আহমদ গিয়াস:
প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে মারাত্মক পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ছে উপকূলবর্তী বঙ্গোপসাগর। ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগরের মাছের পেটে এবং ক্রুড ও বাণিজ্যিক লবণে মাইক্রো প্লাস্টিকের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক যৌথ গবেষণায় এ তথ্য ধরা পড়ে। এমনকি দেশের বিখ্যাত কয়েকটি বাণিজ্যিক কোম্পানীর লবণেও পাওয়া গেছে উচ্চ ক্ষতিকর মাত্রার মাইক্রো প্লাস্টিক।
বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিএফআরআই) কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের উদ্যোগে শনিবার আয়োজিত ‘বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি পর্যালোচনা ও গবেষণা প্রস্তাব’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক আঞ্চলিক কর্মশালায় এ তথ্য তুলে ধরে এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ও ধারাবাহিক গবেষণার প্রস্তাব করা হয়।
গবেষণার জন্য কক্সবাজারের মহেশখালী ও সোনাদিয়াকে সেম্পল হিসাবে ধরে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে মাইক্রো প্লাস্টিক দূষণের একটি মাত্রা নির্ণয় করতে গিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য পান বিএফআরআই ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
গবেষণায় দেখা গেছে, মহেশখালী, শাহপরীর দ্বীপ ও টেকনাফ থেকে সংগৃহীত প্রতি কেজি অপরিশোধিত লবণে ১হাজারটির বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। এমনকি দেশের বেশ কয়েকটি নামকরা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক ও পরিশোধিত লবণেও প্রতি কেজিতেও ৭০০-৯০০টি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে বলে জানান গবেষক দলের প্রধান ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. হারুণুর রশীদ।
তিনি আরো জানান, বঙ্গোপসাগরের কিছু মাছ ও অনুজীব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক খেয়ে থাকে। এগুলো আবার মানবদেহে আসতে পারে। যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকী। প্লাস্টিক মানব শরীরে গেলে ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ সৃষ্টি হতে পারে। তবে মহেশখালী উপকূলের তুলনায় সোনাদিয়াতে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা প্রায় অর্ধেক বলে জানান তিনি।
শনিবার বাংলাদেশ মাৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জুলফিকার আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামস্থ সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবুল হাছানাত। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ফিশারীজ অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. নুরুল আবছার খান। আলোচক ছিলেন বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. এসএম রফিকুজ্জামান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. শাহনওয়াজ চৌধুরী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক ড. কইজার আহমদ সুমন, সিভাসুর সহকারি অধ্যাপক ড. হেলেনা খাতুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আলিফা বিনতে হক, কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা যথাক্রমে ড. শফিকুর রহমান, আশরাফুল হক, শাহনূর জাহেদুল হাসান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাকিয়া হাসান, মো. মোজাম্মেল হক, মো.মহিদুল ইসলাম ও আহমদ ফজলে রাব্বি। এসময় কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. খালেকুজ্জামান, খাগড়াছড়ি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মঈনউদ্দিনসহ জেলার বিভিন্ন বিভাগের বিজ্ঞানী, মৎস্য চাষী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় মেরি কালচার বিষয়ে আরো ১২টি গবেষণা প্রকল্পের ফলাফল তুলে ধরে এসব বিষয়ে গবেষণা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়।