ডেস্ক নিউজ:

ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আত্মসমর্পণের সুযোগ দিতে চায় পুলিশ। দু’-একদিনের মধ্যেই তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন বলে জানিয়েছে পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো। একইসঙ্গে তিনি যেন কোনোভাবেই দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন সেজন্য দেশের সবক’টি বন্দরকে সতর্ক করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে স্থল ও বিমানবন্দরগুলোতে ফ্যাক্সবার্তা পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন এখনও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেননি বলে তারা নিশ্চিত। দু’-একদিনের মধ্যেই তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন। বর্তমানে উচ্চ আদালতে অবকাশকালীন বেঞ্চ চলছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এ বেঞ্চে তার আগাম জামিনের শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি এই দু’দিন শুনানি না হয় তাহলে তার আত্মসমর্পণ কিংবা গ্রেফতার হওয়া ছাড়া আর কোনও পথ নেই বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন।
ফেনীর সোনাগাজী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সাইকুল আহমেদ ভুঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতারে আমাদের একটি দল তার যশোরের গ্রামের বাড়িতেও অভিযান চালিয়েছে। ঢাকায় একটি দল অবস্থান করছে। গ্রেফতার এড়িয়ে তিনি যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে সব স্থল ও বিমানবন্দরে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা হাতে এসেছে বলে জানিয়েছে দিনাজপুর সীমান্তের হিলি চেকপোস্ট কর্তৃপক্ষ। ওই চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ কবির বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন যেন কোনোভাবেই এই পথ ব্যবহার করে ভারতে পালিয়ে যেতে না পারেন, এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা আমরা সদর দফতর থেকে পেয়েছি।’

সব ইমিগ্রেশনে নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি মো. সোহেল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন যেন পালিয়ে যেতে না পারেন এবং তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল আইনে দায়ের করা মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগামী ১৬ জুনের মধ্যে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করা না হলে কিংবা তিনি আত্মসমর্পণ না করলে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল এইচএসসি সমমানের আলিম আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান। এর আগে নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার মা শিরীন আক্তার বাদী হয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। পরে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন তিনি। এ ঘটনায় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গত ১৫ এপ্রিল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল আইনে মামলাটি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। এরপর ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ওই আদালত।