পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে বরইতলী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, পহরচাঁদা অংশে লোকালয়ে ঢুকছে ঢলের পানি

এম.মনছুর আলম (চকরিয়া) :

অবিরাম ভারী বর্ষণে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বেশিরভাগ নিমাঞ্চল তলিয়ে গেছে পানিতে। বর্ষণ অব্যাহত থাকার কারনে পাহাড়ি ঢলে পানি প্রবাহ বেড়েছে মাতামুহুরী নদীতে। এ অবস্থার কারনে গতকাল রোববার দুপুর একটার দিকে নদীর পানি বিপদসীমা ২৬ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে ২৬ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা শাখা কর্মকর্তা (এসও) এসএম তারেক বিন সগীর। তিনি বলেন, বিকাল তিনটার কিছু আগে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার নদীর পানি বিপদসীমার নীচে নেমে গেছে। তবে রাতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলেও আবারও নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

তিনদিনের ভারী বর্ষণে উপজেলার বেশির ভাগ নীচু এলাকা প্লাবিত হয়ে উপজেলা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় নানাভাবে অন্তত লক্ষাধিক জনসাধারণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বড় ধরণের বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আজিমুল হক আজিম জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণের কারনে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমেছে। পানির প্রবল ¯্রােতে তাঁর ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে। গতকাল দুপুর নাগাদ সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের চারভাগের তিনভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়ে স্থানীয় লোকজন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান।

কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত ওসমান জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণের কারনে নদীতে ঢলের পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তাঁর ইউনিয়নে নদীর তীরবর্তী বেশির ভাগ এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বড় ধরণের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিপাতে মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢল নামার কারনে পৌরসভার একাধিক স্থানে বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। গতকাল দুপুর থেকে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মাতামুহুরী নদীর ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের অন্তত ২০ হাজার জনসাধারণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণের ফলে তাঁর ইউনিয়নের বেশিরভাগ নীচু এলাকা হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে উপজেলার চিংড়িজোনের হাজার হাজার মৎস্য প্রকল্প পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে ঘের মালিক ও চাষীদের ক্ষতিসাধনের আশঙ্কা রয়েছে।

চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় অঞ্চলের বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল বশর ও কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার জানিয়েছেন, মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢল নামার পর গতকাল দুপুর থেকে বিভিন্ন শাখাখাল ও স্লইচ গিয়ে দিয়ে তাদের ইউনিয়নে লোকালয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানি। ইউনিয়নের অধিকাংশ নীচু এলাকা তলিয়ে গেছে পানিতে। উপকুলের বিস্তর্ৃীণ মৎস্য প্রকল্প পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

তাদের দাবি, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নদীতে ঢলের পানি গতি বাড়বে। এ অবস্থায় উপকুলের একাধিক বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ার পাশাপাশি মৎস্য প্রকল্প সমুহ পানিতে ভেসে যেতে পারে।

বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে তাঁর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, পহরচাঁদা অংশে বেড়িবাঁেধর ক্ষতিগ্রস্থ অংশ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকছে ঢলের পানি। গতকাল দুপুর থেকে ইউনিয়নের বেশির ভাগ নীচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুদ্দীন মোহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ভারী বর্ষনের কারণে উপজেলার বেশিরভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তাই সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ও স্লুইচ গেইট সমুহ পরির্দর্শন করা হয়েছে। যেসব এলাকা বন্যাঝুঁিকতে আছে, তার কারণ উৎঘাটন পুর্বক জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। #