মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া:
চকরিয়ায় একের পর এক লোমহর্ষক আর বীভৎস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে। বেড়েছে চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাসী, মাদক ও অবৈধ বালু উত্তোলন। একের পর এক হত্যাকান্ডের ঘটনায় কে কখন হত্যার শিকার হয় তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। এসব হত্যাকান্ডের ঘটনায় আসামীরাও পার পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বারে বারে চিংড়ী ঘেরে খুন, ডাকাতি ও লুটপাটে চাষীরা আগ্রহ হারাচ্ছে মৎস উৎপাদনে। আর যারা চলতি মৌসুমে চিৎড়ী উৎপাদনে মাঠে নেমেছে তারাও প্রতিনিয়ত আতংকে দিনপাত করছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চকরিয়ায় ২০১৯ সালের গত ১৭ মে থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত খুনের ঘটনায় ৭ টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কোথাও মারধর করে রগ কেটে, মুখ-হাত-পা বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে, শরীরে এসিডদগ্ধ করে নরক যন্ত্রণা দিয়ে, জনসম্মুখে ছুরিকাঘাতে, আবার কোথাও বাসায় ডুকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
গত ১৫ জুন (শনিবার) চকরিয়ার ডেমুশিয়া জমিদার পাড়া এলাকায় বসতভিটে বিরোধে ছোট ভাইয়ের আঘাতে বড় ভাই খুন হয়েছে। ওই এলাকার মৃত নুরুল হকের ছেলে মনিরুল হক লোহার রড দিয়ে তার বড়ভাই বদিউল আলম (৪৫)কে গুরুতর আঘাত করে। চমেক হাসপাতালে নেওয়ার পথে আহতের মৃত্যু হয়।
গত ১৩ জুন (বৃহস্পতিবার) সকালে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বেলজিয়াম বাগানের মধ্য থেকে মাসুক আহমদ (৫৬) নামের রিক্সা চালকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে পার্শ্ব সীমানাস্থ লামা ফাঁসিয়াখালীর মৃত আবদুস শুক্কুরের ছেলে। পরিবারের দাবী তাকে এসিডদগ্ধ করে শরীর ঝলসিয়ে পরিকল্পিত খুন করা হয়েছে। এর আগেও বাগান সীমানার বিরোধ নিয়ে চকরিয়া উপজেলার পালাকাটার লোকজন হামলা ও মারধর করে। তারা মাসুক আহমদকে পরিকল্পনা মতে খুন করে লাশ চকরিয়া উপজেলা সীমানায় রেখে আসে বলে জানায় নিহতের স্বজনরা।
একইদিন ১৩ জুন (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চরণদ্বীপ মৎসঘের এলাকায় ডাকাতের গুলিতে কাঁকড়া ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ (৩৫) নিহত হয়েছে। ওই মৎস ঘেরে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে এর আগের দিন বিকেল ৩টা থেকে সারা রাত ডাকাত দল অনবরত গুলি বিনিময় করছিল। তারা একপর্যায়ে বাড়িতে ঢুকে আবদুল হামিদকে খুন করেছে বলে নিহতের স্বজনরা দাবী করে।
গত ১২ জুন (বুধবার) চকরিয়ার কোনাখালী বাংলা বাজার এলাকায় নদীতে ভাটার টানে কূলে আসা অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মাতামুহুরি নদী থেকে উদ্ধার করা এ মৃতদেহের মুখ হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ছিল। ধারণা করা হচ্ছে আশপাশের এলাকায় কেউ খুন করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে তাকে।
গত ৩ জুন (সোমবার) রাতে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পুলিশ অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে। কে বা কারা লোকটিকে খুন করে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ লাশের মুখে ও চোখে আঘাতের চিহ্ন সনাক্ত করে।
গত ২৫ মে (শনিবার) সন্ধায় চকরিয়া পৌরসভা মার্কেটে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে আনাস ইব্রাহীম নামের সদ্য এসএসসি পাশ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এ-সময় তার নাড়িভুড়ি বেরিয়ে যায়। এটি পরিকল্পিত খুন বলে জানান তার স্বজনরা। এ ঘটনায় কয়েকজনকে পুলিশ আটক করেছে বলে জানা গেছে।
গত ১৭ মে (শুক্রবার) চকরিয়ার চরণদ্বীপ চিংড়ী ঘেরে সন্ত্রাসীদের হামলায় শ্রমিক বেলাল উদ্দিন (৩৬) চমেক হাসপাতালে নিহত হয়। সে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ডুমখালী এলাকার জাফর আলমের পুত্র। এর আগে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা মৎস ঘেরে তাকে খুনের উদ্দেশ্যে অমানুষিক মারধর করে। প্রায় পাঁচদিন চিকিৎসা শেষে সে হাসপাতালে মারা যায়।
এভাবে যদি চলতে থাকে আইনের প্রতি বিশ্বাস হারাবে চকরিয়ার জনগণ। ধ্বংস হবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম চিংড়ী খাত। কাগজে কলমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার তালিকা অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান নিরীহ জনগণের।