মানুষের মনে প্রানে উৎসবমুখরতা ছড়িয়ে দিয়েছে ঈদ। সকলে ব্যস্ত এখন ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়ে। মুসলিমদের এই উৎসব এখন সবার। ঈদ উপলক্ষে আমরা দুজন উদীয়মান তরুণের সাথে কথা বলেছি। ঈদের এখন তখন বিষয়টি নিয়ে।দিন বদলে যাচ্ছে। বদলাচ্ছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও। তানভিরুল মিরাজ রিপন। বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার তার ঝুলিতে আছে। আর দশজন সাদাসিধা তরুণের মতো করে নয়,তিনি বেড়ে উঠেছেন নিজের পরিচর্যায়।তিনি এখন পুরোদমে সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন।করেন টকশো উপস্থাপনা। সাংবাদিকতায় অনার্স পড়ছেন পোর্টসিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। রিয়াদ। তিনিও পড়ছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে। কাজ করছেন ঐতিহ্য ও চাহিদা ভিত্তিক ফ্যাশন নিয়ে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শুভজিৎ প্রসুন

প্রশ্ন : ঈদের প্রস্তুতি কেমন চলছে?
রিপন : বড় হওয়ার পর তো ঈদ আনন্দ এতো থাকে না। আর শহরমুখি হওয়ার পর থেকে আরো পানসে হয়ে দাড়ালো।

রিয়াদ: প্রস্তুতি বলতে ঐ ম্যান্ডাটরি কাপড়চোপড় কেনা। একটু একটু আনন্দ এখনো রয়ে গেছে। আমরা নিজের গ্রামে থাকি। সুতরাং একটু ভিন্ন স্বাদ আছে।

প্রশ্ন: ঈদের দিন কি কি করেন?

রিপন: আমার ছোটোবেলায় বাবা মারা যাওয়াতে, আমি প্রতিবছর একটু বেশি বাবাকে মিস করি। আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা ঈদের পরদিন গ্রামে গেলেও আমি গ্রামে যাই না। ঈদের দিন ভোরে মা ডেকে দেন। রেডী হয়ে ঈদের নামাজে চলে যাই ওখান থেকে এসে আগে আত্মীয়স্বজনদের ঘরে যেতাম।কিন্তু আমার ঈদ বিকাল ৩ঃ৩০ পর্যন্ত এর বাইরে আমার ছোটো বেলা থেকে আজও পর্যন্ত ঈদটাকে পানসে লাগে। নতুন জামা ছেড়ে ঘুম দিই। এখন তো আত্মীয় স্বজনরা দূরে দূরে এক প্রকার, তাই নামাজ পড়ে ভাই বোনদের সাথে কথা বলি। বন্ধু বান্ধবদের সাথে কথা বলি।এরপর প্রিয় আসে, তার সাথে তার বাড়ি যাই৷ এভাবে কেঁটে যায়।

রিয়াদ: একদমই গ্রামের ঈদ যেমন হয় এর একটুও ভিন্নতা আমি এখনো উপভোগ করিনি। শহরের চেয়ে ঈদটা সবাই গ্রামে কাঁটায়। সুতরাং গ্রামেরই ঈদ, আর থাকিও গ্রামে আলাদা একটা আনন্দের ব্যাপার স্যাপার। নামাজ পড়ে। মাকে সালাম করার পর আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করা৷ বাবা প্রবাসী,বাবার সাথে কথা বলার পর। বন্ধু বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ করি। কেঁটে যায়৷

প্রশ্ন: ঈদের দিন কোন পোশাকে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন?

