ডেস্ক নিউজ:
বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ চীন চাইলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান দ্রুত সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফর বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘চীন যদি সিরিয়াসলি চায় তাহলে রোহিঙ্গা ইস্যুর দ্রুত সমাধান হতে পারে।’

‘কারণ মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্কই সবচেয়ে গভীর। অর্থনৈতিক ও কূটনীতিকসহ অনেক ক্ষেত্রেই চীন মিয়ানমারকে শক্তি জোগায়। চীন মিয়ানমারের পাশে থাকার কারণেই চীনের ওপর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাপ প্রয়োগ করেও লাভ হচ্ছে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও মিয়ানমারকে প্রোটেকশন দিচ্ছে চীন। সে কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানে চীনের সহযোগিতা খুবই জরুরি।’

আগামী ১ জুলাই পাঁচ দিনের চীন সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এ সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য চীনের কাছে সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ।

ড. মোমেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা চীনকে বার্তা দিতে চাই যে, দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে যেতে পারে।’

‘সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়লে মিয়ানমারে চীনের যে বিনিয়োগ বা বাংলাদেশে চীনের যে সব কার্যক্রম শুরু হয়েছে সেসব হুমকির মুখে পড়বে,’ যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর উপলক্ষে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট জিইয়ে থাকলে উগ্রবাদের উত্থানের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে চীনের বিনিয়োগ প্রত্যাশা ব্যাহত হবে। এ আশঙ্কার কথা চীনের শীর্ষ নেতাদের জানাবেন প্রধানমন্ত্রী।’

তবে ঢাবির শিক্ষক ড. দেলোয়ার বলছিলেন, ‘চীনের মানসিকতার পরিবর্তনে হয়তো সময় লাগবে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কটাও চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর সফরের ফলে তাদের মধ্যে একটা নতুন উপলব্ধি হতে পারে।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গেও চীনের সম্পর্ক ভালো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের ফলে সেই সম্পর্কের আরও উন্নতি হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের ফলে চীন যদি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে চাপ দেয় তাহলে সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে। আমার বিশ্বাস, চীন প্রধানমন্ত্রীর কথা রাখবে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমারকে বলবে।’

ওয়ালিউর রহমান আরও বলেন, ‘চীন যদি মিয়ানমারকে বলে তোমরা সমস্যা সমাধান না করলে আমরা জাতিসংঘে তোমাদের পক্ষে ভেটো দেব না, তাহলে মিয়ানমার তার অবস্থান পরিবর্তন করবে।’

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন মিয়ানমারকে মদদ দিচ্ছে— আমরা এটা বিশ্বাস করি না। চীনের একটি অবস্থান আছে। তারা আমাদের সাহায্য করছে এবং আমাদের সমর্থন দিয়েছে। চীন বারবার বলেছে— রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফেরত যাক। চীন আরও বলেছে, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করুন। আমরা সেই পথেই আছি। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনও ঝগড়া নেই।’

নিরাপত্তা পরিষদে চীনের ভেটোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের অন্যকোনও উদ্দেশ্য থাকতে পারে।’

সফর সূচি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২ ও ৩ জুলাই চীনের দালিয়ানে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের অধিবেশনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ ও এশিয়ার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবেন। এরপর ৫ জুলাই পর্যন্ত তিনি বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে মোট আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।