ডেস্ক নিউজ:

ডিআইজি মিজানুর রহমান (ফাইল ফটো)দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমে দুদক কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন— এমন অভিযোগের পক্ষে ঘুষ লেনদেনের অডিও কথোপকথন প্রকাশ করে আবারও আলোচনায় পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি মিজানুর রহমান। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে যিনি দুর্নীতি থেকে বাঁচতে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে পারেন তার সম্পদের পরিমাণ কত?
এ ব্যাপারে দুদক ও পুলিশ সদর দফতরে খোঁজ নিলে ডিআইজি মিজানের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণা করে বিপুল সম্পদ গড়ার তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হয়েও ডিআইজি মিজান কীভাবে ঘুষ দিতে পারেন, যেখানে ঘুষ দেওয়া ফৌজদারি অপরাধ।
ডিআইজি মিজানের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি পুলিশ হেডকোয়াটার্সের দৃষ্টিতে এসেছে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তবে এই ঘুষের অভিযোগে এরই মধ্যে দুদক কর্মকর্তা বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
দুদকের তথ্য বলছে, ডিআইজি মিজান শুধু নিজের নামেই সম্পদ গড়েননি, ভাই ও ভাগ্নের নামেও সম্পদ করে দিয়েছেন।
মিজানের সম্পদের কিছু তথ্য:
১. সাভারে পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটিতে নিজের নামে ৫ কাঠা জমি।
২. পূর্বাচল নতুন শহর এলাকায় ৫ কাঠা জমি।
৩. ঢাকায় পুলিশ অফিসার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির পুলিশ টাউনে সাড়ে ৭ কাঠার প্লট।
৪. বরিশালের মেহেদিগঞ্জ পৌরসভায় ৩২ শতাংশ জমিতে ২ হাজার ৮০০ বর্গফুটের দোতলা ভবন।
৫. স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্নার নামে উত্তরা রেসিডেন্সিয়াল মডেল টাউনে ১ হাজার ৭৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট।
৬. রাজধানীর নিউ বেইলি রোডে ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান স্বপনের নামে ২ হাজার ৪০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট।
৭. রাজধানীর কোতয়ালী থানার পাইওনিয়ার রোডে ভাগ্নে এসআই মাহমুদুল হাসানের নামে ১ হাজার ৯১৯ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট।
৮. কানাডার টরন্টোতে আছে ডিআইজি মিজানের নামে একটি ফ্ল্যাট।
৯. একটি কালো পাজেরো জিপ ব্যবহার করেন ডিআইজি মিজান। তবে তার প্রকৃত মালিক কে, সে বিষয়ে তথ্য জানাতে পারেনি দুদক।
এ ছাড়া মিজানের দুই সন্তান কানাডায় পড়াশোনা করে। তাদের জন্য মাসে খরচ ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।
বরখাস্ত হওয়া দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির গত ২৩ মে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশসহ অনুসন্ধান প্রতিবেদন সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে জমা দেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিআইজি মিজানের ৪ কোটি ২ লাখ ৮৭ হাজার টাকার সম্পদ আছে। এর মধ্যে তার নিজের নামে আছে ১ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার টাকার স্থাবর ও ৯৬ লাখ ৯২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ। বাকিটা আছে ডিআইজি মিজানের আত্মীয়-স্বজনের নামে আছে।
দুদক জানায়, ডিআইজি মিজান তার আয়কর নথিতে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ডিআইজি মিজানের স্ত্রী রত্নার বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়নি। তবে তার বিরুদ্ধে এখনও অনুসন্ধান চলছে।
দুদক সূত্র জানায়, ডিআইজি মিজানের কানাডার ফ্ল্যাটসহ আরও কিছু সম্পদের তথ্যও আছে। আছে তার সন্তানদের বিদেশে পড়াশোনা, তাদের ভর্তি, টিউশন ফি, থাকা-খাওয়ার খরচসহ আরও নানা তথ্য। তবে সেসব তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন সময়সাপেক্ষ বিষয়। ডিআইজি মিজানের স্ত্রী রত্না বছরে প্রায় অর্ধেক সময়ই কানাডায় থাকেন বলেও দুদকের কাছে তথ্য আছে।
দুদক সূত্র জানায়, রত্না আয়কর নথিতে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ৮৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৫ টাকার তথ্য দিয়েছেন। আর তার আয়ের উৎস পাওয়া গেছে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮৩ টাকার।
ডিআইজি মিজান বিপুল সম্পদের মালিক— এমন অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি দুদক উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ৩ মে ডিআইজি মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১১ জুলাই মিজান ও তার স্ত্রীর সম্পদবিবরণী চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়। তবে তারা আয়কর নথি জমা দিলেও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের কোনও তথ্য জমা দেননি।
দ্বিতীয় বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আছে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে প্রভাব খাটিয়ে গ্রেফতারের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর গ্রেফতার হন মরিয়ম। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি। এক সংবাদ পাঠিকা ও এক নারী রিপোর্টারকে যৌন হয়রানির অভিযোগ আছে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে। পুলিশের নিয়োগ, বদলিতেও একসময় ভূমিকা রাখতেন তিনি। গ্রেফতার ও মামলা দিয়ে হয়রানি করে টাকা আদায়ের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত, ডিআইজি মিজান ঢাকার জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন। সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনারও ছিলেন তিনি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ছিলেন। পরে সেখান থেকে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়।