে যেতে পারে ঢাকাও। পুরো বিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিতর্কে মেতে আছে তখন বাংলাদেশকে খাপ খাওয়াতে হচ্ছে উষ্ণতর, আক্রমণাত্মক ও অননুমেয় জলবায়ু পরিবর্তনের। এটা তাদের জন্য টিকে থাকার লড়াই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মার্শাল আইল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট হিল্ডা হেইন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা প্রমুখ।