রিয়াদ: অবশ্যই পাঞ্জাবিতো খুবই স্পেশাল ঈদের দিনের জন্য। সুতরাং অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার আমার ঈদটা একটু স্পেশাল, নিজেরই ডিজাইনে পাঞ্জাবি বানিয়েছি। পাঞ্জাবি,শার্ট৷

রিপন: আমি ছোটো বেলায় পাঞ্জাবি পছন্দ করতাম না। একদমই নিজের অনুকূলে আনতে চাইতাম না। আমার আজও ঈদের কেনা কাঁটা করার অভ্যাস নাই,অভিজ্ঞতাও নাই। এখনো বড় ভাই যা পছন্দ করে কিনে আনেন৷ ক্লাস এইটে থাকতে বোধহয় খুব বকাবকি করে একটা পাঞ্জাবি পড়াতে পেরে ছিলেন৷ এখন পাঞ্জাবিতে খুব সাচ্ছন্দ্য। ফরমাল বললেও, অকেশনাল পোশাক বললে আমি পাঞ্জাবি বেছে নিই। এরপর এই ঈদে শার্টও পড়া হবে।

প্রশ্নঃ রিয়াদ আপনি তো ফ্যাশন ডিজাইনে পড়ছেন,কাজও করছেন। তো কাপড়, এবং পোশাকের রুচিতে মানুষের চাহিদা এখন কেমন বিবর্তন হয়েছে?

রিয়াদ: আমি কাজ করছি বিশেষভাবে একটা থিম নিয়ে “ New with Old Trend and Abstraction “। কাপড় তো আধুনিক সভ্যতার অন্যতম আবিষ্কার । আমার তো মনেহয়, কাপড় পড়ি বলে আমরা সভ্য। দিনের, বিশ্বায়নের উৎকর্ষতা যত বাড়ছে, চাহিদা ও রুচির বিবর্তন হচ্ছে। আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির ফ্যাশন ও ডিজাইনকে যতটা উন্নত করার জন্য ইনভেস্ট ও সরকারি সহযোগিতা থাকার কথা তা অনেকাংশে কম। সুতরাং আমাদের বাজারটা দখল করেছে অন্য সংস্কৃতির পোশাক আশাক গুলো। রিপন একটা কথা বলে, আমাদের একটা পরিচয় আমরা মানুষ,কিন্তু আমরা বাঙালীও। সুতরাং আমার দৃষ্টিকোণ থেকে মনেহয়কি আমাদের এক যোগে কাজ করতে হবে। একটা বিশাল ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে। এটা সমাধান করতে হবে।

প্রশ্ন: রিপন মিডিয়ার কারনে তো সংস্কৃতির আদান-প্রদান হয়?

