মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি :

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বান্দরবানের লামা উপজেলার মানুষের মাঝে এক আতংকের মৌসুম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে বর্ষা মৌসুম। এক টানা মুষলধারে বৃষ্টি নামলেই বিশেষ করে পৌরসভা এলাকায় দেখা দেয় বন্যা, পাহাড় ধস, নদী ও খালের দু’পাড় ভাঙ্গন। তখন পৌর শহরের ব্যবসায়ী, সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী, নদী তীরবর্তী, নিম্নাঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের কারো চোখে ঘুম থাকেনা। রাতে না ঘুমিয়ে পাহারা দিয়ে বসে থাকতে হয়; কখন বন্যার পানি তলিয়ে দেবে বসতঘর, দোকান, অফিস আদালত। একই সময় পাহাড়ের পাদ দেশে বসবাসকারীরা আতংকে থাকেন কখন আচমকা পাহাড় ধসে ঘরের ওপর পড়ে। আবার কখন নদী গর্ভে চলে যায় দু’পাড়ে অবস্থিত বসতঘর, ফসলি জমি, সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ তিন আতংকে একদিকে যেমন প্রতিবছর জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে চলেছে, তেমনি পুরো বর্ষা মৌসুম জুড়েই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয় ৪০ হাজার বাসিন্দাকে। দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা এসব দুর্ভোগ লাঘবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনের জোর দাবী জানান।

সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাত্র কয়েক ঘন্টা মুষল ধারে বৃষ্টি নামলে উপর থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর দু’কুল উপচে বন্যার সৃষ্টি করে। এসময় পৌর শহরসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়। লামা-আলীকদম সড়কের একাধিক স্থানে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বন্যার সময় অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হয় শহরের ব্যবসায়ী, সরকারকী বেসরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে। ব্যবসায়ীদের চরম হিমশিম খেতে হয় দোকানের মালামাল নিরাপদে সরাতে। প্রায় সময় বন্যার পানিতে লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল পানিতে ডুবে নষ্টও হয়ে যায়। এছাড়া বন্যার কারণে উপজেলার হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। অপরদিকে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় চুড়া ও পাদদেশে ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। বর্ষা মৌসুমে কিছু দিন বৃষ্টির পরই শুরু হয় পাহাড় ধস। স্থানীয়দের মতে, যুগ যুগ ধরে পাথরের বেষ্টুনি দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা পাহাড়গুলো থেকে অবৈধভাবে পাথার আহরণ,ং পাহাড় কেটে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি-ঘর তৈরি ও বৃক্ষ নিধন করা হয়। এ কারনে বর্ষা মৌসুমে ফাটল ধরা পাহাড়গুলো ধসে পড়ে ব্যপক জানমালের ক্ষতি সাধন করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় মাইকিং করে তাদের ঝুকিঁপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় হাজার হাজার পরিবার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানেই বসবাস করছে। তাই একটু বৃষ্টি নামলেই পাহাড় ধস আতংকে নির্ঘুম রাত কাটায় ঝুঁকিপূর্ণ বাসবাসকারীরা। আতংকে অনেকে নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন, আবার অনেকে অন্যত্র আশ্রয় নেয়ার জায়গা না থাকায় ঝুঁকির মধ্যেই নিজ ঘরে অবস্থান করায় জান-মালের ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছে। এদিকে, শুস্ক মৌসুমের মরা নদী মাতামুহুরী বর্ষা এলেই রুদ্রমুর্তি ধারণ করে। অস্বাভাবিক ¯্রােতের টানে নদীর দু’পাড়ে তখন ভাঙন দেখা দেয়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনে পৌরএলাকা, লামা সদর ইউনিয়ন এবং রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ব্যাপক জনবসতি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়।

এ বিষযে লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়–য়া বলেন, বর্ষা শুরু হতেই বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্যা আতংক শুরু হয়েছে। বন্যা শুরু হলে কোথায় তাদের মালামাল হেফাজত করবে, কিভাবে মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নিবে, সে প্রস্তুতি নিয়ে তারা এখন থেকে ভাবছেন। কারণ বিগত বছরগুলোতে হঠাৎ বন্যার কারণে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার মালামাল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, লামাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কোন কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছেনা। এদিকে লামা বাজার স’মিল এলাকার বাসিন্দা মো. নবীর উদ্দিন, আলী আকবর, হোসনে আরা খুশু ও মো. ইব্রাহীম জানায়, মুষলধারে বৃষ্টি নামলে বন্যার আশংকায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসে থাকতে হয়। পরিবারের মূল্যবান জিনিসপত্র সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়। বর্ষা শুরু হতেই আবারো দুর্ভোগের কথা মনে পড়ে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা শংকিত হয়ে পড়েছেন। এ দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কার্যকরী পদক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, বর্ষা এলেই পৌরসভা এলাকার মানুষের মাঝে বন্যা, পাহাড় ধস ও নদী ভাঙ্গন আতংক দেয়। এসব সমস্যাগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা হয়। সে মতে ইতিমধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় পৌরসভা এলাকা পরির্দশন করে বন্যা মুক্ত ও নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য প্রকল্প গ্রহন করেছেন। আশা করি প্রকল্প মতে কাজ বাস্তবায়ন হলে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে। এজন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির সহযোগিতাও কামনা করেন, পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম।