আবদুল নবী

সেদিন হাঁটতে ছিলাম রাস্তার এক পাশ দিয়ে। আর চিন্তা করতে ছিলাম “আদৌও কি আমার দ্বারা সমাজে কিছু হবে নাকি হবে না? আমি কি পারবো স্বপ্নের পিছনে পিছনে গিয়ে আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে? আমি কি পারবো অশ্রুসজল বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে?” এরকম আরও শত শত প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে আমি আবেগ এবং বিবেক দুজনকে একই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচারকের আসনে বসে বিচার করার চেষ্টা করতে ছিলাম। ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যা নেমে আসলো ঠিক জীবনে যেমনটা অন্ধকারের দেখা মিললো তেমনি। আমার চারপাশে দু নয়ন বিচরণ করে দেখলাম সবাই কত মহা আনন্দে দিন কাটাচ্ছে। কত দামি দামি পোশাক পরিধান করে রাজপুত্রের বেশ ধরেছে। এসব কিছু চোখে দেখে আবেক আমায় প্রশ্ন করলো আর বিবেক তার জবাব দিলো।

– এসব দেখে  দেখে কান্না শুরু করতে  পারবে। আর কিছু নাই পার।

– আরে এটা  ক্ষণিকের মুক্তি। আমি আজ তাদের মতো না হওয়ার মধ্যে যে একটা কারণ আছে সেটা হয়তো জান না। তাই এই কথা বলতে পারলে।

– ভাব নিও  না। যে পকেটে পাঁচ টাকা নাই সে কি করে ঐ পোশাকে সজ্জিত হবে?

– টাকা দিয়ে  আমি মনে কর দামি একটা  পোশাক ক্রয় করে পরিধান  করলাম। রাজপুত্রের সাজে  সজ্জিত হলাম। কিন্তু আমার সেই পোশাকে ঢুকার পর থেকে আমার মধ্যে যে মনুষ্যত্ব ছিল তা হারিয়ে গেল।  তখন কি হবে ভেবে দেখেছ কখনও?

– বললাম পোশাকের কথা। আর লেকচার দিচ্ছ কিসের?

– আমি যদি  আজ গরীব না হতাম তাহলে  আজ ভিক্ষুকের সাথে গল্প করতাম না। গরীব রিক্সাওয়ালা সেই চাচার গায়ের ঘাম মুছে দিতাম না। ঘামে ভিজে যাওয়া লোকটা পাশে বসায় আমি সরে যেতাম। হাসপাতালে অসহায়দের কষ্টে আমার চোখে জল আসতো না।  কারণ আজ শতকরা ২% বড় লোকও এই অসহায় লোকগুলোর কথা চিন্তা করে বলে আমার মনে হয় না।  কেন জান, আজ আমার দেশে বক্তৃতা দেওয়ার লোকের অভাব নাই। বিদেশ থেকে ভ্রমণ করে আসতে অসামর্থ্য তেমন লোক খুবই কম। অথচ আজ আমার দেশে অভুক্ত লোকের সংখ্যা অগণিত।  যে লোকগুলোর গায়ের ঘাম বিল্ডিংয়ের প্রতিটি ইটে লেগে আছে সেই বিল্ডিংয়ে আজ নেতারা আনন্দ করতেছে। কিন্তু কখনও কি দেখেছ কোন গরীব শ্রমিকের ঘাম মুছে দিতে?  কখনও কি বসেছে সেই ঘামে ভিজে যাওয়া লোকটার পাশে? বসেনি। কেন জান, এরা নিজ স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত।  আজ গরীবের জন্য আসা অনুদান গরীবের ঘরে যায় না। সেগুলো গরীবের ছদ্মবেশী বড়লোকদের ব্যাংক একাউন্টে চলে যায়।  কেনই বা গরীবেরা পাবে এগুলো। টাকা গুলো নিরাপদে রাখার জন্য যে ব্যাংক একাউন্ট প্রয়োজন তাতো এদের নাই।  তাই দেওয়া হচ্ছে না।

– এটাতো সরকারি চিন্তা।  তুমি কেন চিন্তা করতেছ?

