ক্রিড়া ডেস্ক:
এই ম্যাচ আফগানিস্তানকে কতদিন পোড়াবে, কে জানে! বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর কী দারুণ সুযোগই না পেয়েছিল তারা। কিন্তু বাজে ফিল্ডিং, বাজে অধিনায়কত্ব আর ভুল আম্পায়ারিংয়ে সুযোগ কাজে লাগাতে পারল না আফগানরা। রোমাঞ্চকর ম্যাচে ৩ উইকেটের নাটকীয় জয়ে সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল পাকিস্তান।

হেডিংলিতে শনিবার আগে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ২২৭ রান করেছিল আফগানিস্তান।পাকিস্তান সেটি পেরিয়ে যায় ২ বল বাকি থাকতে। ৫৪ বলে ৪৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে পাকিস্তানের জয়ে নায়ক ইমাদ ওয়াসিম।

অথচ ইমাদ আউট হতে পারতেন ১ রানেই। কিন্তু রশিদ খানের বলে ইমাদকে পরিষ্কার এলবিডব্লিউটা দেননি আম্পায়ার পল উইলসন। হ্যারিস সোহেলের একটি কট বিহাইন্ড দেননি আরেক আম্পায়ার নাইজেল লং।

হারের জন্য হয়তো আম্পায়ারদের দোষ দিতে পারে আফগানিস্তান। তবে দোষ নিজের কাঁধে নিতে পারেন অধিনায়ক গুলবাদিন নাইবও। যখন ৫ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ৪৬ রান, গুলবাদিন এক ওভারেই দেন ১৮ রান! এই ওভারেই ২৭ রানে ক্যাচ তুলেছিলেন ইমাদ, সুযোগটা নিতে পারেননি প্রাক্তন অধিনায়ক আসগর আফগান।

শাদাব খানের রান আউট ও মুজিব উর রহমানের দুর্দান্ত ওভারে তবুও আশা জেগেছিল আফগানিস্তানের। শেষ ২ ওভারে দরকার ছিল ১৬। তবে রশিদের করা শেষের আগের ওভারে ওয়াহাব রিয়াজের একটি ছক্কায় পাকিস্তান পেয়ে যায় মোট ১০ রান। শেষ ওভারে ৬ রানের সমীকরণে চতুর্থ বলে গুলবাদিনকে চার হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন ইমাদ।

অথচ ছোট পুঁজি নিয়ে বোলিংয়ের শুরুটা স্বপ্নের মতোই হয়েছিল আফগানিস্তানের। মুজিব ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই তুলে নেন ফখর জামানকে। এরপর ইমাম উল হক ও বাবর আজমের সৌজন্যে পাকিস্তান পায় ৭২ রানের একটু জুটি।

মোহাম্মদ নবীর বলে ইমাম (৩৬) স্টাম্পড হলে ভাঙে জুটি। ম্যাচটা ধীরে ধীরে আফগানিস্তানের দিকে হেলে যায় এরপরই। নবীর পরের ওভারে পেছন দিয়ে বোল্ড হন বাবরও (৪৫)।

মোহাম্মদ হাফিজ আরো একবার উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। আক্রমণে ফিরে তাকে ফেরান মুজিব। হ্যারিস আম্পায়ারের ভুলে বেঁচে গেলেও এরপর ২৭ রানের বেশি করতে পারেননি। ডাবল নিতে গিয়ে রান আউটে কাটা পড়েন সরফরাজ আহমেদ।

তখন ১৫৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে পাকিস্তান। আম্পায়ার এলবিডব্লিউটা দিলে শুরুতে ফিরতে পারতেন ইমাদও। সেই ইমাদই শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের জয়ের নায়ক। সপ্তম উইকেটে ইমাদ ও শাদাব গড়েন ৫০ রানের জুটি।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত রান তুলে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিল আফগানিস্তান। গুলবাদিন নাইব ও রহমত শাহ গড়ে ফেলেছিলেন ২৭ রানের উদ্বোধনী জুটি। পঞ্চম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদির প্রথম তিন বলে গুলবাদিন মেরেছিলেন দুই চার। এরপরই আফ্রিদির পরপর দুই বলে আফগানিস্তান হারায় ২ উইকেট।

অফ স্টাম্পের বাইরের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটকিপাকে ক্যাচ দেন গুলবাদিন। পাকিস্তান উইকেটটা পেয়েছে অবশ্য রিভিউ নিয়ে। ১২ বলে ৩ চারে গুলবাদিন করেন ১৫ রান। গোল্ডেন ডাক মেরে ফেরেন হাশমতউল্লাহ শাহিদি। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান লেগ স্টাম্পে বেরিয়ে যাওয়া বল খেলতে চেয়েছিলেন লেগ সাইডে। ব্যাটের ওপরের অংশে লেগে ক্যাচ উঠে যায় মিড অফে।

রহমত উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। বাঁহাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিমের শিকার হওয়ার আগে ৪৩ বলে ৫ চারে ডানহাতি ব্যাটসম্যান করেন ৩৫ রান। তখন ৫৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে আফগানিস্তান।

চতুর্থ উইকেটে জুটি বেঁধে দলের স্কোর একশ পার করেন আসগর আফগান ও ইকরাম আলী খিল। আফগানকে ফিরিয়ে ৬৪ রানের এ জুটি ভাঙেন শাদাব খান। লেগ স্পিনারকে তেড়েফুঁড়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হওয়া আফগান ৩৫ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৪২ রান।

এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি ইকরামও। বেশি ডট বল খেলার চাপে পিষ্ট হন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। ইমাদের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল স্লগ সুইপে উড়ানোর চেষ্টায় ক্যাচ দেন লং অনে। ৬৬ বলে একটি চারে ইকরাম করেন ২৪ রান।

মোহাম্মদ নবীও সুবিধা করতে পারেননি। ওয়াহাব রিয়াজের শর্ট বলে ফেরার আগে ৩৩ বলে তিনি করেন ১৬ রান। ১৬৭ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর দলের স্কোর দুইশ পার করেন নজিবুল্লাহ জাদরান ও শামিউল্লাহ শেনওয়ারি। নজিবুল্লাহ আফ্রিদিকে দারুণ একটি চার মারার পরের বল স্টাম্পে টেনে এনে ফিরলে ভাঙে ৩৫ রানের জুটি।

নিজের শেষ ওভারে রশিদ খানকে ফিরিয়ে আফ্রিদি পূর্ণ করেন চার উইকেট, ১০ ওভারে তিনি দেন ৪৭ রান। ৩২ বলে ১৯ রানে অপরাজিত ছিলেন শেনওয়ারি। ইমাদ ৪৮ রানে ও ওয়াহাব ২৯ রানে নেন ২টি করে উইকেট। ২ উইকেটের পর ব্যাট হাতেও ৪৯ রান করে ম্যাচসেরা হলেন ইমাদ।

আট ম্যাচে চতুর্থ জয়ে ইংল্যান্ডকে টপকে পয়েন্ট টেবিলের চারে উঠেছে পাকিস্তান।তাদের পয়েন্ট ৯। সাত ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে নেমে গেছে ইংল্যান্ড। আফগানিস্তান হারল টানা আট ম্যাচ।