আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:

রাঙামাটি শহরের বসতঘরে ঢুকে হামলা ও ভাংচুর চালিয়ে মালিকের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগে প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ি নেতাকে সন্তানসহ জেল হাজতে প্রেরণ করেছে আদালত। মঙ্গলবার রাঙামাটির কগনিজেন্স আদালতের বিচারক বেলাল হোসেন এই আদেশ প্রদান করেন। শহরের রিজার্ভ বাজারের বাসিন্দা মনজুর আলম (৩২) কর্তৃক গত ৯/৬/২০১৯ ইং তারিখে রাঙামাটির চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দন্ড বিধি ৪৪৭/৩৮৬/৫০৬(২)/৩৪ বিধি মোতাবেক দায়েরকৃত ফৌজদারি নালিশ আমলে নিয়ে বিষয়টির পুলিশী তদন্ত রিপোর্টের আলোকে গত ৪ই এপ্রিল এই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। এই মামলায় ক্ষমতাসীনদলের নেতা আনোয়ার মিয়া বানুকে প্রধান আসামী ও তার ছেলে রুবেলকে তিন নাম্বার আসামী করা হয়েছে। মামলায় বাদির প্রতিবেশী খোরশেদ আলম(৩৩)কে দুই নাম্বার, তার ভাই মোরশেদকে চার ও রোমানকে পাঁচ নাম্বার আসামী করা হয়েছে।

এই পরোয়ানা মাথায় নিয়ে কয়েকদিন পলাতক থাকার পর মঙ্গলবার রাঙামাটিতে এসে আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন করেন আনোয়া মিয়া বানুসহ তার ছেলে মামলার তিন নাম্বার আসামী রুবেল ও দুই নাম্বার আসামী খোরশেদ। আদালত পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে আসামীদের জামিন আবেদন নাকচ করে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেয়। রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি আনোয়ার মিয়া বানু ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় পুরো বাজার এলাকাটিতে ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে পুলিশী তদন্ত রিপোর্টেও উঠে এসেছে।

ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বিস্তার করে বাজার সভাপতি হিসেবে নিজেকে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান হিসেবে জাহির করা আনোয়ার মিয়া বানু বছর দুয়েক আগে কোতয়ালী থানার এসআই সৌরজিতের উপর প্রকাশ্যে হামলা করে তার কাছ থেকে আটককৃত এক চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়িকে ছিনিয়ে নেওয়াসহ পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়িদের নিয়ে রাস্তায় মিছিল করা ও আসামীদের গ্রেফতারে যাওয়া পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব দিয়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো।

মামলার পুলিশী তদন্ত রিপোর্টটি আদালতে জমা দিয়েছেন, রাঙামাটি কোতয়ালী থানার ওসি তদন্ত নুরুল ইসলাম। সরেজমিনে গিয়ে তৈরি করা তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশের এই কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, মামলার বাদি মনজুরের প্রতিবেশি খোরশেদ এর সাথে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিলো। উভয়পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা ও অভিযোগও চলমান রয়েছে। সম্প্রতি তাদের মধ্যে বাড়ি তৈরিকে কেন্দ্র করে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে খোরশেদের পক্ষ নিয়ে রিজার্ভ বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি আনোয়ার মিয়া বানু আসামীদের সাথে নিয়ে মনজুরের বাসায় গিয়ে হামলা চালায় এবং দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। যা সরেজমিনে গিয়ে এবং স্থানীয়দের গোপনে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। যাহার মাধ্যমে প্রমানিত হয়েছে যে, আসামীরা বাদীর ঘরে হামলা করে দাবিকৃত চাঁদা নাপেলে তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে এলাকা থেকে বিতাড়িত করবে এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে মাটিতে পুতে রাখা হবে বলে হুমকি প্রদান করে। এসব ঘটনা এলাকাবাসী স্বচক্ষে দেখলেও আসামীদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিয়ে অনীহা প্রকাশ করে। তদন্তকারি কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ব্যাপক তদন্ত করে জানাযায়, আসামীগণ এলাকার যেকোনো বিষয়ে নিজেরাই বিচার বিশ্লেষনের নামে নীরিহ লোকজনদের হয়রানী করাসহ কৌশলে চাঁদা দাবি ও আদায় করে আসছে। আর্জিতে সকল আসামীগণ বেআইনী জনতাবদ্ধে বাদীর বাসার ছাদে অনধিকার প্রবেশ পূর্বক চাঁদা দাবি করতঃ ভয়ভীতি দেখাইয়া পেনাল কোডের ১৪৩/৪৪৭/৩৮৫/৫০৬(২)/৩৪ ধারায় অপরাধ করিয়াছে।

এদিকে মামলার বাদি জানান, ইতিমধ্যে গ্রেফতারের আগে আসামীরা মামলার কেন করলাম এই কথা বলে আমার বাসায় আবারো হামলা চালায়। এসময় আমাদের বাঁচাতে আমার মাসহ আমার ভাইয়ের স্ত্রী এগিয়ে আসলে তাদেরকেও মারধর করে তারা। এসময় আমার ভাইয়ের সাত মাসের গর্ভবর্তী স্ত্রীর তলপেটে লাথি মারলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। আহতরা বর্তমানে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, আনোয়ার মিয়া বানু বিগত ২০১০ সালে পৌর সভার ওয়ার্ড মেম্বার পদে নির্বাচনে হেরে গিয়ে শহরের রিজার্ভ বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি রাস্তায় ফেলে ভাংচুর করে অশোভন ও অসম্মানজনক আচরণ করে। এই বিষয়টি সেসময়ে জনৈক কামাল উদ্দিন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় বরাবরে আবেদন করে অভিযোগ জানিয়েছিলো। সেসময় বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে রাঙামাটির জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছিলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিয়া শিরিন আনোয়ার মিয়া বানুকে স্বশরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা দিলেও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সেখান থেকেও পার পেয়ে গিয়েছিলো সে। স্থানীয়রা জানিয়েছে আনোয়ার মিয়া বানুর নিজস্ব আবাসিক হোটেল হিল সিটিতে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে ২০১৬ সালের জুলাইয়ের ২৫ তারিখে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে পতিতা উদ্ধার করে তাকে জরিমানা করেছে বেশ কয়েকবার। একই বছরের মার্চের ১২ তারিখে বানুর আবাসিক হোটেলে আগত পর্যটক নারীকে হত্যা করে লাশ হোটেলের পার্শ্বোক্ত স্থানে গুম করেও রাখা হয়েছিলো।