ডেস্ক নিউজ:
ওসি মোয়াজ্জেমফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে ঢাকার সিএমএম আদালতে আনা হয়েছে। সোমবার (১৭ জুন) দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে তাকে সিএমএম আদালতে এনে এখানকার হাজতখানায় রাখা হয়েছে। সাইবার ট্রাইবুনালের কার্যক্রম দুপুর ২টায় শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নজুরুল ইসলাম শামীম।
এর আগে মোয়াজ্জেম হোসেনকে সোমবার সকালে সোনাগাজী পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে শাহবাগ থানা পুলিশ। সোনাগাজী থানার ওসি মাঈন উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, একজন সাব ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে সোনাগাজী থানা পুলিশের একটি টিম ঢাকায় অবস্থান করছে। তাদের কাছেই ওসিকে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারাই তাকে সোমবার দুপুরের পর আদালতে নিয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর রবিবার (১৬ জুন) ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ।

ডিএমপি রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে কিছুক্ষণ পর আদালতে উপস্থাপন করা হবে।’

রবিবার (১৬ জুন) ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ওসি মোয়াজ্জেমকে আদালতে হাজির করা হলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও জামিনের বিরোধিতা করতে সর্বোচ্চ প্রস্ততি রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আসামি ওসি মোয়াজ্জেম যেন জামিন না পান, সেজন্য আমরা আইনগত সব ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আইনগত যতো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আছে, আমরা আদালতে উপস্থাপন করব। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনে ২৬, ২৯ ও ৩১-এর তিনটি ধারায় মামলা করা হয়েছে। এই ধারাগুলোর মধ্যে ২৬ ও ৩১ দুটি ধারায় জামিন অযোগ্য। শুধু ২৯ ধারাটি জামিনযোগ্য। আমরা জামিন বিষয়ে সর্বোচ্চ বিরোধিতা করবো।’

প্রসঙ্গত, ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি মোয়াজ্জেম। পরে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েও দেন তিনি।

ভিডিও করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ১৫ এপ্রিল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সুমন। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ ও মামলার নথি পর্যালোচনা করে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এরপরও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তিনি আত্মসমর্পণও করেননি।

পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, গত ৮ মে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি রংপুর রেঞ্জ অফিসে যোগ দেন। গত ক’দিন থেকে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে ফেনী ও রংপুর পুলিশের ঠেলাঠেলি চলছিল। ঈদের আগে সেখান থেকে নিরুদ্দেশ হন ওসি মোয়াজ্জেম।

এর আগে, গত ৬ এপ্রিল এইচএসসি সমমানের আলিম আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা নুসরাত জাহান রাফিকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান।