বিদেশ ডেস্ক:

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে তালেবানের গাড়িবোমা হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরও ৬৩ বেসামরিক। সোমবারের এ হামলায় একটি যুদ্ধ জাদুঘর এবং একটি টেলিভিশন চ্যানেল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এমন সময়ে এ হামলা চালানো হলো যখন দেশটিতে ১৮ বছরের যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজে বের করতে কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে তালেবান। কিন্তু এই আলোচনার মধ্যেই যুদ্ধের ভয়াবহতা যেন আরও বেড়ে গেছে। দুই পক্ষই হামলা জোরদার করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, সোমবারের হামলায় নিহত হয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর ছয় সদস্য। আহত হয়েছেন বাহিনীর আরও ২০ সদস্য। আর শিশুসহ বেসামরিকদের হতাহতের সংখ্যা ৯৭ জন। ঘটনাস্থলের কাছেই একটি স্কুল ছিলো। বিস্ফোরণে স্কুলভবনটি ধসে পড়ে।

কর্মকর্তারা জানান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে এখনও কয়েকজন হামলাকারী অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে হামলার দায় স্বীকার করেছে তালেবান। সংগঠনের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এক টুইট বার্তায় বলেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের লজিস্টিক ও প্রকৌশলী বিভাগই তাদের মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল। তিনি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বেসামরিকদের হতাহতের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তারা আমাদের লক্ষ্যবস্তু ছিলেন না।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসরাত রহিমি বলেন, প্রথমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে হামলা চালানো হয়। এরপর জাদুঘর ও টিভি স্টেশনে গাড়িবোমা চালায় সন্ত্রাসীরা।

শোনা যাচ্ছে হতাহতদের মধ্যে সাংবাদিকরাও রয়েছেন। তবে এটি এখনও নিশ্চিত নয়। সম্প্রতি তালেবানের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। সপ্তাহখানেক আগে এক বিবৃতিতে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছিল। বিবৃতিতে বলা হয়েছিলো, সেসব সাংবাদিক ‘তালেবান-বিরোধী’ লেখা প্রকাশ বন্ধ করবেন না তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু বানানো হবে।

শমসদ টিভি নামে ওই চ্যানেল এবং উমর নামের জাদুঘরটি একই ভবনে ছিল। সোভিয়েত যুগ থেকে আফগানিস্তানে চলে আসা যুদ্ধের বিভিন্ন মূল্যবান বস্তু ওই জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। ১৯৮৯ সাল থেকে স্কুলশিক্ষার্থীরা এই জাদুঘর পরিদর্শন করে। এর আগে মার্কিন সরকারও এতে অর্থায়ন করেছিলো।

জাদুঘরের পরিচালক ফাজেল রহিম বলেন, আবারও হামলার শিকার হয়েছে শমসদ টিভি। এর আগে ২০১৭ সালে আইএস বন্দুকধারীরাও হামলা চালিয়েছিল এখানে। তিনি বলেন, আমার সহকর্মীরা আহত হয়েছেন। আমি পালিয়ে এসেছি। পরিস্থিতি খুবই খারাপ।

টিভি স্টেশনটির ব্যবস্থাপক আবিদ ইহসাস বলেন, হামলার সময় স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে ১৩ মিনিটের মধ্যেই আবারও স্বাভাবিক সম্প্রচার শুরু করে চ্যানেলটি।

নাইন ইলেভেনের হামলার পর ২০০১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নির্দেশে শুরু হওয়া আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় ২০১৪ সালে। তবে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা অব্যাহত রাখলেও অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। এমন প্রেক্ষাপটে দেশটিতে শান্তি স্থাপনে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে দফায় দফায় তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে আফগান সরকারকে আমেরিকার পুতুল হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে তালেবান।