বাংলা ট্রিবিউন:

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলায় আগাম জামিন চেয়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছেন। তবে জামিন নিতে গিয়ে তিনি বেছে নিয়েছেন অভিনব এক প্রতারণার পথ। নিয়ম অনুসারে একই আবেদন একটি কোর্টে দাখিল করার নিয়ম থাকলেও মিজান ভিন্ন দুইটি বেঞ্চে তার আবেদন দাখিল করেছেন। তবে তার এ ধরনের প্রতারণা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ কিংবা দুদকের চোখ এড়াতে পারেনি।

ঘটনার সত্যতার নিশ্চিত করে হাইকোর্টের ২৭ নম্বর বেঞ্চে (বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ) কর্মরত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি আজ অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে একটি নোটিশ পেয়েছি। সেখানে আমার কোর্টে আবেদনটির শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। তবে পরে জানতে পেরেছি, আমাদের কোর্ট ছাড়াও ডিআইজি মিজান ১৯ নম্বর বেঞ্চে (বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ)  একই আবেদন দাখিল করেছেন।

একইসঙ্গে দুইটি ভিন্ন কোর্টে জামিন আবেদন করার বিধান রয়েছে কিনা তা জানতে চাইলে এই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল  জানান, হাইকোর্টের রুলস অনুসারে একইসময়ে দুইটি কোর্টে একই আবেদন করার কোনও সুযোগ নেই। যে কোনও ব্যক্তিকে আদালতের কাছে সরল মনে আসতে হয়, তবে একইসঙ্গে দুই কোর্টে একই আবেদন করাটা প্রতারণা বলেও ধরা যায়।

একই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদনটি অনেকটাই স্পর্শকাতর। আজ সকালে ১৯ নম্বর কোর্টে যখন তার জামিন আবেদনটি দাখিল করা হয়, তখন আমরা সেখানে ছিলাম। পরে আদালত আগামী সোমবার বা মঙ্গলবার শুনানি করতে পারেন বলে জানানো হয়। তবে তার জামিনের আগে দুদকের বক্তব্য শুনতে চান বলেও আদালত আমাকে জানিয়েছিল।জামিনের জন্য একই আবেদন নিয়ম ভেঙে হাইকোর্টের দুই বেঞ্চে জেমা দিয়ে আবারও সমালোচিত ডিআইজি মিজান

তবে একই দিনে জামিন আবেদনের শুধুমাত্র ওপরের পৃষ্ঠা পরিবর্তন করে আরেকটি বেঞ্চে আবেদন দাখিল করার প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানান দুদকের এই আইনজীবী। তিনি বলেন, আজ ১৯ নম্বর কোর্টে একই এন্ট্রি নম্বর দিয়ে নোটিশ পরিবর্তন করে ডিআইজি মিজান ২৭ নম্বর কোর্টে আবার আবেদন দাখিল করেন। এরপর বিষয়টি আমরা অবহিত হলে দুইটি ভিন্ন কোর্টে আবেদন করার সত্যতা পাই।

আবেদনের শুনানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম হলো একটি কোর্টে শুনানির জন্য দাখিল করা। এ বিষয়ে আমরা আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো যে তারা এমনটা করতে পারে না, এসব আদালতের প্রচলিত নিয়মের বাইরে।

তাহলে জামিন আবেদন দাখিলের ক্ষেত্রে আদালতের প্রচলিত নিয়ম কী জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী বলেন, তিনি এভাবে একই এন্ট্রি নম্বরে দুই কোর্টে আবেদন করতে পারেন না। একই বিষয়ে একটা কোর্টে আবেদন করতে হয়। এনেক্স ১৯ ও ২৭ এ একটাই মোশন (আবেদন) ফাইল করেছেন। কিন্তু দুই কোর্টে দুই রকম নোটিশ দিয়েছেন। তবে উনি যে কোর্টেই যান না কেন আমরা তার আবেদনের মাধ্যমে আইনের যে ব্যত্যয় উঠে এসেছে তা আদালতের সামনে তুলে ধরবো। আমরা তার আবেদন আটকাতে শুনানির সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।

হাইকোর্টে জামিন আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘জামিন চাইতে গেলে আবেদনের ওপর প্রথমেই একটি টেন্ডার নম্বর পড়বে। এরপর দুদককে আবেদনের একটি কপি দিতে হবে। তারপর সংশ্লিষ্ট আদালতে (নির্দিষ্ট মামলার শুনানির জন্য এখতিয়ারাধীন বেঞ্চ) দাখিল করতে হবে। এরপর আবেদনটি ওই আদালতের হ্যান্ড লিস্টে আসবে। তারপর তা  শুনানির জন্য আসে।

তিনি আরও বলেন, আগাম জামিনের আবেদন একটি এবং টেন্ডার নম্বরও একটি। তবে দুই কোর্টে দুই ভাবে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। একই এন্ট্রি নম্বর দিয়ে দুদকের মামলাটি শোনার জন্য নির্ধারিত হাইকোর্টের  ১৯ ও ২৭ নম্বর বেঞ্চে নোটিশ দিয়েছেন ডিআইজি মিজান, যা তিনি পারেন না।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ডিআইজি মিজানের মতো আজকেই অন্য একটি মামলায় তথ্য গোপন করে জামিন চাওয়ার ঘটনায় আদালত মামলার তদবিরকারককে (এফিডেভিটকারী) ৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। ওই আসামি তথ্য গোপন করে পর পর তিনবার জামিন আবেদন করেন। তবে এর মধ্যে একটি মামলা খারিজ ও আরেকটির শুনানি পেন্ডিং থাকাবস্থায় আবারও তিনি আবেদন করেন। তবে এভাবে আবেদন করার কোনও সুযোগ নেই। ডিআইজি মিজানেরও  একই আবেদন দুটি পৃথক বেঞ্চে উপস্থাপনের বিষয়টি আমরা আদালতের নজরে আনবো।

প্রসঙ্গত, এর আগে নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু, এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এছাড়াও, গত ১৯ জুন আদালত এক আদেশে মিজানুর রহমানের স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

গত ২৪ জুন তিন কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।