মোঃ নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় চলমান রেল লাইন নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণকৃত জায়গায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ায় মেঘা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার চট্টগ্রাম আদালতে আরবিট্রেশন মামলা দায়ের করেছেন। চট্টগ্রাম আদালতে এ ধরনের মামলা এই প্রথম এর আগে কেউ আরবিট্রেশন মামলা দায়ের করেননি।

জানা যায়, দোহাজারী হতে মিয়ানমারের কাছে সিঙ্গেল রেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মান মেঘা প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পূর্বে উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের কাটগড় মৌজা থেকে ভুমি অধিগ্রহন কার্যক্রম সম্পন্ন করে এবং ভূমি মালিকসহ স্থাপনা নির্মানকারী ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন স্তরের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ক্ষতিপূরন প্রদানের ক্ষেত্রে রেল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা সঠিক পাওনা বুঝিয়ে দেননি। কাটগড় মৌজায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জায়গা ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, শো’রুম, ব্যবসায়ীক সুনাম ও ডিপ-টিউবওয়েল থাকলেও শুধুমাত্র ভূমির মূল্য পরিশোধ করেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তা’ও আবার মৌজা দরের অনেকগুন নিন্মে। কাটগড় মৌজা দর প্রতি শতক ২০ লক্ষ টাকা। শিল্প প্লটের মূল্য প্রতি শতক ২৭ লক্ষ টাকা। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভুমি শিল্প প্লট হলেও ব্যবসায়িক অন্যান্য ক্ষতিপূরন বাদ দিয়ে শুধূমাত্র ভূমি বাবদ ন্যায্য পাওনা ১৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। জেলা প্রশসকের হুকুম দখল শাখা কর্তৃক প্রকাশিত ন্যায্য পাওনা পরিশোধ সংক্রান্ত তালিকা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে ভূমি এবং উপরোক্ত ব্যবসায়িক ক্ষতিপূরনসহ সর্বমোট ৭৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সর্বসাকুল্যে পরিশোধ করা হয়েছে ১৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। ভূমি অধিগ্রহনের অর্থ প্রদানের ৬ধারা নোটিশ প্রাপ্তির পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ), রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়ন ঠিকাদার তমা কন্সট্রাকশন এন্ড কোঃ লিমিটেডসহ বিভিন্ন সংস্থার দূয়ারে দূয়ারে ধরনা দিয়ে কোন সুরাহা না পেয়ে অবশেষে যুদ্ধকালীন সময়ের সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা এম. ফজল করিমের জামাতা মো. দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ৫ জনকে বিবাদী করে জেলা জজ আদালতে আরবিট্রেশন মিছ মামলা-১৩৮/১৯ দায়ের করেন। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা তাদের শেষ সম্বলটুকু অধিগ্রহন করায় এবং ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করায় দারুন অর্থ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবকারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, কাটগড় মৌজায় অধিগ্রহনকালে অনেক ভূমি রয়েছে যা’র মৌজা দর অল্প হলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও এল.এ শাখার
কর্মকর্তা কর্মচারীরা অধিগ্রহনকৃত ভূমির ১ শতকের উপর নির্মিত অবকাঠামোর মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকার ক্ষতিপূরন প্রদান করেছেন।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী মো. দেলোয়ার হেসেন বলেন, আমি প্রকৃত পক্ষে অধিগ্রহনকৃত ভূমির উপযুক্ত মূল্য ও আমার ব্যবসায়িক সুনাম, অবকাঠামো ও শো-রুম ও স্থাপিত ডিপ-টিউবওয়েল এর সরকার নির্ধারিত ক্ষতিপূরনে প্রাপ্তির জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মামলার বিবাদী উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) দিপঙ্কর তনচজ্ঞ্যা বলেন, ক্ষতিপূরনের অর্থ প্রদানের বিষয়ে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। কোন এলাকায় ভূমি অধিগ্রহন করা হলে প্রাথমিক পর্যায়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) একটি রিপোর্ট প্রদান করেন। কাজেই সহকারী কমিশনার(ভূমি) কে আরবিট্রেশন মামলার বিবাদী করার কোন যুক্তিকতা নেই। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার ফারুক আহমদের মুঠোফোন(০১৭১১-৫০৫৩০৮) এ বার বার রিং কররেও তিনি রিসিভ করেননি। যোগাযোগ করা হলে তমা কন্সট্রাকশন কোঃ লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার বিমল চন্দ্র সাহা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি অবহিত করছি।