হ্যাঁ হয়। আমি যতটা আন্তর্জাতিক সেমিনার, কনফারেন্স, কিংবা কান্ট্রি ডেলিগেশন, রিপ্রেজেন্ট করার সুযোগ পেয়েছি আমি সবসময় বেছে নিয়েছি পাঞ্জাবি। ফ্যাশন সবাই এক সাথে একই রকমভাবে নিতে পারে এমনটা না। ফ্যাশন একেক জনের দৃষ্টিতে একেক রকম। কিন্তু ঈদে তো কাবলি পাঞ্জাবির যে ছড়াছড়ি, আর কাবলি পাঞ্জাবির সাথে একটা আফগানি টুপি পরেন। এগুলোকে আমি সহজভাবে নিতে পারি না।কিন্তু অনেকে নিচ্ছে।পোশাকের ডিজাইনের মধ্যেও একটা সংস্কৃতি গ্রাস করার যুদ্ধ আছে। ভুল কিছু ছাড়ানোরও উদ্দেশ্য থাকে৷ আফ্রিকাকে আমাদের দৃষ্টিতে প্রায় সবার চোখে একটা হাস্যকর কিংবা পিছিয়ে পড়া একটা মহাদেশ মনেকরি। এই মহাদেশের অনেক দেশ এখনো পিছিয়ে। কিন্তু তারা যখন নিজেদের দেশকে, কিংবা নিজেকে উপস্থাপন করতে আসে তখন তারা নিজেদের সংস্কৃতিকে প্রমোট করে। এটা আমাদের দেশে নাই। আমি খুবই অদ্ভুদ হয়,এখানে বিয়েও হয় রাজস্থানি আদলে। এগুলো মিডিয়া ইউজের কারনে,মিডিয়ার বিজ্ঞাপনকে আপনি কিভাবে নিচ্ছেন সেখান থেকে বিবেচনা করতে হবে।পাখি,কিরণমালা পোশাকের কারনে অনেকের সংসার ভাংলো,অনেকে আত্মহত্যা করলো এগুলো এগুলো মিডিয়ার কুপ্রভাব না।মিডিয়া আপনাকে তেমন জিনিসই খাওয়াবে যে জিনিস আপনি খেতে চান। কিন্তু কিভাবে খাবেন সেটা সম্পূর্ণ আপনার বিষয়। আমার বন্ধু এই দেশে ঘাটতির কথা বললো, আমি ঘাটতির সাথে আরেকটা বিষয় যোগ করবো এখানে ফ্যাশন সচেতনতা অনেকাংশেই শূন্য। শূন্য কেনো বলছি, এখানে তাতীদের জন্য কোনো সুবিধা নাই। তাদের জন্য এতো আদর দরদ কারোরই নাই। বিবি রাসেল আপার সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় আপা খুব চিন্তিত হয়ে বলেছিলো “ তাতীরা আমাকে বলে,আপা তুমি মারা গেলে আমাদের হবে কি? আমাদের ভাত কাপড় যোগানোর ব্যবস্থাতো সরকার করছে না। ” আসলেই কথাটা সত্য। আপা আরো একটা কথা বলেছিলো “ বিবি প্রোডাকশনের এই বিশ বছরে একটা থেকে দুটা শাখা করতে পারলাম না।অথচ অন্যরা কি ফ্যাশনের নতুনত্ব এনেছে আমি দেখতে পাই না,তারা সুতা, রং,এগুলো নিয়েও ভাবছেনা,গবেষনা করছে না। কিন্তু তারাও এভাবে মুখে তুলে দিচ্ছে রেডিমেড ফ্যাশনকে।” আসলে ফ্যাশনেরও একটা বাজার কেন্দ্রীক রাজনীতি আছে,যেটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম উপাদান। আর অনেকের বোরকাতে এলার্জি, কিন্তু ইউরোপীয় পোশাকে এলার্জি না। এগুলোও ভাববার বিষয়।

প্রশ্ন: ঈদের সব থেকে স্পেশাল কি বিষয়টা ?

রিপন: মাকে সালাম করা। প্রিয়র সাথে ঘুরাঘুরি করা। ছোটোবেলায় মানুষের সাথে আমি ঘুরতে জানতাম না, নাকি আমাকে নিয়ে ঘুরতে পছন্দ করতো না আমি জানি না।

রিয়াদ: বাবাকে নিয়ে ঈদ করেছি কুব সম্ভববত চারবার। বাবা থাকলে ঈদ স্পেশাল হয়। দেশের বাইরে থাকেন। মা, রবিন,রাসিফ নিয়ে ঈদ তো চলছে।পরিবারের সাথে ঈদ আনন্দের। আর বন্ধুর ফোন অবশ্যই স্পেশাল।আমরা তো ভিন্ন শহরের মানুষ। কিন্তু একই মনের।

প্রশ্ন: বন্ধু কি খুবই স্পেশাল?

রিয়াদ: আচ্ছা তুই কি খুব স্পেশাল? প্রসুন বললে কি বিশ্বাস করতে হবে?

রিপন: প্রসুনের তো রিয়াদের মতো বন্ধু নাই।না হলে সে এই প্রশ্নতো একবারও করতো না। হাহাহা…

প্রসুন: ধন্যবাদ আপনাদের দুই বন্ধুকে।

ধন্যবাদ রিপন রিয়াদের তরফ থেকেও। কক্সবাজার নিউজের জন্য শুভকামনা। তরুণ,অরুণ সকলের বিশ্বাস অর্জন করুক।