মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

রবি ফোনের ০১৮১৬৮৮৩১২৫ থেকে কল করে নিজেকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক দাবি করে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের সাহায্যের জন্য কক্সবাজারের হোটেল ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন থেকে চাঁদা দাবি করেছেন একটি চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের একজন নিজেকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন উল্লেখ করে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেনকে সোমবার ৮ জুলাই বিকেল ৩’৫৩ মিনিটে বলেন-“আমি কক্সবাজারের ডিসি কামাল হোসেন বলছি, সবাই তো রোহিঙ্গা শরনার্থীদের সাহায্য করছে, আপনি কি সহযোগিতা করতে পারবেন বলুন”। তখন কক্সবাজারের ডিসি মোঃ কামাল হোসেনের কন্ঠ এবং ফোনের মিল না থাকায় শাহাদত হোসেন একটু বিচলিত হয়ে উঠেন। শাহাদত হোসেন ফোন করা লোকটিকে ধরার জন্য কৌশলে বলেন ‘আমার তো আজকে বেশী টাকা হাতে নেই, আপাতত ৫০ হাজার টাকা দিতে পারব আর কি স্যার।’ তখন ডিসি পরিচয় দেয়া লোকটি বলে আমার পাশে রামু-কক্সবাজর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল সাহেবও আছেন, ওনার সাথে একটু কথা বলুন, বলে লোকটি তার মোবাইল ফোনটি অন্য আরেকজনের কাছে দিয়ে দেয়। সংসদ সদস্য দাবীদার দ্বিতীয় লোকটি শাহাদত হোসেন কে ০১৮১৬৮৮৩১২৫ নাম্বার মোবাইল ফোন থেকে বলেন, ‘আমি এমপি কমল বলছি। ডিসি সাহেব আমার সাথে আছেন। রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় টাকা পাঠিয়ে দাও’। বিষয়টি শাহাদাত হোসেনের কাছে আরো বেশি সন্দেহ হয়। পরে তিনি সরাসরি সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কামলের কাছে ফোন দিয়ে জানতে পারলেন, তিনি ডিসি সাহেবের সাথে নেই। বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ফোনালাপে এমপি নিজেই শাহাদাত হোসেনকে পরার্মশ দেন জেলা প্রশাসককে বিষয়টি দ্রুত জানাতে।
পরে শাহাদাত হোসেন সরাসরি জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করেন। আর তখন বুঝতে পারেন এটি সম্পূর্ণ প্রতারণা। তবে প্রতারকদের বিষয়টি বুঝতে না দিয়ে বরং ৫০ হাজার টাকার জায়গায় ২ লাখ টাকা প্রতারকদের দেওয়ার কথা বলেন শাহাদাত হোসেন। তিনি নিজে প্রতারকের ০১৮১৬৮৮৩১২৫ নম্বর ফোনে কল দিয়ে আরো জানান, এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল সাহেবের অনুরোধে আপনাকে টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এই ২ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতারকেরা দুটি বিকাশ নাম্বার (০১৯৯৮০৮৫৬৯৭, ০১৭৯০৭৫৭০০০) পাঠিয়ে দেন।
পুরো বিষয়টির সত্য বলে জানিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন সিবিএন-কে বলেন,
প্রতারকদের তৎক্ষনাত আইনের আওতায় আনতে তিনি বিষয়টি পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম কে জানিয়ে দেন। ওই মোবাইল নাম্বারটি ট্রেকিং করে জানা যায়, প্রতারক চক্র ঢাকা শহরের খিলক্ষেতে অবস্থান করছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন আরো বলেন, একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্র সারাদেশে এভাবে প্রতারণা করছে। পুলিশ সদর দপ্তর এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রতারকদের আইনের আওতায় আনার জোর চেষ্টা করছে বলে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন সিবিএন-কে জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন আরো জানান, প্রতারক চক্র এর আগেও এই ধরণের কাজ করেছে। বিষয়টি খুবই বিব্রতকর। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এভাবে টাকা চাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ০১৮১৬৮৮৩১২৫ মোবাইল নম্বরটি আদৌ কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক অথবা দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নয়। এবিষয়ে জনসাধারণকে সতর্ক থাকার জন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছন। এই প্রতারক চক্রের সাথে কোন লেনদেন না করার জন্য এবং প্রতারক চক্রের সন্ধান পেলে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দেয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করেছেন। এদিকে, সিবিএন-এর পক্ষ থেকে ০১৮১৬৮৮৩১২৫ নম্বর মোবাইলে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টি কক্সবাজারের জেলার সর্বত্র বেশ চান্ঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।