মাহদী হাসান রিয়াদ:
প্রথমপ্রথম যখন স্কুলে গেলাম,দেখলাম (১৬ ডিসেম্বর) এবং (২৬ মার্চ) ভিন্নরকম অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে। আনন্দে মেটে উঠছে সবাই।ফুলের তোড়ায় ভরে যাচ্ছে শহীদ মিনার।
পরতে-পরতে দেখা মিলছে লাল-সবুজের পতাকার। দেশাত্মবোধক গানে মুখরিত হচ্ছে চারদি।

কিন্তু এই অনুষ্ঠান কেন? চিন্তায় পরে গেলাম!
পরে একদিন বিষয়টি ক্লিয়ার করলেন স্যার। শোনালেন স্বাধীনতার ইতিহাস। বললেন পাক-হানাদারদের অমানবিক অত্যাচের কথা! আমি ও অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে ইতিহাস শুনলাম। হলফ করে বলছি; সেদিন আমার অন্যরকম ভালো লেগেছিলো। তবে কষ্ট ও পেয়েছি ঢের!

সেদিন আত্মগৌরবে শির উঁচিয়ে সুজলা-সুফলা দেশটিকে দেখলাম মনোপ্রাণ উজাড় করে ।
মনকে সেদিন বুক ফুলিয়ে বলে ছিলাম; হ্যাঁ,আমি স্বাধীন মানব,আমি স্বাধীন দেশের সন্তান, বীরের জন্মভূমিতে আমার জন্মলাভ। সেদিন আমি ও হেসে ছিলাম বিজয়ের হাসি।

বড়ো হলাম। চিনতে শুরু করলাম ‘ভালো-মন্দ’।বুঝতে সক্ষম হলাম স্বাধীনতার সংজ্ঞা।দেশকে রাখলাম একদিকে। অপর দিকে রাখলাম স্বাধীনতাকে। ভারাক্রান্ত মনে বলতে বাধ্য হচ্ছি;আজও স্বাধীনতার হিসেবটা মেলাতে পারিনিই!

আজও দেখিনি আমি, বঙ্গবন্ধুর ন্যায় দীপ্ত কণ্ঠে নির্ভয়ে হুংকার দেওয়ার মতো একজন নিষ্ঠাবান নেতা।
পেলাম না আমি মেজর জিয়ার মতো জনদরদী নেতা। আফসোস, কেবল ইতিহাসই পড়লাম এই দেশের। বাস্তবে কী দেখলাম!

আমার দেখা রাজনৈতিক ময়দানে কেবল দেখেছি হরতাল। ক্ষমতাসীন দল আর বিরোধী দলের কোন্দল।
রক্তের হলি খেলা, রক্তে-রঞ্জিত রাজপথ!
টিভির পর্দায় দেখেছি নেতাদের প্রতিহিংসার অগ্নিশিখা, সাধারণ জনগণের গাড়িতে আগুন।
কখনো এই দলের রাজত্ব, আবার কখনো ওই দলের রাজত্ব, জনগন যেনো বলির পাঁঠা।
রাজনৈতিক ময়দান যে আরো কী দেখাবে, আল্লাহই ভালো জানেন।

এই দেশে আমি আরো অনেক কিছু দেখেছি। কিন্তু বলতে আমার লজ্জা লাগে। তবুও যে বলতেই হবে।
আমি নাচতে নেমেছি। ঘোমটা দিয়ে তো আর লাভ নেই।
দেখেছি আমি সীমান্তের বেড়াজালে স্বদেশী নাগরিক ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ। শিক্ষকের হাতে ছাত্রী ধর্ষণ, শিক্ষকের ইন্ধনে ছাত্রীর গায়ে আগুন।
বারোবছর বয়সী কিশোরের হাতে; শতো বছরের বৃদ্ধা ধর্ষিত, স্কুল ছাত্রের গায়ে বাসের চাকা, মন্ত্রী সাহেবের বিবিধ হাসি। আব্বু কান্না করতেছো যে? দু-চারটি গোলাবারুদের শব্দ, অতঃপর কুরুচিপূর্ণ ইতিহাসের জন্ম।
দুর্নীতির কথা কি আর বলবো? তা-তো সবাই জানেন।

কিন্তু স্বাধীন দেশে এতো সমস্যা কেন?
দেশকে স্বাধীন করেছিলো একটু শান্তির জন্য, বুক ফুলিয়ে বেঁচে থাকার জন্য। আমরা কী পেরেছি শহীদদের মনোবাসনা পূরণ করতে? না,পারিনিই। ব্যর্থ হয়েছি আমরা।
‘শেখ মুজিব’ আর ‘জিয়াউর রহমানের’ স্লোগান মুখস্থ করেছি। তাদের পোষাক স্টাইলে নিজেকে পরিপাটি করে সাজিয়েছি কেবল।মূল সমস্যা হলো, তাদের মতো করে কখনো ভাবিইনি আমরা।
আমরা কেবল পকেট ভর্তি করায় মত্ত, নিজেদের রাজত্ব কায়েম করতে ‘ধানের শীষ আর নৌকাকে সাইনবোর্ড বানিয়েছি। যার কারণে অনিয়ম অনাচার চারদিক থেকে চেপটে ধরেছে আমাদেরকে।

বন্ধু, আরো ক’দিন এভাবে চলবে?
ভুলে যেওনা তুমি বীরের জাতি, চোরের জাতি নও।
চলো, হাতে-হাত রেখে সম্মুখে চলি। বইয়ের ইতিহাসকে এবার বাস্তব রূপে-রূপান্তরিত করি ।বিশ্ব এবার দেখুক, আমরা চোর নই, আমরা বীর।