শামীমুল ইসলাম, উখিয়া:
উখিয়া উপজেলার উপকূলীয় এলাকা ‘রেজুখাল’ সংলগ্ন উত্তর সোনার পাড়া গ্রামে রেজুখালের ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ভিটেমাটি, বাড়িঘরসহ নানা স্থাপনা। এ গ্রামের দীর্ঘ ১ কিলোমিটার জুড়ে রেজুখালের ভাঙনে গত ৫ বছরে এ এলাকায় গৃহহীন হয়েছে অনেক পরিবার।
এলাকাবাসী জানান, যখন ভাঙন শুরু হয় তখন এলাকার সবাই মিলে নিজেদের খরচে সাধ্যমত বাঁধ দেয়ার চেষ্টা করেছেন, এবং কয়েকবার বাঁধ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা ও করেছিলেন কিন্তু ধীরে ধীরে রেজুখালের তান্ডব এতটাই বেড়েছে যে, গত কয়েক বছরের ভাঙনে সব কিছু ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে।নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়া নিজেদের বসতভিটার জায়গাটা ও অনেকে চিহ্নিত করতে পারেন না।
স্হানীয়দের মতে, প্রায় ৮০০ পরিবারের বসবাস এ এলাকায়, বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে রেজুখাল থেকে সাগরের লবণাক্ত পানি সরাসরি ফসলি জমিতে প্রবেশ করছে।যার কারণে জমিগুলো চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, এমবতস্হায় অসহায় খেটে খাওয়া মানুষগুলোর দুশ্চিন্তার শেষ নেই।এলাকাটি উপকূলঘেঁষা হওয়ায় অত্র এলাকার বেশিরভাগ মানুষ সাধারণ দিনমজুর অার বেশিরভাগই জেলে পেশায় নিয়োজিত, সাগরের জোয়ার ভাটার হিসেব অনুযায়ী তাঁদের ভাগ্যে খাবার জুটে। অত্র এলাকার বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে প্রায় ১০ বিঘা জমি লবণাক্ততার কারণে চাষের অনুপযোগী হয়ে গেছে।জোয়ারের পানি ঘন ঘন প্রবেশ করায় নলকূপের পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়ে সুপেয় পানির সমস্যা ও দেখা দিয়েছে অত্র এলাকায়।রেজুখালের ব্রিজের দক্ষিণ পাড় দিয়ে এ এলাকায় প্রবেশ করার একমাত্র রাস্তাটা ও নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।রেজুখালের তীর ঘেঁষা এই গ্রামে সোনার পাড়া উচ্চবিদ্যালয় এবং সোনার পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সোনার পাড়া দাখিল মাদ্রাসা অবস্হিত।

বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দু’শ শিক্ষার্থী উত্তর সোনার পাড়া গ্রামের ভিতরের রাস্তা দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসা করতো।কিন্তু রেজুখালের ভাঙনে রাস্তাটি নদীতে হারিয়ে যায়, প্রতিদিন প্রায় ১ কিলোমিটারের ও অধিক পথ পায়ে হেঁটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে হচ্ছে।ফলে দিন দিন শিক্ষার্থীর মাঝে বিদ্যালয়ে যাওয়ার অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।এই অবস্হায় অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
অত্র এলাকার বাসিন্দা ও ‘জালিয়া পালং হাসিমুখ ফাউন্ডেশন’র সভাপতি মাহাবুব কাউসার বলেন, একটি বেড়িবাঁধের অভাবে বিলিন হয়ে যাচ্ছে এ গ্রামের মানুষের ফসলি জমি, এমনকি অনেকের একমাত্র সম্বল বসতভিটা ও হারিয়ে গেছে নদীতে, শুধু এ গ্রামের মানুষের সহায় সম্বল হারিয়েছে তা নয় সেই সাথে তাঁদের স্বপ্ন ও হারিয়ে যাচ্ছে রেজুখালের তান্ডবে।

তবে এই ভাঙনের ব্যাপারে অত্র এলাকার ইউপি সদস্য মোঃ রফিক জানান, ভাঙন প্রতিরোধের জন্য একটি বেড়িবাঁধ দরকার, এবং সেটার জন্য জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরীসহ স্হানীয় জনপ্রতিনিধি সবাই মিলে অত্র এলাকার মানুষের ফসলি জমি ও বসতভিটাসহ রক্ষা করতে একটি বেড়িবাঁধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন করেছেন এবং এখনো পর্যন্ত কোনো সাঁড়া মিলেনি এমনটা জানিয়েছেন তিনি।
রেজুখালের এই ভাঙন রোধে শক্ত একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে তাঁদের বসতভিটা অার ফসলি জমি রক্ষা করার জন্য অত্র এলাকার বাসিন্দারা স্হানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রসাশনের সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।