সংবাদদাতা:
নানা হয়রানি এবং হুমকি ধমকি স্বত্ত্বেও দেশী-বিদেশী পর্যটকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার শহরের তিনটি বীচ পয়েন্টে অবস্থিত ঝিনুক, শুটকী ও খাবারের দোকান ব্যবসায়ীরা। এসব দোকান পর্যটন এলাকার শ্রী বৃদ্ধি করছে বহুগুন। তম্মধ্যে সুগন্ধা পয়েন্টের রাস্তার পাশে সারিবদ্ধ দোকানগুলো ইতোমধ্যে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের মাঝে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। দোকানগুলো পর্যটন এলাকায় শোভা বর্ধন করলেও এখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকাররা আটকে আছে ঋনের জালে। আবার অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর অভিযোগ, সমুদ্র সৈকতের শোভা বর্ধন ও পর্যটকদের সেবায় নিয়োজিত থাকলেও প্রায় সময় তাদের অনেক হয়রাণি ও উচ্ছেদ আতঙ্কের মাঝেই থাকতে হয়। মোবাইল কোর্টে জরিমানা, উচ্ছেদ আতঙ্ক যেন নিত্যদিনের ব্যাপার। একটা শ্রেণী সুবিধা করতে না পেরে ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারনা চালিয়ে প্রশাসনসহ সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে লেগেই থাকে। তবে এখানকার ঝিনুক ও শুটকী কিনে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে প্রশংসিত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। যে কোন পর্যটক আসলেই তাঁদের চোখ থাকে বার্মিজ আচার, শুটকী ও ঝিনুকের দোকানের দিকেই। আর সমুদ্র তীরবর্তী খাবারের দোকানে আয়েশী ঢংয়ে খাবার খেয়ে তৃপ্ত হতে চায় পর্যটকরা। সুগন্ধা বৃহত্তর শুটকী রেস্টুরেন্ট ফিস ফ্রাই সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী জসিম উদ্দিন সিদ্দিকী জানান, ব্যবসায়ীরা সাধ্যমত ভাল শুটকী দিয়ে কক্সবাজারের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। নিজেদের অর্থায়নে এখানকার ব্যবসায়ীরা সুগন্ধা পয়েন্টে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন। যে কারনে সৈকত এলাকায় যে কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ড নেই বললেই চলে। ব্যবসায়ীরা নিজেরাই চুরি, ছিনতাই রোধে প্রশাসনকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আরো জানান, সুগন্ধা সী ইন পয়েন্টে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা করলেও অনেকটা তারা ঋনগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। সেখানকার প্রায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ব্যাংক ও এনজিও সংস্থার কাছ থেকে ঋন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কিন্তু নানা হয়রানির কারনে ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ায় তারা ব্যাংক ও এনজিও সংস্থা থেকে ঋন নিতে বাধ্য হয়েছে। প্রায় প্রতিটি দোকানী লাখ লাখ টাকার অর্থ ঋনে জর্জরিত। লুবণা ড্রাই ফিস সেন্টারের স্বত্ত্বাধিকারী মফিজ উল্লাহ জনতা ব্যাংক থেকে ঋন নিয়েছেন ৫০ লাখ টাকা। সৈকত শুটকী আরতের স্বত্ত্বাধিকারী শামসুল আলম এনজিও রীক, পদক্ষেপ, আইডিএফ এনজিও থেকে, সুন্দরবন শুটকীর স্বত্ত্বাধিকারী হামিদ হোসেন আল আরফা ব্যাংক থেকে ৫৫ লাখ টাকা ঋন নিয়েছেন। সোনাদিয়া শুটকীর স্বত্ত্বাধিকারী আবদুস সবুর এনজিও রীক ও আইডিফের কাছ থেকে ঋন নেন। গাউছিয়া শুটকীর আবদুল মজিদ সওদাগর এনজিও আলো, রীক, আশা ও আইডিএফ থেকে ঋন নিয়েছেন। সোনারবাংলা শুটকীর স্বত্ত্বাধিকারী আবদুল খালেক এনজিও রীক, পদক্ষেপ ও জনতা ব্যাংক থেকে ঋন নিয়েছেন। এস.এল শুটকীর স্বত্ত্বাধিকারী নাছির উদ্দিন এনজিও আশা, রীক এর কাছ থেকে ঋন নেন। সুগন্ধা রেঁস্তোরার স্বত্ত্বাধিকারী হারুনর রশিদ এনজিও আশা থেকে ঋন নিয়েছেন। ইয়াহিয়া শুটকী আরতের স্বত্ত্বাধিকারী মো. ইয়াহিয়া এনজিও আশা, রীক এবং আইডিএফ এর কাছ থেকে ঋন নিয়েছেন। বিসমিল্লাহ শুটকীর স্বত্ত্বাধিকারী আবদুল গফুর এনজিও কোস্ট ট্রাস্ট, আশা ও রীকের কাছ থেকে ঋন নিয়েছেন। আরিয়ান রেঁস্তোরার স্বত্ত্বাধিকারী আবদুর রহমান সোনালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও গ্রামীণ ব্যাংকের কাছ থেকে ঋন গ্রহন করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্টানের স্বত্ত্বাধিকারী আবদুর রহমান সুগন্ধা বৃহত্তর শুটকী রেস্টোরেন্ট ফিস ফ্রাই সমিতির নব নির্বাচিত সভাপতি। তিনি জানান, এখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সরকারকে রাজস্ব দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। অন্তত ৬০টি দোকান বাৎসরিক পৌনে ২ লক্ষ টাকা পৌর কর পরিশোধ করে আসছেন। কিন্তু এতকিছুর পরও খড়গ লেগেই রয়েছে বলে আক্ষেপের সুরে জানান অন্যান্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে ব্যাংক ও এনজিও সংস্থার কাছ থেকে ঋন গ্রহনকারী ব্যবসায়ীরা জানান, নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা করলে লাভের মুখ দেখতে পেতাম। কিন্তু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বিশেষের কারনে তা হয়ে উঠছেনা। আইনী অজুহাতে ব্যবসায়ীদের বার বার উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়। অথচ এসব স্থাপনা উচ্ছেদ না করতে সর্বোচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। এবিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার বলেন, জেলা প্রশাসন কক্সবাজার সমুদ্রের শ্রী বৃদ্ধিতে পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন। সুন্দর ও সুশৃংখল সমুদ্র সৈকত গড়ে তোলা হবে। দোকানগুলোও ঢেলে সাজানো হবে। যাতে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন জানান, পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারবাসীর গর্ব। তাই পর্যটন এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং পর্যটক আকর্ষণে জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।