ইমাম খাইর, সিবিএনঃ
সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দুই জন চৌকস নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম (জয়) ও একেএম লুৎফর রহমান আজাদকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়েছে।
রবিবার (৩০ জুন) বিকালে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শ্রাবস্তী রায়, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কক্সবাজার ডিসি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ শাজাহান আলিসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাইফুল ইসলাম (জয়) ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল এবং একেএম লুৎফর রহমান আজাদ ২০১৬ সালের ৩ জুন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন।
দায়িত্ব পালনে তারা অত্যন্ত সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
বিদায় বেলায় প্রশাসনের দক্ষ ও চৌকস এই দুই কর্মকর্তা নিজেদের ফেইসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। যা সবার দৃষ্টি কাড়ে।

সাইফুল ইসলাম (জয়) 
“বিদায়” প্রিয় কক্সবাজার
তিন অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ-বিদায়। মাত্র তিন অক্ষর। কিন্তু শব্দটির আপাদমস্তক বিষাদে ভরা। এ বিষাদের হাহাকারে জর্জরিত এ দেহ-মন।

২০১৭ সালে ১৬ই এপ্রিল এসেছিলাম কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে । এ জেলার মানুষের দেহ-সোষ্ঠব এবং মন সমুদ্রের মতই বিশাল এবং অফুরান। চিন্তন এবং মননে এক অসীম উদারতার মূর্ত প্রতীক এ জেলার মানুষ। এই বিশাল হৃদয়ের মানুষদেরকে নিজের মেধা, যোগ্যতা আর দায়িত্ববোধের প্রমাণ দিতে চেষ্টা করেছি সব সময়। এখানেই পেয়েছি বটবৃক্ষের মত আভিভাবক মাননীয় জেলা প্রশাসক জনাব মো: কামাল হোসেন স্যারকে। যিনি একজন শিক্ষা বান্ধব জেলা প্রশাসক হিসেবে ইতিমধ্যে কক্সবাজারবাসীর মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন। জেলার অন্যান্য কর্মকান্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে কক্সবাজারে শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সেইসাথে কক্সবাজারে স্থানীয় ও পর্যটকদের সুবিধার্থে করেছেন অনেক কিছু। এ সমস্ত কাজ কিভাবে করা যায় স্যারের পাশে থেকে তা শিখতে পেরেছি। স্যারের নির্দেশনায় সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের হয়রানি রোধ, সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখাসহ বিভিন্ন সেবা দিতে সর্বদা চেষ্টা করে গেছি নিরলসভাবে। এ ছাড়া পর্যটকদের অসাবধানতা বশত: হারিয়ে যাওয়া সন্তান আর মালামালও উদ্ধার করেছি পর্যটন সেলে দায়িত্বে থাকার কারণে।

সময় যত পার হচ্ছিল তখন থেকেই যেন মনে হচ্ছিল এই বুঝি বেজে উঠলো বিদায়ের ঘন্টা। অবশেষে ঠিকই হৃদয়ের বাঁধনকে রিক্ত-রুষ্ট করে ছিঁড়ে গেল নিয়মের বাঁধন। বেজে উঠলো আনুষ্ঠানিক বিদায়ের করুণ সুর। চাকরীর নিয়মের কারণে যেতে হবে অপর স্থানে এটাই স্বাভাবিক। এই তিন বছরের ব্যবধানে কক্সবাজারের অনেক জনের মুখ এতো আপন হয়ে যাবে কখনো ভাবতে পারিনি। বিদায় বেলায় তাদের স্মৃতি নিয়ে চললাম আগামীর পথে। আর অশ্রু জলে সেই আপনদেরকে জানাই অসীম ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা।
দোয়া করবেন আমার জন্য । ভবিষ্যত চলার পথে যেন সাধারণ জনগনের সেবা দিতে পারি অবিচলভাবে।

একেএম লুৎফর রহমান আজাদ বিদায় বেলায় নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন-

‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কক্সবাজারে যোগদান করি ৩ জুন, ২০১৬ তে এবং এ জেলায় তিন বছর এক মাস কাজ করার পর আজকে বিদায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কক্সবাজারকে রেখে দিলাম স্মৃতির পাতায়।

যেদিনটি চলে যায়, সেদিনটিই পুরোনো হয়ে যায়, হয়ে যায় স্মৃতি। মধুর স্মৃতি আজীবনের জন্যই মধুর হয়ে থাকে, শক্তি আর সাহস যোগায় জীবন চলার প্রতিটি পদক্ষেপে। সত্যিই আমি অনেক সৌভাগ্যবান এজন্য যে, Kamal Hossain স্যারের মত একজন ডিসি স্যারের আশীর্বাদ পেয়েছি, যার সান্নিধ্য সবসময় অনুপ্রেরণা জোগায়, যার কথা এবং কাজ একজন জুনিয়র অফিসারের জন্য অনুসরণীয়। Gulshan Kamal স্যার যিনি আমাকে স্নেহ করেন আপন ছোট ভাইয়ের মত। আরো সান্নিধ্য পেয়েছি Mohammad Ashraful Afsar স্যার, Masudur Rahman স্যার, Shahjahan Ali স্যার ও এস এম সরওয়ার কামাল স্যার সহ অন্যান্য সিনিয়র স্যার ও জুনিয়র সহকর্মীদের। এত এত ভালো ব্যাচ ম্যাটদের পেয়েছি কক্সবাজারে শুরু থেকে সুন্দর সমাপ্তি পর্যন্ত। ভালোবাসা পেয়েছি কক্সবাজারের সুধীজনের, যাদের কাছে প্রত্যাশা করি, দিনের পর দিন তাদের হৃদয় গভীরে ধরে রাখবে আপনজনের মতো করে। আরো প্রত্যাশা করি প্রথম কর্মস্থল হিসেবে যেন সারাজীবন হৃদয়ের প্রতিটি কোনে জুড়ে থাকে, মধুর আর শুভ স্মৃতি হয়ে রোমন্থিত হয় সদা সর্বদা।
ভালো থাকুক কক্সবাজার, ভালো থাকুক কক্সবাজারের প্রিয় মানুষগুলো।’

জেলা প্রশাসকের অনুভূতি:
জনাব একেএম লুৎফর রহমান ও জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রায় তিন বছর যাবৎ সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন শেষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে পদায়নের লক্ষ্যে বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা এর কার্যালয়ে ন্যস্ত হয়েছে।
তাদের পরবর্তী চাকুরী ও পারিপারিক জীবন সফল ও সুন্দর হোক এ কামনা করি।