আব্দুর রহমান হাশেমীঃ

ইসলাম শুধুমাত্র গতানুগতিক কোন ধর্ম নয়। ইসলাম পরিপুর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম।
ড. বিল্লাল ফিলিপ্স এর ভাষায়- Islam is The Way of Life জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণী নির্বিশেষে সকলের অধিকার নিশ্চিত ও সুরক্ষা নীতির যথাযথ নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম।

অাজকের বিষয় ‘শিশু সুরক্ষা।’ আজকের শিশুরা আগামির বিশ্ব বিনির্মাণের মূল কান্ডারি।

তাই সুরক্ষিত ও যথাযথ অধিকারপ্রাপ্ত সুস্হ্য ও উন্নত গুনাবলি সম্পন্ন শিশুই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পদ।

ভাল শিশু গঠনে সর্বপ্রথম যে উদ্যোগ নিতে হবে তা হলো উন্নত গুনাবলি সম্পন্ন মা নির্বাচনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া।

শিশু সুরক্ষা’র অন্যতম ধাপ হলো- শিশু মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে মায়ের যথাযথ পরিচর্যা ও খাবার প্রদানে কার্পন্য না করা।
আর মাতৃগর্ভে শিশু সুরক্ষা বিষয়ে ইসলাম জোর নির্দেশনা দিয়েছে।

পবিত্র কুরআন জাহেলিয়া যুগের শিশু হত্যাকে সম্পূর্ণভাবে রহিত করা হয়েছ।
কুরআন বলছে- তোমরা কোন প্রাণকে হত্যা করোনা, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন। (সুরা বনী ইসরাইলঃ৩৩)

শিশু সুরক্ষা ও অধিকারে ইসলামের নীতি হচ্ছে জন্মের পরে কানে আযান দেয়া।
‘যখন হযরত ফাতিমা (রাঃ) হযরত হাসান (রাঃ) কে প্রসব করলেন তখন রাসুল (সঃ) তাঁর কানে আযান দেন।’ (অাবু দাউদ, তিরমিযি)

নবজাতক শিশুকে মায়ের শাল দুধ খেতে দিতে হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ভাষায় মায়ের শাল দুধ শিশুর সকল রোগের প্রতিষেধক।
ইরশাদ হয়েছে-আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদের কে পূর্ণ ২ বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়ার পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে হয়। (সুরা বাকারাঃ ২৩৩)

ইসলামে শিশুর সুন্দর নাম রাখার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

রাসুল (সঃ) শিশুদের সুন্দর নাম রাখার ব্যাপারে পিতা-মাতার প্রতি আহবান করেছেন।

রাসুল (সঃ) বলেন, কেয়ামতের দিন তোমাদের নাম ধরে ডাকা হবে। তাই তোমরা সন্তানদের ভাল নাম রাখো। (অাবু দাউদ)
শিশু সুরক্ষার অন্যতম ধাপ হলো শিশুকে সুশিক্ষিত করা।

রাসুল (সঃ) বলেন, শিশু বয়সে ইলম শিক্ষা করা পাথরের উপর অংকনের মত স্থায়ী। আর বৃদ্ধ বয়সে ইলম শিক্ষা করা পানির উপর দাগ টানার মত অস্থায়ী। (বায়হাকি)

শিশু শিক্ষার ব্যাপারে রাসুল (স.) অারো বলেন, মাতা-পিতা সন্তানের জন্যে যা রেখে যায় বা উপহার দেয় তার মধ্যে সর্বোত্তম উপহার হল শিক্ষা। (তিরমিযি)
আর রাসুল (সঃ) শিশুদের স্নেহ করার ব্যাপারে কঠোর কথা বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করেনা এবং বড়দের সম্মান করেনা তারা আমার দলভুক্ত নয়। (অাবু দাউদঃ ৪৯৪৩)

শিশু সুরক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো শিশু হত্যা রোধ করা। কুরআন বলছে- তোমরা নিজেদের হত্যা করোনা। (সুরা নিসাঃ২৯)

অন্যত্র বলছে- ‘দরিদ্র্যতার কারণে তোমরা সন্তানদের হত্যা করোনা।’ (সুরা অানআমঃ১৫১)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোন মানুষকে হত্যা করল সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকে হত্যা করল।’ (সুরা মায়িদাঃ৩২)

মানুষ পৃথিবীতে অাল্লাহর প্রতিনিধি। কুরআনে বলা হয়েছে, আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি সৃষ্টি করব (সুরা বাকারাঃ৩০)

আর মানুষকে নিজেদের পরিবার-পরিজনের সুরক্ষার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের পরিবার-পরিজনদের রক্ষা কর অগ্নি হতে যার ইন্ধন হবে মানুষ আর পাথর।’ (সুরা তাহরীমঃ ৬)
শিশু শ্রমঃ শিশু সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে শিশুশ্রম নির্মূল করা।

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্যে ইসলামে শিশু শ্রম পরিত্যাজ্য।
আজকের শিশুর মধ্যে লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের সুন্দর পৃথিবী।
মহান আল্লাহ-তায়ালা বলেন, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা (সুরা কাহাফঃ৪৬)

পরিশেষে বলা যায়, ইসলাম শিশুর অধিকার নিশ্চিত করে পূর্ণ মাত্রায় সুরক্ষা প্রদানে নির্দেশনা দিয়েছেন।

আব্দুর রহমান হাশেমী
(কামিল হাদিস, মাষ্টার্স সমাজবিজ্ঞান)