শাহেদ মিজান, সিবিএন:

বহু বছর পর শহরের ভোলাবাবুর পেট্রোল পাম্প সিনজির অটোরিক্সার কবল থেকে মুক্ত হয়েছে। এর ফলে শহরে যানজট অনেকটা কমেছে। সেই সাথে ওই এলাকার তীব্র জনজটও। ভোলাবাবুর পেট্রোল পাম্পটি ছিলো অঘোষিত একটি অবৈধ সিএনজি অটোরিক্সা স্টেশন। সরকারি কোনো বৈধতা বা ইজারার নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও একটি চাঁদাবাজ চক্র ঠিকই ওইসব অটোরিক্সা থেকে বছর হাতিয়ে নিয়েছে অবৈধ চাঁদা। তবে ওই চক্রটি এখনো থামেনি। ভোলাবাবুর পেট্রোল পাম্প থেকে বিতাড়িত অটোরিক্সা স্টেশনটি এখন বসানো হয়েছে স্টেডিয়াম সড়ক দখল করে। দীর্ঘ এক মাস মতো সময় ধরে কক্সবাজার ঈদগাহ ময়দান ও বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের সামনেই বসানো হয়েছে এই অবৈধ স্টেশনটি। সেখান থেকে চাঁদা আদায় করছে চাঁদাবাজ চক্র। দৈনিক ২০ হাজার টাকার বেশি চাঁদা আদায় করছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই অবৈধ স্টেশনটির কারণে ওই এলাকার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জানা গেছে, ভোলাবাবুর পেট্রোল পাম্পের খালি অংশ দখল করে দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় গড়ে তোলা হয়েছিল অবৈধ সিএনজি অটোরিক্সা স্টেশন। এসময় পেট্রোল পাম্প কর্তৃপক্ষ নিজেদের স্বার্থে অটোরিক্সা পার্কিংয়ের প্রশয় দিয়েছিল। ওই অবৈধ স্টেশনের কারণে বিগত ১০ বছর ধরে পুরো শহর মারাত্মক যানজটে আটক ছিলো।

অন্যদিকে একটা সময় পর ওই স্টেশন ঘিরে গড়ে উঠেছিল চাঁদাবাজ চক্র। স্টেশনটি সরকারি ইজারাভুক্ত না হলেও সরকার দলীয় লোকজন প্রতি অটোরিক্সা থেকে দৈনিক হারে চাঁদা তুলতো। শেষ সময়ে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। গত পাঁচ বছর ধরে এই যানজটের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশের যোগসাজসে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ওই স্টেশনটি কোনোভাবেই উঠানো যায়নি। শেষ সময়ে এসে সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে ওই স্টেশনটি উঠিয়ে দেয়ার তীব্র দাবি উঠে। এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বেশ লেখালেখিও হয়েছে। এর মধ্যে এই অটোরিক্সার অবৈধ স্টেশনের কারণে চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়ে পুরো শহর। তাই জেলা পুলিশ উদ্যোগ নিয়ে মাসখানেক আগে উচ্ছেদ করে অবৈধ স্টেশনটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলাবাবুর পেট্রোল পাম্প থেকে ওই অবৈধ অটোরিক্সা স্টেশন উচ্ছেদ করার পর স্টেডিয়াম সড়কের ঈদগাহ ময়দানের সামনের অংশ দখল করে গড়ে তোলা হয় স্টেশন। পূর্বের চাঁদাবাজ চক্রের যোগসাজসে এবার সেখানেই অনেকটা শক্ত আসন গেড়েছে অটোরিক্সাগুলো। সদর হাসপাতাল, প্রি-প্যারাটরি উচ্চ বিদ্যায়, প্রভাতী শিক্ষা নিকেতন, স্টেডিয়াম ও ঈদগাহ ময়দানের মধ্যপ্রান্তের প্রধান সড়ক দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ এই অটোরিক্সা স্টেশন। এই স্টেশনের কারণে ওই স্পর্শকাতর এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, অবৈধভাবে গড়ে তোলা অটোরিক্সা স্টেশন থেকে কিছু যুবক দিনের একটা সময়ে এসে প্রতি অটোরিক্সা থেকে টাকা তুলেন। টাকার পরিমাণ থেকে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। অনেক সময় কিছু কিছু চালক টাকা দিতে না চাইলে তাদেরকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং স্টেশনটি তারা নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানান। বাহারছড়া কেন্দ্রিক একটি চক্র এই চাঁদাবাজির সাথে জড়িত রয়েছে।

শনিবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদগাহ ময়দানের সামনের স্টেডিয়াম সড়কেই বসানো হয়েছে মুল স্টেশন। কিন্তু অতিরিক্ত অটোরিক্সাগুলো সেখানে স্থান পায়নি। সেখানে স্থান না পেয়ে ঈদগাম মসজিদ, প্রি-প্যারাটরি উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে পার্কিং করেছে। এতে চারিদিকের এক অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়–য়া অপু বলেন, ‘অঘোষিত হঠাৎ স্টেডিয়াম সড়ক দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে সিএনজি অটোরিক্সা স্টেশনটি। হাসপাতাল, বিদ্যালয় এবং ঈদগাহ ময়দানসহ নানা কারণে একটি স্পর্শকাতার এলাকা। এমন এলাকায় তাও আবার সড়ক দখল করে বানানো হয়েছে অবৈধ স্টেশন। এর ফরে আমাদের সবার ক্ষতি হচ্ছে; নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহ্বান করছি।’

‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদুুল ইসলাম বলেন, পুরো দেশের একটি বিরাট অংশের দুষ্টু লোকের নজর কক্সবাজারের দিকে। তারা এই প্রাচুর্য্যের নগরী কক্সবাজারকে গিলে খেতে চায়। আমরাই তাদেরকে সুযোগ তৈরি করে দিই। ঠিক তেমনিভাবে কক্সবাজারের কিছু দুষ্টু লোকও নানাভাবে কক্সবাজারকে চুষে খাচ্ছে। তারা নিজেদের আখের গোছানোর জন্য অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে যা তা করছে। বহুর বছর পর ভোলাবাবুর পেট্রোলপাম্প দখলমুক্ত হলেও তা আবার ভর করেছে স্টেডিয়াম সড়কে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দ্রুত সময়ে এই অবৈধ স্টেশনটি উচ্ছেদ করে ওই এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ রক্ষার আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন- ট্রাফিক নিয়ম মতে সিএনজি অটোরিক্সার জন্য ব্যবস্থা নিতে পারে ট্রাফিক পুলিশ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বাবুল চন্দ্র বণিক বলেন, ‘শহরের যানজট কমাতেই ভোলাবাবুর পেট্রোল পাম্প থেকে স্টেশন উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু কোথাও জায়গা না থাকায় আপাত স্টেডিয়াম সড়কে অস্থায়ীভাবে অটোরিক্সা রাখতে বলা হয়েছে। তবে এক সাথে ২০টির বেশি পার্কিং না করতে নিষেধ করা হয়েছে। পরে সবার পরামর্শের ভিত্তিতে স্টেশনটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হবে।’