সিবিএন ডেস্ক:

ক্রিকেটের নবীন শক্তি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই উত্থান ঘটেছে আফগানিস্তানের। যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ, এখনও যেখানে নিয়মিত বোমার শব্দ পাওয়া যায়, বুলেটের শব্দে ঘুম ভাঙে কাবুল, কান্দাহার থেকে শুরু পুরো আফগানবাসীর, সেখানে ক্রিকেট এত দ্রুত জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যাওয়া, এবং সেখান থেকে এত ভালো ভালো প্রতিভা বের হয়ে আসাটা সত্যিই বিস্ময়কর।

বিস্ময়কর হলেও তো সত্যি, আফগানিস্তান এখন আইসিসির পূর্ণ সদস্য। টেস্ট খেলুড়ে দেশ। ধীরে ধীরে উন্নতির সোপানে রয়েছে। এ নিয়ে খেলছে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর। এবার যেমন আইসিসির আরেক পূর্ণ সদস্য জিম্বাবুয়েকে দুরে ঠেলে দিয়ে আফগানিস্তানই অর্জন করতে পেরেছে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা।

সেই আফগানিস্তান আজ বাংলাদেশের মুখোমুখি। সাউদাম্পটনের রোজ বোলে বাংলাদেশ সময় আজ বিকেল ৩টায় আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নাইবের সঙ্গে টস করতে নামবেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এরপরের লড়াইয়ে কি হবে? বাংলাদেশ কি জিততে পারবে? টিকিয়ে রাখতে পারবে বিশ্বকাপের সেমিতে খেলার সম্ভাবনা? নাকি ‘আফগান শামুকে’ পা কেটে বসবে টাইগাররা।

অতীত ইতিহাস ঘেঁটে জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য বের করার চেষ্টা করা হয়েছে, আসলে কোথায় আফগানদের চেয়ে এগিয়ে থাকছে বাংলাদেশ, আর কোথায় পিছিয়ে?

ক্রিকেটে আফগানদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা কেবল ৫ বছরের। ২০১৪ সালেই ওয়ানডেতে প্রথম আফগানদের মুখোমুখি হয়েছিল টাইগাররা। যদিও সেই প্রথমবারের মুখোমুখি হওয়াটা কোনোভাবেই সুখকর ছিল না বাংলাদেশের জন্য। সেবার ১ মার্চ নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় আফগানিস্তানের মুখোমুখি বাংলাদেশকে হারের লজ্জায় পড়তে হয়েছে ৩২ রানে।

এরপর বাংলাদেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির মুখোমুখি হয় ২০১৫ বিশ্বকাপে, ক্যানবেরার মানুকা ওভালে। সেখানে অবশ্য দাপটের সঙ্গেই জিতেছিল বাংলাদেশ। আফগানদের হারিয়েছিল ১০৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৭বার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। এর মধ্যে ৪বার জিতেছে বাংলাদেশ, ৩বার আফগানিস্তান। এর মধ্যে বিশ্বকাপে ১ বারই মুখোমুখি এবং ১বারই জিতেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান পরিসংখ্যান

এক নজরে আগের ম্যাচ (৪/৩)

১ মার্চ ২০১৪ : আফগানিস্তান ৩২ রানে জয়ী (ফতুল্লা)

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ : বাংলাদেশ ১০৫ রানে জয়ী (ক্যানবেরা)

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ : বাংলাদেশ ৭ রানে জয়ী (ঢাকা)

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ : আফগানিস্তান ২ উইকেটে জয়ী (ঢাকা)

১ অক্টোবর ২০১৬ : বাংলাদেশ ১৪১ রানে জয়ী (ঢাকা)

২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ : আফগানিস্তান ১৩৬ রানে জয়ী (আবুধাবি)

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ : বাংলাদেশ ৩ রানে জয়ী (আবুধাবি)

