চকরিয়ায় নিহত গৃহবধু ইয়াছমিন আক্তার ও খুনী দেবর কামরুল ইসলাম ছোটন

এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া :

চকরিয়া উপজেলার পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া এলাকার তরকারি ব্যবসায়ী স্বামীর বাড়িতে তিন সন্তানের জননী গৃহবধু ইয়াছমিন আক্তারের মৃত্যুর ঘটনাটি অবশেষে রহস্য উদঘাটন হয়েছে। নিহতের স্বামী ও বাপের বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশি লোকজনের সঙ্গে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা কথা বলে হত্যাকা-ের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছেন। এতে রেড়িয়ে এসেছে গৃহবধু ইয়াছমিন খুনের পেছনে দেবর কামরুল ইসলাম ছোটনের সংশ্লিষ্ট থাকার কথা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ও নিহতের পরিবারের দাবি, ঘটনার আগে মুদির দোকানী দেবর কামরুল ইসলাম ছোটনকে স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দেন ভাবী ইয়াছমিন আক্তার। ওই টাকা প্রতি সপ্তাহে কিস্তি হিসেবে পরিশোধ করার কথা। টাকা নিয়ে দেয়ার পর বেশ কটি কিস্তিও পরিশোধ করেছেন দেবর কামরুল। কিন্তু মাঝপথে কিস্তির টাকা দেয়া বন্ধ করে দেন কামরুল। এ নিয়ে ভাবী ইয়াছমিনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ঘটে কামরুলের। ওই ঘটনার জেরে গত ৩০ জুন বিকালে তরকারি বিক্রেতা ভাই সাহাব উদ্দিন বাড়ির বাইরে থাকার সুযোগে দেবর কামরুল ইসলাম ছোটন কৌশলে ভাবী ইয়াছমিনকে ঢেকে নিয়ে তাঁর কক্ষে গলাটিপে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

এরপর ঘটনার দিন সন্ধ্যার দিকে স্বামী সাহাব উদ্দিন বাড়ির জন্য বাড়ির ফিরেন। ওই সময় স্ত্রী ইয়াছমিনকে বাজার নেয়ার জন্য ডাকাডাকি করলেও কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে তিনি (স্বামী) পাশের বিভিন্ন বাড়িতে খোঁজ নেন। একপর্যায়ে বাড়ির ভেতরে পর্দার আড়ালে ছোটভাই ছোটনের রুমের দরজার সামনে স্ত্রীকে মাটিতে পড়াবস্থায় দেখতে পান।

ওইসময় স্বামী শাহাব উদ্দিন শোর-চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে বসতঘর থেকে স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করেন। পরে ঘটনাটি জানানো হয় পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আরিফ দুলালকে। ঘটনাটি জেনে ইউপি চেয়ারম্যান চকরিয়া থানার ওসিকে অবহিত করেন। এরপর এদিন রাত ৯টার দিকে চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান, ওসি (তদন্ত) এস এম আতিক উল্লাহর নেতৃত্বে পুলিশের একটি ঘটনাস্থল নিহতের লাশ উদ্ধার করেন।

এ ঘটনায় নিহতের বড়ভাই বশির আহমদ বাদি হয়ে ঘটনার পরদিন ১ জুলাই চকরিয়া থানায় দুইজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে দেবর কামরুল ইসলাম ছোটন ও তাঁর স্ত্রী মরিয়ম জন্নাতকে।

মামলার বাদি বশির আহমদ বলেন, সর্ম্পক ভালো থাকাবস্থায় মুদির দোকানী দেবর কামরুল ইসলাম ছোটনকে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দেন আমার বোন ইয়াছমিন আক্তার। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে অনেকসময় তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে। পরে অবশ্য স্থানীয় ও পারিবারিকভাবে ঝগড়া বিবাদ মেটানো হয়। সর্বশেষ মাস আগে ছোটনকে স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দেন ইয়াছমিন আক্তার। ওই টাকা প্রতি সপ্তাহে কিস্তি হিসেবে পরিশোধ করার কথা। টাকা নিয়ে দেয়ার পর বেশ কটি কিস্তিও পরিশোধ করেছেন দেবর কামরুল।

কিন্তু মাঝপথে কিস্তির টাকা দেয়া বন্ধ করে দেন কামরুল। এ নিয়ে ইয়াছমিনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ঘটে কামরুলের। ওই ঘটনার জেরে স্বামী শাহাব উদ্দিন বাড়ির বাইরে থাকার সুযোগে দেবর ছোটন কৌশলে ইয়াছমিনকে গলাটিপে হত্যা করেছে।

জানা গেছে, গৃহবধু ইয়াছমিন আক্তারের বাপের বাড়ি চকরিয়া পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের তরছঘাটা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত ওসমান গনীর মেয়ে। গত আটবছর আগে সামাজিকভাবে ধর্মীয় রীতিমতে বিয়ে দেন উপজেলার পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের আবদুল মোনাফের ছেলে শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে। বর্তমানে তাদের সংসারে তিনটি সন্তান রয়েছে।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: হাবিবুর রহমান বলেন, গৃহবধু ইয়াছমিন আক্তারকে হত্যার অভিযোগে তাঁর ভাই বাদি হয়ে দুইজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আসামিরা আত্মগোপনে রয়েছে। তবে তাদেরকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।