নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার শহরে সবচেয়ে বড় এবং আধুনিক ইসলামিয়া বরফকল সহ শত কোটি টাকার জমি দখলের পাঁয়তারা করছে টেকপাড়া এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ি ও সন্ত্রাসী ফয়েজুল হক পান্নু ও তার লালিত সন্ত্রাসীরা। তার বাবা মরহুম নুরুল হক কোম্পানীর দেওয়া ৮০ লাখ টাকার মধ্যে তিনি জীবিত থাকতে এবং মৃত্যুর পরে ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা নিয়েছে। এর পরও জোরপূর্বক তার ছেলে পান্নু গং আরো টাকা পাওয়ার দাবী করে ৪ বছর ধরে বরফকল দখল করে পরিচালনা করে প্রায় ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। এর পরও ভুক্তভোগীদের কোন হিসাব না দিয়ে উল্টো এখন সব কিছু দখল করার পাঁয়তারা করছে। এছাড়া মিথ্যা ঘটনা দেখিয়ে ইতি মধ্যে একাধিক মামলা করেছে। বুধবার বিকালে কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেছেন শহরের টেকপাড়া আবু ছৈয়দ কোম্পানী ও মোক্তার আহামদের পরিবার। তারা সন্ত্রাসীদের হাত থেকে শতকোটি টাকার বরফকল উদ্ধারসহ নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অসহায় নির্যাতিত আবু ছৈয়দ কোম্পানী এবং মোক্তার আমাম্মদ কোম্পানীর পরিবারের পক্ষে আবু ছৈয়দ কোম্পানী মেয়ে জুবাইদা খানম রেশমী লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন আবু ছৈয়দ কোম্পানীর স্ত্রী রেহেনা আক্তার, কন্যা জুলেখা খানম পাপড়ী।

লিখিত বক্তব্যে ছৈয়দ কোম্পানী মেয়ে জুবাইদা খানম রেশমী বলেন, ১৯৯৯ সালে আমার পিতা শহরের মাঝেরঘাট এলাকা গড়ে তুলেন জেলা শহরের সব চেয়ে বরফ কল এবং সুবিশাল জেটি, সাথে আমার পিতার ২৪ টি বোট ছিল প্রায় হাজার খানেক কর্মচারী ছিল। পরবর্তীতে আমার পিতা কিছু নিকট কর্মচারীর বিশ^াসঘাতকতার কারনে ধারদেনা হলে স্থানীয় নুরুল হক কোম্পানী থেকে ২৯/৪/২০০৮ সালে ৮০ লাখ টাকা ধার নেয়। এর মধ্যে সেই টাকার বিপরীতে নুরুল হক কোম্পানী নিজে এবং উনার মৃত্যুর পর উনার স্ত্রী রশিদ মূলে প্রায় ২ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা গ্রহন করে। তারও পরে ২০১৩ সালে নুরুল হক কোম্পানী নিজে এবং উনার স্ত্রী ছেলেরা রশিদ মুলে আসল টাকা হতে ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা গ্রহন করে। পরবর্তীতে উনার ছেলে আরো টাকা পাওনা আছে দাবি দাবী করে আমাদের বরফকল বন্ধ করে দেয়। বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় আরো ২ কোটি টাকা পাওনা দাবী করে একটি চুক্তি করে। যেহেতু আমাদের কোন উপযুক্ত ভাই নেই বাবা এবং তার শরীকদার মোক্তার আহামদও অসহায় তাই বাধ্য হয়ে তা মেনে নিয়ে বরফকল পরিচালনার একটি চুক্তি করি।

জুবাইদা খানম রেশমী অভিযোগ করে বলেন, চুক্তির কোন শর্ত নুরুল হক কোম্পানী ছেলে ফয়েজুল হক পান্নু পাত্তা না দিয়ে ৪ বছর মিল পরিচালনা করে। প্রায় ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে উল্টো আমার বাবার নামে ২৫ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখে উনাকে মামলা দিয়ে ফেরারী আসামী করা হয়েছে। এই ৪ বছরে বরফ বেচাকেনার কোন হিসাব আমাদের দেয়নি। বরং জেটি, কর্মচারীর বেতন, অফিস ভাড়াসহ সব টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমরা অনেকের কাছে বিচার দিয়ে কোন সুরাহা না পেয়ে ৩/৯/২০১৮ সালে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করি। যার নাম্বার ১৩৫৮/১৮। বিজ্ঞ আদালত বিষয়টি পুলিশ বুরো অব ইনবেষ্টিগেশনে তদন্ত ভার দিলে । কক্সবাজার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শাহ আলম সরকার। পিবিএই এর প্রতিবেদন আমাদের পক্ষে এলেও তা পাত্তা দেয়নি পান্নু।

তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাসী এবং মাদক কারবারী ফয়েজুল হক পান্নু আমাদের বরফমিল দখল করে সেখানে মাদকসেবীদের এনে মাদকের আখড়ায় পরিণত করেছে এবং বরফমিলে বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ নিয়ে গেছে। জেটি ভেঙে নিয়ে গেছে। ফার্নিচার বিক্রি করে দিয়েছে। তারা সেখানে রাতে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় নৃত্য করে। এসবের প্রতিবাদ করলে উল্টো আমাদের মারধর করে এবং গালিগালাজ করে। উল্টো আমাদেরকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে থানায় এজাহার, অভিযোগ সাধারণ ডায়রী করতে করতে কাগজের স্তুপে পরিনত হয়েছে। কিন্তু কোন আইনী সহায়তা পায়নি। টাকার কাছে সব কিছু অসহায় হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ২৬/৫/২০১৯ সন্ত্রাসী পান্নু মাতায় অবস্থায় আমার কলেজ পড়–য়া ভাইকে বিনা কারনে মারধর করে। মার খেয়ে সে প্রাণ ভয়ে পালানোর সময় সন্ত্রাসী পান্নু মটর সাইকেল নিয়ে তাকে ধাওয়া করে। এসময় গেইটের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়ে আঘাত প্রাপ্ত হয়। পরে এ ঘটনায় আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দায়ের করে থানায়। এখন আমার ভাই পলাতক। কিন্তু আমাদের এত নির্যাতন করছে আমরা কোন আইনী সহায়তা পাচ্ছি না। তারা সব সময় সরকারী দল আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এর মধ্যে আমরা বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরীকে জানালে উনারা এসে আমাদের কিছুটা সহায়তা করেছে। তবে আমরা কোন মতে এই সন্ত্রাসী পান্নু গংদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। আর বরফমিলটি চালু করতে পারছি না।

তাই মাননীয় পুলিশ সুপার সহ জেলার সর্বমহলের কাছে অসহায় নির্যাতিত এই পরিবারের আহবান- কুখ্যাত মাদক কারবারী পান্নু গংদের হাত থেকে আমাদের বাচাঁন। ইসলামিয়া বরফকলসহ শত কোটি টাকা জমি দখলের পাঁয়তারা হ সকল ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচতে আমাদের সহায়তা করুন।