চকরিয়া সংবাদদাতা:
চকরিয়ায় এসিল্যান্ড কর্তৃক সাংবাদিক নাজেহালের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রেসক্লাব সভাপতি আবদুল মজিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরসহ গ্রেফতারী জারি এবং পুলিশ দিয়ে হয়রাণীর অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে প্রেসক্লাবের সভায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপনসহ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও এসিল্যান্ডকে অপসারণের জোর দাবী জানানো হয়েছে।
প্রেসক্লাবের সাবেক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিএম হাবিব উল্লাহ সম্প্রতি একটি ফলোআপ নিউজের বক্তব্য নিতে গেলে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত তাকে ‘বালের সাংবাদিক’ বলে আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করেন। এঘটনায় প্রেসক্লাবে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্টিত হয়। ওই সভায় সাংবাদিক নাজেহালকারী এসিল্যান্ডের অপসারণসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যায় বিচার চাওয়া হয় এবং বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইনে সংবাদ প্রচারিত হয়। ওই ঘটনার সমাধানকল্পে মুঠোফোনে এসিল্যান্ড থেকে বক্তব্য চাওয়া হলে তিনি রেগে গিয়ে উল্টো সাংবাদিকদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজাসহ মামলা দিয়ে হয়রানীর হুমকি দেন। এনিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, সচিব, বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রাম ও জেলা প্রশাসক কক্সবাজারসহ বিভিন্ন দপ্তরে বরাবরে লিখিত অভিযোগ ও অনুলিপি প্রদান করেন ভূক্তভোগি সাংবাদিক বিএম হাবিব উল্লাহ। এদিকে প্রতিবাদসহ সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ পুলিশের হাতে ধৃত ফাসিয়াখালীর জালাল উদ্দিন নামের জৈনক চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীর ১ বছরের অধিক সময়ের কথিত একটি মামলায় প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুল মজিদসহ অপরাপর নিরপরাধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মনগড়া ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন দিয়েছেন। এমনকি ইয়াবা ব্যবসায়ী জালালের কথিত মামলার বিপক্ষে এবং তার বিরুদ্ধে প্রচারিত বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের স্বপক্ষে যাবতীয় ডকুমেন্ট ও স্বাক্ষী প্রমাণসহ সরাসরি উপস্থিত হয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসিল্যান্ডের কাছে উপস্থাপন করার পরও তিনি বিবাদী পক্ষের কোন ডকুমেন্টই বিজ্ঞ আদালতে স্বপ্রণোদিতভাবে উপস্থাপন করেনি।
জানাগেছে, সর্বশেষ গত ২ জুন মিথ্যা প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হালে এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার নানা অনিয়ম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সাংবাদিক মহলসহ সর্বত্রে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এনিয়ে ৩জুন রাত ৯টায় চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে ইউএনও, এসিল্যান্ড, থানার অফিসার ইনচার্জ ও প্রেসক্লাব সভাপতি’র উপস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে সকল ভুলবুঝাবুঝির অবশান হয় এবং সৃষ্ট সমস্যার অবশান হয়েছে মর্মে প্রেসক্লাব সভাপতির ফেসবুক টাইম লাইনে ইউএনও-ওসি নিজ হাতে মোবাইল নিয়েই স্ট্যাটাস দেন। এমনকি বিজ্ঞ আদালতে ইয়াবা ব্যবসায়ী জালালের পক্ষে দেয়া মিথ্যা প্রতিবেদন ও ওই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিকল্পে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন বলেও তাৎক্ষনিকভাবে ঘোষণা দেন। কিন্তু একদিন পর ৩জুন বিকেলে সমাধানকৃত বিষয়কে নতুন করে তুলে এনে এসিল্যান্ড খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত বাদী হয়ে রহস্যজনকভাবে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সিআর মামলা (নং ৬১১/১৯, ধারা ১৮৬/১৮৯/৩৫৩/৫০০) দায়ের করেন। এতে বিবাদী করা হয়েছে; প্রেসক্লাব সভাপতি আবদুল মজিদকে। আদালত অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। এছাড়াও প্রতিবেদন দেওয়া ইয়াবা ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিনকে দিয়েও হুমকি দেয়া হচ্ছে মর্মে আদালতে আরো একটি কথিত অভিযোগ দেন।
এদিকে প্রেসক্লাবের সভাপতিকে কোন ধরণের আইনী আশ্রয় গ্রহন করতে না দিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে এসিল্যান্ড নিজ ইচ্ছেমত ব্যবহার করে তার বাড়িসহ আত্বীয় স্বজন ও সাংবাদিকদের বাসা বাড়িতে একেরপর অভিযান ও তল্লাসী চালিয়ে ভীতিকর ও আতংকিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চলছে বলে অভিযোগ করেছেন আবদুল মজিদ। এমনকি তার পরিবারকে ঈদুল ফিতরের নূন্যতম উৎসবটুকুও করতে দেয়া হয়নি। ফলে বর্তমানে প্রেসক্লাবের সভাপতি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন বলে দাবী করেন তার পরিবার।
এসিল্যান্ড ও তার সহযোগি পুলিশের ঘৃণিত এহেন কর্মকান্ড নিয়ে গত ৭ জুন বিকাল ৪টায় প্রেসক্লাবে এক জরুরী প্রতিবাদ সভা অনুষ্টিত হয়েছে। সভা শেষে নেতৃবৃন্দ চকরিয়া-পেকুয়া আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম এমএ’র সাথে তাহার বাসভবনে স্বাক্ষাৎ করতে যান এবং এসিল্যান্ড ও ইয়াবা ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন কর্তৃক মিথ্যা মামলা ও সাম্প্রতিক কর্মকান্ডের বিষয়টি অবহিত করেন। এসময় তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করবেন বলে জানান। সব ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ভূক্তভোগি চকরিয়া প্রেসক্লাব সভাপতি আবদুল মজিদ বলেন, আমি শতভাগ নির্দোষ। হেনস্থাকৃত সংবাদকর্মীর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে কুচক্রি মহলের ইন্ধনে মিথ্যা মামলায় হয়রানীর শিকার। তাই উর্ধতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তসহ দেশের সবপর্যায়ের সাংবাদিক ভাইদের সহযোগিতা কামনা করছি।