প্রথম আলো:

ঘূর্ণিঝড় মোরার কবলে পড়ে ঘর ভেঙে যায় জেলে ছমি উদ্দিনের। এরপর থেকে পলিথিন ঘেরা ছাপড়া ঘরে বসবাস পরিবার নিয়ে। অবশেষে গত বছরের জুনে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন ঘরের বরাদ্দ পান। দুঃখ ঘুচে যাওয়ার আশায় দিন গোনে জেলে পরিবারটি। কিন্তু এখনো নতুন ঘর নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়নের ষাইটপাড়ার বাসিন্দা ছমি উদ্দিনের মতো অবস্থা একই ইউনিয়নের ১৫০ গৃহহীন পরিবারের। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২–এর ‘যার জমি আছে, ঘর নাই’ প্রকল্পের আওতায় নতুন ঘরের বরাদ্দ পায় পরিবারগুলো।

গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে ছমি উদ্দিনের ভিটায় দেখা যায়, ঘরের কাজ বলতে শুধু কয়েকটি খুঁটি বসানো হয়েছে। ঘরের মেঝে, দেয়াল ও চালার কাজ হয়নি।

ছমি উদ্দিন বলেন, ‘নতুন একটি ঘর বরাদ্দ পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু ঘরের ২৫ শতাংশের কাজ শেষ না হতেই নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পরিবার–পরিজন নিয়ে দিন কাটছে অন্যের বসতবাড়িতে।’ ছমি উদ্দিনের পরিবারে রয়েছে স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে।

একই অবস্থা দেখা গেছে ষাইটপাড়ার আরেক বাসিন্দা ফেরদৌস বেগমের ভিটায়ও। তিনি বলেন, অর্ধেক কাজ শেষ না হতেই বন্ধ হয়ে ঘরের নির্মাণকাজ। এখন পরিবার–পরিজন নিয়ে রাত কাটছে বেশ কষ্টে। বৃষ্টি এলে অন্যের ঘরে আশ্রয় নিতে হয়।

মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নির্দেশে গত বছর জুনে ১৫০টি ঘর নির্মাণকাজ শুরু করেছিলাম। এতে আমি নিজেই প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করে ১২০টি নতুন ঘরের অর্ধেকের বেশি কাজ শেষ করি। বাকি ৩০টি ঘরের কাজ শেষ হয়েছে ২৫ শতাংশের মতো। কিন্তু বরাদ্দের অভাবে নির্মাণকাজ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এখন এক বছর ধরে ঝুলে আছে ১৫০টি ঘরের নির্মাণকাজ। জরুরি ভিত্তিতে ঘর নির্মাণ শেষ না করলে, বর্ষায় এসব পরিবার কষ্ট পড়বে।’

  • কক্সবাজারের মহেশখালী

  • গত বছরের জুনে গৃহহীনদের নতুন ঘর নির্মাণ শুরু হয়

  • কিন্তু বরাদ্দের অভাবে এসব ঘর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে আছে

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২–এর ‘যার জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের আওতায় ৪৯৫টি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। একেকটি ঘরের পেছনে ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ টাকা। সাড়ে ১৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ১০ ফুট প্রস্থের ঢেউটিনের এক কক্ষের ঘরের সামনে রয়েছে ৫ ফুটের বারান্দা। পাশাপাশি প্রতিটি পরিবারের জন্য থাকছে একটি করে শৌচাগার।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ৪৯৫টির মধ্যে ৩০০টি ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায়। বাকি ১৯৫টি ঘর নির্মাণের জন্য কোনো বরাদ্দ মেলেনি। এর মধ্যে মাতারবাড়ীর ১৫০টি ঘরও রয়েছে। এদিকে বরাদ্দ পাবে এই আশায় গত বছরের জুনে মাতারবাড়ী ইউনিয়নে ১৫০টি ঘরের নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। এসব ঘর নির্মাণের বরাদ্দ পেতে ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত অর্থবছরে ৩০০টি ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পেয়েছি। আর সেই ঘরের নির্মাণকাজ গত বছরই শেষ করা হয়েছিল। কিন্তু বরাদ্দ ছাড়াই মাতারবাড়ীতে ১৫০টি নতুন ঘর নির্মাণের কাজ কীভাবে শুরু করেছিল, তা আমার জানা নেই।’