– জানি না  কেন চিন্তা করতেছি।  তবে এটাই জানি এসব চিন্তা আমাকে ঘুমাতে দেয় না। নিজের স্বপ্ন নিয়ে যখন চিন্তা করি ঠিক সেই সময় এই ভাইরাস আমাকে আচমকা পেটের ভিতরে চিমটি কেটে বলে আমিও নাকি দেশের পাষান লোকগুলোর মতো স্বার্থপর।  তাইতো নিজ পরিবার নিয়ে ভাবি না। নিজের স্বপ্ন পূরণের কথা ভাবি না।

– তাহলে কি  ভাব?

– কিভাবে  দেশের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সেই বজ্র কণ্ঠের মানুষগুলোর মাধ্যমে দেশে সঠিক আইনের প্রয়োগ করা যায় সেই কথা। কিভাবে গরীবের ঘামের সঠিক মূল্যায়ন করা যায় সেই কথা।  কিভাবে যার অধিকার তাকে দেওয়া যায় সেই কথা।

– আরে ভাই,  সেটার জন্য রাজনীতি লাগে। রাজনীতি ছাড়া এটা সম্ভব না।

– যে রাজনীতি মানুষের উপকার করে সেটা করা যায়।  কিন্তু সেটা মেধা শূন্য করে দেয় সেটা কাম্য নয়।

– এটাতো আর আমেরিকা, ইংল্যান্ড এইসমস্ত রাষ্ট্র নয় যে জাতীয় সংসদের সামনে পতাকা হাতে দাড়িয়ে কিছু বলবে। এটা বাংলাদেশ।  এতো জনসংখ্যা থেকে তোমাদের মতো কয়েকজন কমলে দেশের মঙ্গল এটাই বলবে সবাই।

– তাই বলে  কি চুপ করে থাকতে হবে।  হয়তো আজ অধিকার এবং দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি জীবন যাবে। এতে হাজারো ঘুমন্ত জীবন জেগে উঠবে তখন কোথায় যাবে এরা? পজিটিভলি দেশজ চিন্তা করলে দেশকে কিভাবে এসব অনিয়ম থেকে শৃঙ্খলায় আনা যায় সেটা বের হবেই।

– পারলাম না আর। কিন্তু সেটার জন্য কি করতে হবে?

যুবসমাজ যদি দেশের উন্নয়নের চিন্তা করে, দেশকে সঠিক পথে কিভাবে নিয়ে যাওয়া যায় সেই চিন্তা করে তাহলে দেশ এমনিতেই পরিবর্তন হয়ে যাবে। আমরা যদি নিজ নিজ অবস্থা থেকে সৎ এবং শৃঙ্খল থাকি তাহলে এটা ছোঁয়াচে রোগের মতো ছড়িয়ে পড়বে। আজ আমি সচেতন হলে আমার দেখায় আমার বন্ধু সচেতন হবে। তার দেখায় অন্যজন।  এভাবেই একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে সচেতন সমাজ। সচেতন সমাজ থেকে সচেতন রাষ্ট্র।  আজ ডেনমার্ক কেন বিশ্বের একনম্বর সুখী রাষ্ট্র সেটা নিয়ে রিসার্চ করলে একটা তথ্য পাওয়া যাবে সেটা হল সেদেশের জনগণ নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন। তারা অপরাধ করলে সোজা পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনা খুলে বলে। যার কারণে সেদেশের জেলখানায় অপরাধী নাই।  আমাদের দেশে সামান্য একসিডেন্ট করলেও কেউ মরলো কিনা সেটা না দেখে পালিয়ে যায়। এভাবে অপরাধকে দুধ কলা দিয়ে পোষা হয়। তাই এসব অনিয়ম থেকে বের হয়ে আসতে হবে।  আমরা যদি সচেতন হয় তাহলে ডেনমার্ককে বিশ্বের একনম্বর সুখী রাষ্ট্রের তালিকা থেকে সরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম অবস্থান উপহার দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ। রেহাই পাবে বিদেশীদের মুখ থেকে নিঃসৃত সেই বদনামি থেকে। বিশ্বের সকলে অনুসরণ করবে তখন এই অবহেলিত বাংলাদেশকে।

“আপনি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলান

সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এমনি পাল্টে যাবে। ”

____________________________________________________

আবদুল নবী, কক্সবাজার সিটি কলেজ, কক্সবাজার।