ওয়ানডে র‌্যাংকিং

আইসিসি ওয়ানড র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ অবস্থান করছে ৮ নম্বরে। অন্যদিকে আফগানিস্তানের অবস্থান হচ্ছে ১০ নম্বরে। খুব বেশি একটা পার্থক্য নেই।

এবারের বিশ্বকাপে দু’দলের পারফরম্যান্স

এখনও পর্যন্ত ৬ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ২টিতে, হেরেছে ৩টিতে এবং পরিত্যাক্ত হয়েছে একটি। পয়েন্ট ৫। অন্যদিকে আফগানিস্তানও খেলেছে ৬টি ম্যাচ। কোনো জয় নেই, সবগুলোতেই হার।

সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে দুই দল

বাংলাদেশ   আফগানিস্তান
চ্যাম্পিয়ন
১৩ জয়
২৩ হার ১১
টাই/ফল হয়নি
৪.৬০ রান/ওভার ৪.২৩
২৩.৬২ ব্যাটিং গড় ১৮.৯৪
৩০০+ স্কোর
সেঞ্চুরি

দলীয় সর্বোচ্চ রান

বাংলাদেশে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ গড়েছে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৭৯ রান। ২০১৬ সালে মিরপুরে। ওই ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। আফগানিস্তান বাংলাদেশের বিপক্ষে দলীয় সর্বোচ্চ রান করেছে একই বছর, মিরপুরেই ২৫৮ রান। তবে সর্বোচ্চ রান করেও জিততে পারেনি তারা। বাংলাদেশের ২৬৫ রানের জবাবে ২৫৮ রানে অলআউট হয় তারা।

BD-AFG

দলীয় সর্বনিম্ন

আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলীয় সর্বনিম্ন রানের লজ্জার রেকর্ড গড়ে গত বছর এশিয়া কাপে। আফগানদের বোলিংয়ের সামনে মাত্র ১১৯ রানে অলআউট হয়ে যায় টাইগাররা। ওই ম্যাচে আফগানিস্তান জয় পায় ১৩৬ রানের বড় ব্যবধানে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানদের দলীয় সর্বনিম্ন ১৩৮ রান। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের করা ২৭৯ রানের জবাবে ১৩৮ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান।

সবচেয়ে বেশি রান

আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বেশি রান হচ্ছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ৬ ম্যাচ খেলে ৬ ইনিংসে তিনি বরেছেন ২৪৩ রান। সর্বোচ্চ ৭৪, গড় ৪৮.৬০ করে। হাফ সেঞ্চুরি দুটি। ২৩৭ রান রয়েছে তামিম ইকবালের। তার একটি সেঞ্চুরিও রয়েছে। তবে আফগানদের বিপক্ষে তামিম খেলেছেন কেবল ৪ ম্যাচ।

বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হচ্ছেন হাশমতউল্লাহ শহিদি। ২১৫ রান করেন তিনি।

ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ রান

আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান হচ্ছেন তামিম ইকবাল। যে ম্যাচে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ২৭৯ রান করেছিল, ওই ম্যাচেই ১১৮ রানের ইনিংস খেলেন তামিম। বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানদের মধ্যে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৯০ রান করেছেন আসগর আফগান, ২০১৪ সালে ফতুল্লায় এই ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে হারান তিনি।

সবচেয়ে বেশি উইকেট

বাংলাদেশের হয়ে আফগানদের বিপক্ষে সবচেয়ে সফল বোলার হচ্ছেন সাকিব আল হাসান। ৬ ম্যাচ খেলে ১৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। সেরা বোলিং ৪২ রানে ৪ উইকেট। আফগানদের হয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হলেন মোহাম্মদ নবি। তিনি নিয়েছেন ১১ উইকেট।

সেরা বোলিং

আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সেরা বোলিং ফিগারটির মালিক সাকিব আল হাসান। ৪২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছিল তিনি, গত বছর আবুধাবিতে। আফগানদের হয়ে ৭৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব রয়েছে দৌলত জাদরানের। ২০১৬ সালে মিরপুরে।