ডেস্ক নিউজ:
ঘূর্ণিঝড় ফণীর পর পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে ভয়াবহ কনটেইনার ও জাহাজ জট দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে জেটিতে এবং বহির্নোঙরে ৫০ থেকে ৭০টি জাহাজের অবস্থান থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ৮৭টি। এরমধ্যে বন্দরের প্রধান জেটিতে ১৬টি এবং বহির্নোঙরে ৭১টি জাহাজ অবস্থান করছে। এ অবস্থায় জাহাজের গড় অবস্থান সময় বাড়তে থাকায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা।

মূলত ঈদের টানা ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস কমে যাওয়ায় সৃষ্টি হয় কন্টেইনার জটের। তার প্রভাব পড়েছে জাহাজের গড় অবস্থানকালীন সময়েও। আগে প্রতিটি জাহাজ দু’ থেকে তিন দিনের মধ্যে পণ্য খালাস করে বন্দর ত্যাগ করলেও এখন বহির্নোঙরেই থাকতে হচ্ছে ৫ থেকে ৭ দিন।

বন্দর সূত্র জানায়, ঈদের আগের এবং পরের তিনদিন মহাসড়কে পণ্যবাহী যানচলাচল এবং অধিকাংশ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। আমদানিকারকরা এ জন্য পণ্য ডেলিভারি নিতে অনাগ্রহী হওয়ায় এ জট সৃষ্টি হয়। এ কারণে গত রোববার (৯ জুন) পর্যন্ত বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত প্রায় ৪ হাজার কনটেইনার জমে যায়।

চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে জাহাজ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার কনটেইনার নামানো হচ্ছে। বিপরীতে ডেলিভারি হচ্ছে ৪ হাজারের মত। এতে কনটেইনার জট আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে মে মাসের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে কয়েক দিন জাহাজ চলাচল এবং ডেলিভারি বন্ধ ছিল। এ কারণে সে সময় বন্দরের জেটিতে প্রায় ৩৩ হাজার কনটেইনার আটকা পড়ে।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ও জাহাজ জট দেখা দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংগঠন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই)।

মঙ্গলবার (১১ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে কনটেইনার জট কমাতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সিসিসিআই সভাপতি খলিলুর রহমান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে ধারণ ক্ষমতার বাইরে প্রায় ৪ হাজার কন্টেইনার জমে গেছে- এমন খবরে ব্যবসায়ী মহলে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবে আমদানি পণ্যের চালান সময় মতো ডেলিভারি না হলে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। সেই সঙ্গে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, দেশীয় শিল্প উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হলে রফতানির ক্ষেত্রেও এর মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের শিপমেন্ট বিঘ্নিত হলে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার বাতিলও করতে পারে। এর ফলে রফতানিমুখী পোশাক শিল্পের মালিকগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের ধারণ ক্ষমতা ৪৯ হাজার টিইউএস। রোববার (৯ জুন) পর্যন্ত বন্দরে কনটেইনার ছিল ৪২ হাজার ৪২৫ টিইউএস। যদিও ইয়ার্ডে ক্রেনসহ কনটেইনারবাহী বিভিন্ন যান চলাচলের সুবিধার্থে ৩০ শতাংশ জায়গা খালি রাখতে হয়।

ঈদুল ফিতরের ৯ দিনের ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার খালাস হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি। বিপরীতে শনিবার (৮ জুন) পর্যন্ত বন্দরের ইয়ার্ড থেকে কন্টেইনার বের করা হয়েছে প্রতিদিন মাত্র সাড়ে তিনশ’র মতো। তাই প্রায় ৪০ হাজার কনটেইনারের স্তূপ জমে জট তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ জুন) বন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হলেও অবস্থার তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, ঈদের ছুটিতে জাহাজ থেকে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার কনটেইনার খালাস হয়েছে। অথচ এ সময় দৈনিক মাত্র ৩০০-৩৫০টি কন্টেইনার বন্দর থেকে বের হয়েছে। এ অবস্থায় বন্দরে কনটেইনার জট নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ডেলিভারিতে গতি আনতে কনটেইনারর প্রতি মাশুল আরোপের চিন্তা-ভাবনা করছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বাচ্চু জাগো নিউজকে বলেন, বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। শুধুমাত্র বন্দর সচল থাকলে পণ্য খালাস কিংবা ডেলিভারি সম্ভব নয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস থেকে শুরু করে পণ্যবাহী যান চলাচলও স্বাভাবিক থাকতে হয়। বন্দরে আমাদের কনটেইনার ভর্তি পণ্য রয়েছে, কিন্তু সড়কে পণ্যবাহী যানচলাচল না করায় ইচ্ছে থাকলেও ডেলিভারি নেয়া সম্ভব নয়।

অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দর বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কনটেইনার জটের প্রভাবে বন্দরে জাহাজ অবস্থানের সময় বেড়ে গেছে। ভেতরের জাহাজগুলো বের না হওয়ায় বাইরের জাহাজ আসতে পারছে না।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বন্দরের প্রধান জেটিতে ১৬টি এবং বহির্নোঙরে ৭১টি জাহাজ অবস্থান করছে। এর মধ্যে খাদ্যশস্য বহনকারী ৭টি, সার বহনকারী একটি, সিমেন্ট ক্লিংকার বহনকারী ২৩টি, চিনি বহনকারী ২টি, অয়েল ট্যাংকারবাহী ৬টি জাহাজ রয়েছে। বাকিগুলো সাধারণ পণ্যবোঝাই জাহাজ।